সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে পূর্ব সিকিমের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কারণ এই কলেজরই প্রায় ১০০ জন ছাত্র আক্রান্ত হয়েছেন ত্বকের এক বিশেষ সংক্রমণে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের মতে, এই ছাত্রদের প্রত্যেকেই নাইরোবি মাছির সংস্পর্শে এসেছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিকর্তারা জানিয়েছে, Sikkim Manipal Institute of Technology (SMIT)-র বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নাইরোবি মাছির প্রকোপ খুব দ্রত হারে বেড়ে চলেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই মাছি সিকিমের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রবেশ করতে পারে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সংক্রমিত ছাত্রদের চিকিৎসা চলছে। একজন ছাত্রের হাতে অস্ত্রপোচার করতে হয়েছে।
নাইরোবি মাছি কী? (What is Nairobi Fly)
নাইরোবি মাছির উৎপত্তি মূলত পূর্ব আফ্রিকায়। এই মাছিকে কেনিয়া মাছি বা ড্রাগন মাছিও বলা হয়ে থাকে। নাইরোবি মাছি অনেকটা গুবরে পোকার মতো। এই মাছির রং কমলা। প্রধানত উচ্চ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে এই মাছি দেখা যায়।
মানুষের শরীরে এই মাছি সংক্রমণ ঘটায় কীভাবে? (How does Nairobi fly infect the human body)
এই মাছি সেই সব পোকামাকড়কে খেয়ে ফেলে যেগুলি খাদ্যশস্য খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে এই মাছি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যদিও নাইরোবি মাছি সরাসরি কামড় বসায় না। কিন্তু এই মাছির দেহে এক ধরনের তরল আছে। যা Pederin নামে পরিচিত। এই তরল ত্বকের সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের দুই সপ্তাহ পরে ক্ষত সারতে শুরু করে। কিন্তু যদি ক্ষতস্থানটিতে আঁচর লাগে তবে সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
নাইরোবি মাছির সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় কী: (How to be safe from Nairobi Fly infection)
এই মাছিঘটিত সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কী কী করতে হবে, বিজ্ঞানীরা কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছেন।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান কাজ হল, রাতে শোওয়ার সময় অবশ্যই মশারি টাঙানো।
- এই মাছি যদি শরীরে এসে বসে, তবে কখনও হাত দিয়ে মাছিটিকে সরানো উচিত নয়। অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে, হাত না লাগিয়ে মাছিটিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার।
- মাছিটি যেখানে বসেছিল সেই জায়গাটি খুব ভালো করে সাবান জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যদি ওই মাছির থেকে বেরনো কোনও তরল পদার্থ শরীরের কোনও অংশে লেগে থাকে, খেয়াল রাখতে হবে যাতে ওই অংশ শরীরের অন্য কোথাও স্পর্শ না করে।
- বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে ওই মাছি যেন কোনও ভাবেই চোখের উপর না বসতে পারে।
সিকিম ছাড়া ভুটানের কিছু অংশে এই রোগ ছড়িয়েছে। উত্তর বঙ্গের শিলিগুড়ির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন। শিলিগুড়ির এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ জন রোগী আসছেন, যাঁরা নাইরোবি মাছির দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন।
এই মাছির আক্রমণের ভয়াবহতা দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালের কেনিয়াতে। এছাড়া, আফ্রিকার বাইরে ভারত, জাপান, ইজরায়েলে এই মাছির আক্রমণ দেখা গিয়েছে।