মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নয়, খুব ছোট এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলেই গত কাল অমরনাথের পথে বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর। সেই বিপর্যয়ের জেরে এখনও নিখোঁজ অন্তত ৪০ জন তীর্থযাত্রী। গত কাল থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। ঘটনাস্থল থেকে ১৫ হাজার তীর্থযাত্রীকে সরানো হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারের জন্য বড় মাপের অভিযানে নেমেছে সেনা। শান্তির সময়ে হওয়া অভিযানের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সেনা কর্তারা।
অমরনাথের বিপর্যয় নিয়ে সরকারের তরফে সব তথ্য দেশবাসীকে জানানো উচিত বলে আজ মন্তব্য করেছেন বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিন্হা। তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা।
গত কাল বিকেলে অমরনাথ গুহার আশেপাশে প্রবল বৃষ্টির পরে গুহার সামনের শিবির ভাসিয়ে হড়পা বান আছড়ে পড়ে বালতালের বেস ক্যাম্পেও। মেঘ ভেঙে বৃষ্টির ফলেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রথমে জানিয়েছিলেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা। পরে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীর আবহাওয়া দফতরের সোনম লোটাস জানান, সম্ভবত খুব ছোট এলাকায় প্রবল বৃষ্টির ফলেই এমন বিপর্যয় ঘটেছে। আজ ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের তরফেও জানানো হয়েছে, অমরনাথে মেঘ ভেঙে বৃষ্টি না-ও হয়ে থাকতে পারে। কারণ, মেঘ ভেঙে বৃষ্টির ক্ষেত্রে অনেক বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা।
গত কাল দুর্ঘটনার পরেই উদ্ধারকাজে নামে সেনা-সহ নানা বাহিনী। উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন সেনার চিনার কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এডিএস আউজলা, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আইজি বিজয় কুমার ও কাশ্মীরের ডিভিশনাল কমিশনার। বিজয় কুমার জানান, বালতাল থেকে উদ্ধার করা অধিকাংশ তীর্থযাত্রীকে পঞ্চতরণী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডিজি অতুল কারওয়ালের মতে, ধস না নামলেও বৃষ্টি পড়ছে। তবে তাতে উদ্ধারকার্য ব্যাহত হয়নি। এখনও অনেকেই শিবিরের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা বাহিনীর। নিখোঁজদের সন্ধানে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক উপকরণ ও স্নিফার ডগ। সিআরপি-র ডিজি কুলদীপ সিংহের কথায়, ‘‘গুরুতর আহতদের আকাশপথে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে হাজির সকলের খোঁজ পাওয়াই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দু’এক দিনের মধ্যেই ফের যাত্রা শুরু হতে পারে।’’ অমরনাথ বোর্ড কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, চিকিৎসার পরে শনিবারই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫ জন তীর্থযাত্রী। ১৭ জন এখনও হাসপাতালে রয়েছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা। ওই এলাকার জলাশয়গুলির পরিস্থিতি জানতে আকাশপথে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
তবে বিপর্যয়ে চিড় ধরেনি অমরনাথ যাত্রীদের মনোবলে। আজও জম্মুতে হাজির হয়েছেন ৬ হাজার তীর্থযাত্রী। তাঁদের বক্তব্য, যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু তাঁদের মনে কোনও ভয় নেই। ত্রিপুরা থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন অনন্তজিৎ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিবের নাম করে এখানে এসেছি। তাঁর দর্শন করা কেউ আটকাতে পারবে না।’’ এ দিনও জম্মুতে যাত্রার নথিবদ্ধকরণের জন্য তৈরি কাউন্টারে দেখা গিয়েছে ভিড়। বেস ক্যাম্পেও চলছে তৎপরতা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কাশ্মীরের দলগুলির সমর্থন পেতে আজ উপত্যকায় এসেছেন বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিন্হা। কাশ্মীরের দলগুলির এক যৌথ সভায় যশবন্ত বলেন, ‘‘সরকারের উচিত সব তথ্য দেশবাসীকে জানানো। আমরা জানি না ঠিক কত জন মারা গিয়েছেন।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লার দাবি, এ নিয়ে সরকারের তদন্ত করা উচিত। তাঁর মতে, দক্ষিণ হিমালয়ের ওই অঞ্চলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকায় কেন পুণ্যার্থীদের জন্য শিবির তৈরি করা হল তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ফারুকের দাবি, আগে কখনও ওই এলাকায় শিবির তৈরি করা হয়নি।