সামাজিক অস্থিরতা তৈরির আসল কারণ এবং স্টারলাইট কারখানা বন্ধ হওয়ার পিছনের শক্তিগুলি

ভারত ২০১৮ সাল পর্যন্ত তামা রপ্তানিকারক দেশ ছিল। ২০১৭-১৮ সালে এর পরিশোধিত তামা পণ্যের রপ্তানি ছিল ৩৭৮৫৫৫টন। কিন্তু এটি ২০১৮-১৯ সালে তা ৪৭৯১৭ টনে নেমে এসেছে। এনসিপি-র মাজিদ মেমনের করা প্রশ্নের উত্তরে, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল রাজ্যসভায় বলেছেন যে মে‚ ২০১৮ থেকে স্টারলাইট কপার স্মেল্টার প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ার কারণে পরিশোধিত তামার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য স্টারলাইট কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ৪ লাখ টন, দেশের মোট তামা উৎপাদনের ৪০%।

আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত জাতিসংঘের কমট্রেড ডাটাবেস অনুসারে, ২০২১ সালে চীনে পাকিস্তানের তামা রপ্তানি ৭৮৭.৯৬ মিলিয়নে মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৭ সালে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল ।

উপরের রেখাটিত্র টি পড়লে দেখা যাবে যে পাকিস্তান থেকে চীনে তামা রপ্তানি অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটেছে।

পাকিস্তানের একাধিক মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে যে চীনে পাকিস্তানের তামা রপ্তানি ৪০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। যা স্থানীয় শিল্পের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।

এই তুলনার মূল উদ্দেশ্য এই নয় যে স্টারলাইট বন্ধ করা চীন বা পাকিস্তানের কাজ ছিল। বরং এটাই দেখানো যে তামিলনাড়ুর একটি শহরে সামাজিক অস্থিরতা কীভাবে এই দুটি দেশকে সুবিধা করে দিয়েছে ।

নিউট্রিনো প্রকল্পটিও একইরকম প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রকল্পটি সম্পর্কে স্থানীয়দের ব্যাখ্যা করার জন্য বারবার প্রচেষ্টা করার পরও তা ব্যর্থ হয়েছে। সালেম চার -লেন হাইওয়ে প্রকল্পেরও একই পরিণতি হয়েছে। সাগরমালার বন্দর-নেতৃত্বাধীন উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েও বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছিল। শুধু যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে তা নয়। কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও একই রকম বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।

এই সব কিছু ঘটনার মধ্যে একটাই মিল আছে। এগুলি হল তথাকথিত প্রতিবাদী নেতার দ্বারা পরিচালিত সমাজকর্মীরা বা তাদের নিজস্ব সংস্থারা বাইরে থেকে নগদ টাকা বা অন্যান্য সাহায্য পায়। এইসব সমাজ কর্মীদের সবসময়ই একটি তথাকথিত শোষিত ও নিপীড়িত জনগনের কণ্ঠস্বর হিসাবে করা হলেও বেশীরভাগ সময় এসবের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকে।

তাহলে এই তথাকথিত সমাজকর্মীরা কারা? তারা এইসব কাজ কেন করে? তারা কোথা থেকে সমর্থন পায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা একটি সংস্হার সাথে অতীতে ঘটা ঘটনার উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখব ।

The Other Media (TOM) হল একটি FCRA-NGO যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর DL 231660085। এটি ১৯৯২ সালে রেভারেস্ট আর্নেস্ট দীনদয়ালান দ্বারা ‘জনগণের সংগঠন এবং আন্দোলনকে সমর্থন করার’ কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে এর মুখ্য কাজ হল “প্রচারণা, সমর্থন ও সহায়তা , যোগাযোগ, গবেষণা প্রশিক্ষণ, এবং বৈজ্ঞানিক সহায়তা প্রদান এবং সামাজিক ও পরিবেশগত অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য সংহতি জোগাড় করা”। এটি ‘কমিউনিটি এনভায়রনমেন্টাল মনিটরিং (সিইএম)’, ভোপালে ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান এবং পেশাগত স্বাস্থ্য অভিযানের মতো অনেক ‘ক্যাম্পেইন’ চালায়। সিইএম-এর অধীনে, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিচালিত হয়। কোডাইকানালে ইউনিলিভারের পারদ দূষণের বিরুদ্ধে তাদের প্রচার কিছুটা প্রশংসনীয় হলেও, TOM-এর বই এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ যথেষ্ট সন্দেহ উদ্রেক করে।

