Nabanna-Central: নিজস্ব পদ্ধতিতে রাজ্যে শিক্ষার মান যাচাই করতে চায় কেন্দ্র, আপত্তি নেই নবান্নের

নির্দিষ্ট সময় অন্তর পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশের শিক্ষামান পরীক্ষা করে শিক্ষা-মানদণ্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থান নির্দেশের জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে নানা সংস্থা ও ব্যবস্থা আছে। তার পাশাপাশি কেন্দ্র এ বার বঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণমানের মূল্যায়ন করতে চাইছে একেবারে নিজস্ব পদ্ধতিতে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, জাতীয় শিক্ষানীতি-সহ শিক্ষা সংক্রান্ত নানা ব্যাপারে কেন্দ্রের বিরোধিতায় রাজ্য সরকার মুখর হলেও এই মূল্যায়নের ব্যাপারে তাদের কোনও আপত্তি নেই বলেই খবর!

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা এবং খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের অধীনে বুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল ও কলেজগুলির পঠনপাঠনের মান উন্নত করতে চায়। অতীতে কেন্দ্রের ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে নানা ওজর-আপত্তি তুললেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পাঠানো সংশ্লিষ্ট বার্তাকে সম্প্রতি গ্রহণ করেছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল। নবান্ন সূত্রের দাবি, সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানান, একশো দিনের কাজ, আবাস ও সড়ক যোজনা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপড়েন চলছে। তবে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। তাই কেন্দ্রের তরফে সম্ভাব্য কোনও অর্থই এখন হাতছাড়া করতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। ফলে প্রতিটি দফতরকে কেন্দ্রীয় অর্থ জোগাড়ের পথ খোঁজার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

বিআইএসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যে ৩৫টি সরকারি এবং ৪৬৫টি সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত মিলিয়ে মোট ৫০০টি স্কুলে ‘স্ট্যান্ডার্ডস ক্লাব’ গঠন করা হবে। উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থীদের গুণমান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সর্বোপরি বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মানোন্নয়ন ঘটানো। নবম তার থেকে উঁচু কোনও শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা হবে এই উদ্যোগের অংশগ্রহণকারী এবং এক জন বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষক বা অধ্যাপক মেন্টর হিসেবে থাকবেন। স্ট্যান্ডার্ডস ক্লাব গড়া হলে দুই কিস্তিতে বছরে মোট ১০ হাজার টাকা মিলবে বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য।

বছরে প্রতিটি ক্লাব তিনটি কর্মসূচি পালন করতে পারবে। বিআইএসের অনুমোদন পেলে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষক দিবস, প্রদর্শনী, কর্মশালা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান করা যাবে। কর্মসূচি গ্রহণের ১৫ দিন আগে তার সবিস্তার বিবরণ জানাতে হবে বিআইএসের শাখা অফিসে এবং কর্মসূচির সাত দিনের মধ্যে কনজ়িউমার এনগেজমেন্ট পোর্টালে ছবি, ভিডিয়ো-সহ তা আপলোড করতে হবে। গোটা বছরে কোনও কর্মসূচি পালন না-করলে বাতিল হয়ে যাবে ক্লাব। সারা বছরের কর্মসূচির নিরিখে তিনটি সেরা স্ট্যান্ডার্ডস ক্লাবকে পুরস্কৃত করা হবে। মানোন্নয়নে কার্যত একই নীতি অনুসরণ করা হবে কলেজগুলির ক্ষেত্রেও। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, মেন্টর হিসেবে অধ্যাপকদেরও নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয় নির্বাচন হবে কী ভাবে? সেই বিষয়ের সঙ্গে রাজ্যের নীতি ও অবস্থানের কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হলে কী ভাবে তা সামাল দেওয়া যাবে? এ ক্ষেত্রে কি কোনও আর্থিক সুবিধা পাবে রাজ্য?

শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “সব কিছুরই বিরোধিতা করতে হবে, এমনও নয়। কেন্দ্রের সহযোগিতায় সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্পও আমরা একসঙ্গে করছি। স্ট্যান্ডার্ডস ক্লাব গঠন করলে পড়ুয়াদের শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে এতে পড়ুয়ারা কতটা উপকৃত হবে, কী ভাবে এই প্রকল্প চলবে, সেখানে কিছু আপত্তিকর বিষয় থাকবে কি না, এই প্রকল্প চালু হলে তা বোঝা যাবে।”

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কার্যত সংঘাত তৈরি হয়েছিল। স্কুলশিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়, এই যুক্তিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নতুন নয়। ওই প্রকল্পে কেন্দ্র ৬০% খরচ বহন করে এবং রাজ্য দেয় ৪০%। চাল পুরোটাই দেয় কেন্দ্র। রাজ্য চায়, বরাদ্দ বাড়ানো হোক।

প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের আয়ে বড়সড় কোনও পরিবর্তন না-হলেও ব্যয় বেড়েছে অনেকটাই। ফলে দৈনন্দিন খরচ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মীদের বেতন-পেনশন, ধার শোধ, চালু প্রকল্পের বহর সামলে অতিরিক্ত খরচ জোগাড় করতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যকে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা রাজ্যের পক্ষে সমস্যার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.