একটি ‘ক’ নিয়ে আগ্রহ থাকলেও অন্য ‘ক’ যেন গ্রাহ্যের মধ্যেই নেই। অথচ দ্বিতীয় ‘ক’ উদ্বেগজনক জায়গায় যাচ্ছে দিনের পর দিন। গুরুত্বের বিচারে সেটাই প্রথম হওয়া দরকার বলেও মনে করছেন অনেকে।
দেবী কালীর সঙ্গে মদ বা মাংসের সম্পর্ক রয়েছে কি না তা নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ঠিক না বেঠিক, তা নিয়ে আলোচনা চলছে চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক মহলে। আর সেই সময়েই বাংলার করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংক্রমণের হারে দেশে প্রথম কেরলের পরেই বাংলার স্থান। কিন্তু ‘ক’-এ কালী নিয়ে বাংলায় যত আলোচনা ‘ক’-এ করোনা নিয়ে ততটা নয়।
খুশখুশে কাশি, ঘুসঘুসে জ্বর নিয়েই বাঙালি দিনযাপন করছে। গলায় ব্যথা মেটাতে প্যারাসিটামল খেয়ে নিলেও মুখে নেই মাস্ক। স্যানিটাইজারের ব্যবহার তো কবেই কমে গিয়েছে। যাঁরা মাস্ক পরছেন তাঁদের বেশির ভাগেরও আবার থুতনির নীচে নিয়মরক্ষার অবস্থান। তবে ভয় কাটেনি। করোনা নিয়ে আলোচনার সময়ে সেই ভয় প্রকাশও পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও সচেতন নন অধিকাংশই। এখানেই বিপদ দেখছেন চিকিৎসক সৌরভকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন রোজ। সব বয়সের। আমরা প্যারাসিটামল কখনও কখনও অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বলছি। সঙ্গে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার কথাও বলছি। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই পরীক্ষা করাছেন না। ফলে রাজ্যের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে তার বাইরেও অনেক রোগী থাকতেই পারেন।’’
রাজ্যের করোনা সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান, তাতেও দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মঙ্গলবার রাজ্যের রিপোর্টের উল্লেখ অনুয়াযী, নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২,৩৫২ জন। আর বুধবার সেই সংখ্যাটা ২,৮৮৯। রাজ্য সংক্রমণের হারে যে দেশে দ্বিতীয় তা গত মঙ্গলবারই স্পষ্ট হয়। মঙ্গলবার দেওয়া রাজ্য সরকারের কোভিড বুলেটিন অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ১৫.৯৩ শতাংশ। শীর্ষে থাকা কেরলে এই হার ১৬.৮৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের ঠিক পরে আছে মিজোরাম। এই রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণের হার ১৫.২৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত রিপোর্টে দৈনিক সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে ১৮.৭৪ শতাংশ। নব পর্যায়ে অতিমারির এই ধারাবাহিক বৃদ্ধিকে অনেকে চিকিৎসকই ‘অবাধ’ বলছেন। কারণ, অধিকাংশ মানুষই অতিমারি বিধি ভেঙে চলেছেন।
এই পরিস্থিতি হলেও খুব বেশি চিন্তা করে লাভ নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রমণ কমাতে গেলে সব কিছু বন্ধ করে রাখতে হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে। সরকার উদ্যোগী হলেই সব হবে এমন ভাবাও ঠিক নয়। তবে এখন করোনা সংক্রমণ হলেও সেটা সাধারণত মারাত্মক চেহারা নিচ্ছে না। তবে মানুষের জীবনশৈলীর মধ্যে কিছু বদল নিয়ে আসা জরুরি।’’
কালী-বিতর্কে সরব বিজেপি যুব মোর্চার চিকিৎসক রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ অবশ্য রাজ্যের পরিস্থিতি ভাল নয় বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখনই সতর্ক হওয়া দরকার। যে হারে বাড়ছে তাতে পরীক্ষা বাড়াতে হবে। এখন তো আর কিটের অভাব নেই। কিন্তু সেটাকে সহজলভ্য করতে হবে।’’ তবে করোনা বাড়ছে বলে কালী-বিতর্ক থামিয়ে দিতে হবে বলে মানতে নারাজ ইন্দ্রনীল। তিনি বলেন, ‘‘কেউ অন্যায় বললে তার প্রতিবাদ তো করতেই হবে। সেখানেও যেমন সচেতন থাকতে হবে তেমন করোনা নিয়েও।’’