TOM প্রধানত তার নিয়মিত দাতা সংস্থা যেমন ইন্ডিয়াস ডেভেলপমেন্ট, গ্লোবাল গ্রিন গ্রান্টস ফান্ড, দ্য টাকাগি ফান্ড ফর সিটিজেন সায়েন্স, পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক নর্থ আমেরিকা, হেলথ কেয়ার উইদাউট হার্ম ইত্যাদি থেকে তহবিল গ্রহণ করে। তবে, সংগঠনটি নিম্নলিখিত সন্দেহজনক কিছু সংস্হার থেকেও তহবিল পেয়েছে –

২০১২ সালে, TOM ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্রিশ্চিয়ান কমিউনিকেশন, কানাডা থেকে অনুদান হিসাবে ৭১৫৫০ টাক পেয়েছে – একটি সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত ধর্ম, জাতি এবং সংস্কৃতির লোকেদের কাছে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ দেওয়ার প্রচার করার দাবি করে এবং তার আড়ালে তারা বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে ঘুরপথে হস্তক্ষেপ করে। একই সংস্থা ২০১১ সালে ৫৭৬৯৯০ টাকার তহবিল প্রদান করেছিল।

খ্রিস্টান কনফারেন্স অফ এশিয়া নামে বিভিন্ন দেশে ১০০ টিরও বেশি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী একটি মাল্টিন্যাশনাল সংস্থা, যারা ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ নিয়ে কাজ করার দাবি করে তারা ২০১১ সালে ৬৫১৬০ টাকা দান করেছিল।

নেদারল্যান্ডসের ক্যাথলিক অর্গানাইজেশন ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এইড (CORDAID) নামে আরও দুটি সংস্থা এবং আয়ারল্যান্ডের ক্যাথলিক চার্চের সরকারী বিদেশী উন্নয়ন সংস্থা ট্রকেয়ার ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে৷ এই দুটি সংস্থাই সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে TOM-এর কাছে।

টম ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড (বিএফডব্লিউ), “জার্মানির প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের বিশ্বব্যাপী সক্রিয় উন্নয়ন এবং ত্রাণ সংস্থা” থেকে TOM অনুদান পেয়েছে। BfW প্রকাশ্যে দাবি করেছে যে এরা লবিংয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য সেই দেশের চিন্তাশীল নেতা এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের অর্থায়ন করে তাদের দ্বারা যে কোনো দেশে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করার চেষ্টা করে “

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির দ্বারা বিদেশী অবদানের প্রাপ্তি এবং ব্যবহার সংক্রান্ত ২০১১-১২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে যে উদ্দেশ্যে বিদেশী অবদান গৃহীত হয়েছিল, তার মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ “উল্লিখিত ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রম” এর দিকে চলে গেছে, অর্থাৎ, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্কুল/কলেজ নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ, এতিমদের কল্যাণ, বৃত্তি, ইত্যাদি উদ্দেশ্যগুলির দিকে যাওয়া হয়নি ।

যদিও TOM-এর অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট (ফর্ম FC-6) অ্যাসোসিয়েশনের প্রকৃতিকে “শিক্ষামূলক, সামাজিক” বলে উল্লেখ করে কিন্তু তাদের সমস্ত অনুদান “উল্লেখিত ব্যতীত অন্য কার্যকলাপের” অধীনে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই “উল্লেখিত ব্যতীত অন্য কার্যকলাপগুলি” আসলে কি ?

এটি TOM-এর ঘোষিত কার্যকলাপের প্রক্রিয়া থেকে বেশ পরিষ্কার হয়ে যায় – “সামাজিক ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করা”, যা সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলির জন্য সোচ্চার হওয়ার আড়ালে “গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলির বিরুদ্ধে জনগণকে উসকানি দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করাই” হল এই উল্লেখিত ব্যতীত অন্য কার্যকলাপগুলি!

