আজ যে কোন দেশের অর্থনীতির সুসময় দুঃসময় দুইই বিশ্ব অথনীতির গতি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এক জায়গায় মেঘ ঘনালেই আর এক জায়গায় ছায়া পড়ে। ২০০৮ সালের মার্কিন মন্দা যা মূলত সিকিউরিটি ছাড়া বাড়ী তৈরীর ঢালাও টাকা দেওয়ার পর ব্যাঙ্কগুলো তাদের ঋণ অন্য ব্যাঙ্ককে বেচে দিতে থাকে। বারবার হাত পালটানোর ফলে মূল দেনদারও কোনকিছু বন্ধক না থাকার ফলে ঝাড়া হাত পা হয়ে সম্পত্তি বেচে বুচে সরে পড়ে। গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাই টালমাটাল
হয়ে যায়। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকেই অর্থনীতি বাচাতে মাঠে নামতে হয়। এই সঙ্কট রাতারাতি তৈরী হয় না। অর্থনীতিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন ব্যর্থনীতি পরিচালনারই ফল। অর্থনীতির ইতিহাসে এটিই কুখ্যাত সাবপ্রাইম ক্রাইসিস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কালে এর থেকে বেরিয়ে আসে। অর্থনীতিতে এই জোয়ার ভাটা আবশ্যিক শর্ত। এই মন্দার প্রভাব ভারতেও পড়েছিল।শেয়ার বাজার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।আবার তা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে চাঙ্গাও হয়ে ওঠে। ভারতে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের টাকা ২০০৪ থেকে ২০১৪ যে ভাবে ব্যক্তি স্বার্থে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই বিষবৃক্ষেই এখন ফুল ধরেছে। ঠগবাজ ও রাজনীতিকের জোট ভাঙতে সরকার আই বি সি আইন এনে এনপিএ নিয়মে কড়াকড়ি করতেই ব্যাঙ্কের নিয়মবহিভূত লোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে অন্তরবর্তী সঙ্কোচন চলছে। ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার অসাধু ব্যবহার রুখতে এর প্রয়োজন ছিল।
সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে।গতকালই সত্তর হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বারবার গাড়ি শিল্পে মন্দার প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। গাড়ি শিল্পে চাহিদার ওঠা পড়া বরাবর আছে। এবারে চাহিদার রেকর্ড ঘাটতি হওয়ার মূলে কয়েকটি বিশেষ কারণ হলো, এক সরকারের কিছু দিন ধরে ইলেক্ট্রিক গাড়ি চালু করার প্রসঙ্গ। দুই বিভিন্ন রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন খরচ অত্যধিক বাড়িয়ে দেওয়া। তিন নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে ভারত স্টেজ ফাইভ লাগু করা। দেশহিতে নেওয়া সরকারের সব সিদ্ধান্তই সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। অর্থনীতিতে তার প্রতিক্রিয়া সাপেক্ষে তার পরিমার্জন হতে পারে। অর্থমন্ত্রী স্টেজ ফাইভ সংক্রান্ত আদেশ প্রত্যাহার করেছেন। বৈদ্যুতিন গাড়ি নিয়ে ক্রেতার দোলাচল অর্থে ফুয়েলগাড়ি যদি নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া যা ছিল বিক্রি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ সেই আশঙ্কা দূর করেছেন।
ব্যাংক ছাড়াও এলআইসি বা জিআইসি অন্যান্য এই ধরণের বহু সংস্থা যারাও ঋণ দিয়ে থাকে অর্থে এনবিএফসি তাদের ফান্ড বাড়াতে ব্যাংক থেকে বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের এখানে একটা বিচিত্র জিনিস দেখা যায় অর্থনীতির প্যারামিটারগুলি ভালো থাকলে যখন শেয়ার বাজারের সূচক চড়া থাকে তখন বলা হয়, ও কিছু নয় সেনসেক্স তো মাত্র ত্রিশটা শেয়ার ধরে হয়। কিন্তু সেনসেক্স নেমে গেলে দেশ রসাতলে গেল বলে রব ওঠে।
আর একটা বিষয় সিএসআর, কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি অর্থে বড়ো বড়ো সংস্থাগুলো কিছু সামাজিক খাতে তাদের টাকা খরচ করবে।অন্যথায় জেল পর্য্যন্ত হতে পারে।এই প্রস্তাবটি শিল্পোদ্যোক্তাদের ভালো লাগেনি । সরকার ক্রিমিনাল অফেন্সের ধারাটি তুলে নিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্টে সারচার্জ বসায় বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছিল, সরকার এটিও প্রত্যাহার করেছে। অর্থনীতির পরিচালনা বাজার নির্ভর। কোনো নিরালম্ব বায়ুভূত কোনো প্রক্রিয়া নয়। একটি সংবেদনশীল সজাগ জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠিত আছে, অযথা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সোরগোল তোলার কিছু নেই। শিল্পে সানরাইজ ইন্ডাস্ট্রি আছে কালক্রমে তাই আবার সানসেট হয়ে যেতে পারে। কেউ ভাবেনি ল্যান্ডলাইন টেলিফোন বিলুপ্তির পথে। ভিডিও প্লেয়ার তৈরি হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসছে। মনুষ্য শরীরের মতো অর্থনীতিরও রোগ বালাই আছে। তা থেকে উত্তরণের জন্য অনেক নিবেদিত মানুষ কাজ করছে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা বৃথা যাবে।
১৩০ কোটির দেশের ৫০ কোটি মানুষ নিঃশঙ্ক চিত্তে একটি দায়বদ্ধ সরকারকে এনেছে। আপনি অযথা মন খারাপ বা হাহুতাশ করবেন না। নজর রাখুন আপনার দেশব্যাপী জেলবন্দি সুহৃদদের থেকে জনগণের কত টাকা ফেরে, সেটা দেশের কাজে লাগবে। জানবেন এ সরকার কিন্তু ভাই বোন ছেলেপুলের মঙ্গলার্থে নয় কেবল দেশকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ।
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়