তারা CORDAID এবং Troicare-এর মতো সংস্থাগুলির কাছ থেকে অবদান পেয়েছে। তাই ধরা যেতে পারে এই “অন্যান্য কার্যকলাপগুলি” ধর্মীয় ডেমোগ্রাফি পরিবর্তনের প্রচেষ্টার পদক্ষেপও হতে পারে।

এটি শুধু TOM নয় , বর্তমানে তামিলনাড়ুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক এফসিআরএ এনজিও রয়েছে যার সংখ্যা ২৪৮৩ এবং সম্ভবত তামিলনাড়ু হল দিল্লির পরে বিদেশী অনুদানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাপক। প্রসঙ্গত, উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবাদ তামিলনাড়ুতেও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং সেখানে সংগঠিতভাবে কার্যকলাপ করা হচ্ছে।

নেপথ্য কাহিনীর পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ –

TOM কখনই মূলধারার প্ল্যাটফর্ম এবং বক্তৃতায় নিজেদের উপস্থিত করে না। আমরা তাদের সংবাদপত্র, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখি না। প্রকৃতপক্ষে, সংস্থাটির সামাজিক মিডিয়াতেও কোনো উপস্থিতি নেই। তাদের আছে শুধু একটি ওয়েবসাইট। হয়তো এটি তাদের ছায়াময় পটভূমি বিবেচনা করার জন্য যথেষ্ট কিন্তু, আমাদের কাছে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে TOM-এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা খুব সক্রিয়। তারা নির্দিষ্ট নিউজ পোর্টালের জন্য নিবন্ধ লেখে, সাক্ষাৎকার দেয়, প্যানেল আলোচনায় অংশ নেয়, টুইট করে, প্রতিবাদ করে এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকে যা তাদের লাইমলাইটে রাখে। তারা প্রান্তিক ও অসহায়দের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করে ‘সমাজকর্মী’ হিসেবে নিজেদের অভিহিত করে। এমনই একজন ‘সমাজকর্মী’হলেন নিত্যানন্দ জয়রামন ওরফে নিতি।

এই নিতি এমন একজন ব্যক্তি যাকে নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তার টুইটার বায়ো বলে যে তিনি একজন লেখক এবং এর বেশি কিছু নয়। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে যেখানে তিনি লেখেন, সেখানে তিনি একজন লেখক এবং একজন সমাজ কর্মী হিসেবে চিহ্নিত হন। মূলধারার মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে তাকে কমিউনিটি এনভায়রনমেন্টাল মনিটরিং বা কোস্টাল রিসোর্স সেন্টার বা সেভ এনোর ক্যাম্পেইনের অন্তর্গত কেউ হিসাবে উল্লেখ করা হয় যা সবই TOM-এর অধীনে উদ্যোগ। কিন্তু, এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে TOM-এর কোনও উল্লেখ থাকবে না। যাইহোক, এই নিতি হল TOM-এর চেয়ারপারসন বা চিফ ফাংশনারী।

সামাজিক এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করা একটি প্রশংসনীয় কাজ হলেও, নিতির অন্যতম উদ্দেশ্য ও মতবাদ হল অ্যানার্কি ( অরাজকতা)। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্ডিয়া টুডের কনক্লেভে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, নিত্যানন্দ বলেছেন:

“আদালত অত্যন্ত অস্থির অংশ। এবং.. আমি আরও দেখতে পাই যে প্রায়শই, আদালতগুলি আগের মতো শক্তিশালী নয়। আদালতের প্রতি যে আগে শ্রদ্ধা ছিল তা আজ নেই। এবং.. এছাড়াও চূড়ান্ত বিষয় হল আদালত বড় অপরাধীদের আর ছোট অপরাধীদের সাথে আলাদা আচরণ করে। এখানে একটি স্পষ্ট শ্রেণী পার্থক্য আছে। তারা বড় লোকদের বিরুদ্ধাচারণ করতে চায় না। তামিলনাড়ুতে, বন্যার পরে, এই মুহূর্তে, তারা জবরদখল করা জমি তে জবরদখল অপসারণের কথা বলছে, কিন্তু বিচারকরা কেউই বড়ো সংস্হার দ্বারা জবরদখলের কথা বলছেন না – আপনার কাছে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জলাশয়ের মধ্যেই তৈরি বন্দর রয়েছে, কে তাদের সরিয়ে দেবে? তারাও দখলদার বলে আমি মনে করি ।”

তাহলে, নিতি বাবু আর কোথায় বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে? বেসন্ত নগরে আপনার আভিজাত্যে সম্পন্ন বাড়িতে?

দ্য ওয়্যারের সাথে আরেকটি সাক্ষাৎকারে নিত্যানন্দ বলেছেন –

“আমি মনে করি নিউট্রিনো [অবজারভেটরি] নির্মিত হবে। এই নির্মাণে আপনার কোন ভয় থাকা উচিত নয়। আমি বরং এটা না করতে চাই। তবে আমি মনে করি এটি দুর্ভাগ্যজনক হবে যদি এটি একটি প্রামানিক বিতর্ক ছাড়াই হয় যেখানে প্রতিটি পক্ষ এমন একটি দৃশ্যের সাথে বসবাস করতে প্রস্তুত যেখানে তারা যা চায় তার ফলাফল তা নাও হতে পারে।”

সামাজিক অস্থিরতার তৈরির বিশ্লেষণ –

চারজন লোক স্টারলাইট বিক্ষোভের অগ্রভাগে ছিলেন – ফাতিমা বাবু, নিত্যানন্দ জয়রামন, মোহন সি. লাজারাস এবং লন্ডন ভিত্তিক ফয়েল বেদান্ত গ্রুপের সমরেন্দ্র দাস।

ফাতিমা বাবু, একজন ষাটোর্দ্ধ অধ্যাপক তথা ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ এবং তিনি সমরেন্দ্র দাসের সাথে হাতের হাত মিলিয়ে কাজ করেছিলেন‚ যিনি স্টারলাইট বিরোধী নেতাদের সাথে একটি ‘গোপন বৈঠক’ করার জন্য থুথুকুডিতে গিয়েছিলেন। তিনি তামা গলানোর প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে ‘বিক্ষোভকে বাঁচিয়ে রাখতে’ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

স্টারলাইটের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিল মোহন সি লাজারাস। খ্রিস্টানদের একটি বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা করার সময়, তিনি কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই প্রচার করেছিলেন যে স্টারলাইট কপার একটি বিষাক্ত কারখানা এবং বলেছিলেন যে চার্চ কারখানাটি বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তিনি থুথুকুডি থেকে খ্রিস্টান জনগণকে প্রতিবাদ করতে এবং ‘কারখানাটি কে সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ ‘ করতে প্ররোচিত করেছিলেন।

তিনি আরও বলেছিলেন যে ২৪ শে মার্চ ২০১৮,তারিখে থুথুকুডিতে একটি বিশাল প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সমস্ত ক্যাথলিক, পেন্টেকস্টাল, চার্চ অফ সাউথ ইন্ডিয়া (সিএসআই) স্টারলাইটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে।

সেই অনুসারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী উল্লিখিত তারিখে থুথুকুডিতে জড়ো হয়েছিল কারখানাটি বন্ধ করার দাবিতে। কমল হাসানের মক্কেল নিধি মাইম, ডিএমকে, কমিউনিস্ট দল এবং ১৭ মে আন্দোলনের মতো অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি তাদের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়ে প্রতিবাদটিতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুবিধা করে দেয়।

স্টারলাইট প্রতিবাদ এমন একটি ঘটনা যেখানে আমাদের সমস্ত আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকার নেপথ্যে থাকা হেয়ালীর মত আবছা নায়কেরা এক ছাদের তলায় এসে বিছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে থাকা তথ্যের তার কে জুড়ে দেয়। যেখানে বিদেশী অনুদান সহ এফসিআরএ-এনজিও, ‘অ্যাক্টিভিস্ট’, চার্চ এবং মিডিয়া হাউসগুলির একটি নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক অস্থিরতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একত্রিত হয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা –

মিডিয়া হল সেই বাহন যার উপর চড়ে এই সমস্ত মানুষ সামাজিক অস্থিরতার পরিকল্পনা করে। দ্য নিউজ মিনিট এবং দ্য ওয়্যারের মতো পোর্টালগুলি বারবার নিত্যানন্দ জয়রামনের নিবন্ধ প্রকাশ করে চলেছে। দ্য নিউজ মিনিটে লেটস মেক ইঞ্জিনিয়ারিং সিম্পল-এর ​​একটি ভিডিওর প্রতিক্রিয়াতে নিত্যানন্দ জয়রামনের একটি নিবন্ধ এবং একটি ভিডিও রয়েছে যা দূষণ সংকটের একটি বড় চিত্র দিতে চেয়েছিলেন এবং বেদান্তর বিরুদ্ধে তার বিষোদগার কে লক্ষ্য করে নিত্যানন্দ জয়রামনের অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল যার তিনি সুবিধামত উত্তর দিয়েছিলেন

জনসাধারণের মনোযোগের যোগ্য বলে যা মনে হয় লোকে তার ভিত্তিতে তাদের যুদ্ধ ও প্রতিবাদ বেছে নেয় ।

অন্যদিকে, তামিল মিডিয়া ফাতিমা বাবুকে গান্ধীবাদী সত্যাগ্রহী বলে প্রচার করেছে। এখানে তার সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় খবর আছে. চেন্নাইয়ের একটি তারকা হোটেলে স্টারলাইটের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চলাকালীন ‘থার্মাল রাজা’ নামে স্টারলাইট-বিরোধী প্রতিবাদের আরেক নেতার সাথে যৌন মিলন করতে দেখা গেছে তাকে।

এই জাতীয় সংবাদের মাধ্যমেই নিত্যানন্দ জয়রামন এবং ফাতিমা বাবুর মতো ব্যক্তিরা একজন বুদ্ধিজীবী এবং একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। একসাথে তারা মতামত তৈরি করে এবং আখ্যান তৈরি করে যা আরও সামাজিক উত্তেজনা তৈরী করে। একই সময়ে, এই সংবাদমাধ্যম গুলি স্টারলাইটের বিরুদ্ধে মোহন লাজারাসের ঘৃণ্য প্রোপাগান্ডাকে ফাঁস না করার কাজও সযত্নে পালন করেছেন ।

স্টারলাইট পর্ব থেকে শিক্ষালাভ

আজ, থুথুকুডির স্টারলাইট কপার প্ল্যান্ট, যা প্রায় দুই দশক ধরে তামা উৎপাদন করে আসছিল তা স্থায়ীভাবে বন্ধ। হাজার হাজার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাকরি নষ্ট হয়েছে। কোম্পানিটি এখন প্ল্যান্ট বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। এনজিও, কট্টরপন্থী চার্চ বাহিনী, একাডেমিয়া এবং এজেন্ডা-চালিত মিডিয়া গর্বিতভাবে ঘোষণা করতে পারে যে তাদের ‘মিশন সাকসেসফুল’। কিন্তু এই পর্বটি সাধারণ মানুষের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ!

বাইরে থেকে মনে হয় এই এনজিও, অ্যাক্টিভিস্ট এবং মিডিয়ারা ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছে। তবে এরা সবাই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান থেকে এসেছে। লোকেদের জীবন ও জীবিকার সাথে ছিনিমিনি খেলে নিজেদেরকে স্বার্থ চরিতার্থ করতে তারা একে অপরের সাহায্য নেয় এবং প্রায়শই এইসব সংস্থা বা ব্যক্তিদের বড় বিদেশী চার্চ-অর্থায়িত সংস্থার সাথে যুক্ত দেখতে পাওয়া যায়। একসাথে, তারা একটি বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে। একসাথে, তারা গঠন করে যাকে NAM ত্রয়ী বলা হয় – এনজিও-অ্যাক্টিভিস্ট-মিডিয়া ত্রয়ী।

বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলোর এই ইকোসিস্টেম, একাডেমিয়া, মিডিয়া এবং অন্যান্য সংগঠনগুলি এমন সব গল্প ছড়ায় যা নির্দিষ্ট মতাদর্শকে মহিমান্বিত করে এবং অর্ধ-সত্যকে অতিরঞ্জিত করে। তারা তাদের মতামতকে মানুষের মাথায় ঢোকানোর জন্য নাছোড়বান্দা ও দৃঢ প্রতিজ্ঞ। সরকার এফসিআরএ লাইসেন্সের অনেকগুলি বাতিল করে সমস্যাযুক্ত সংস্থাগুলির মাধ্যমে ভারতে অর্থের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা এখন আরও ক্ষুব্ধ হতে হবে।

এখানে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বদনাম করা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু, সংস্থাগুলির বিদেশী অর্থায়নের দিকগুলি এবং এই জাতীয় সংস্থাগুলির সাথে জড়িত কর্মীদের উপর আলোকপাত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাম ত্রয়ী উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য মতামত প্রণয়নকারী এবং চিন্তাশীল নেতাদের পরিচালিত করে শুধু নীতি নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না, জ্ঞাতসারে বা অজান্তে নৈরাজ্যও ছড়িয়ে দেয়। আমরা এমন দেশ যেটি আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত হয়। আর এও আইনের শাসন দ্বারা শাসিত দেশে, জনগণের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তৈরী এবং জনগণের উন্নয়নমূলক আকাঙ্খা পূরণ এবং ন্যায়বিচার প্রদানের অধিকার তাদের থাকা উচিত নয় যাদের আয়ের উৎসই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ॥

অভিজিৎ সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.