‘Only Compassion Can Heal’ অর্থাৎ ‘সমবেদনাই নিরাময়ের একমাত্র রাস্তা’ — সেই প্রথম থেকেই এই বিশ্বাস নিয়েই পথ চলেছে বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন (বিডিজি ফাউন্ডেশন)। সেই কারণে যখনই সুযোগ পেয়েছে, এই সংস্থা অভাবী, মেধাবী, দরিদ্র, বয়স্ক, বিশেষভাবে-অক্ষমদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রখ্যাত গ্লোবাল আইটি নেতা বিক্রম দাশগুপ্তের দক্ষ নির্দেশনা ও নেতৃত্বে একটি বিশেষ মডেলের মাধ্যমে বিগত বেশ কিছু সময় ধরে এই কাজ সম্পাদনা করে যাচ্ছে তারা। যে অনন্য ভাবনা নিয়ে বিক্রম দাশগুপ্ত এই জনহিতকর প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছিলেন, তা আজ সফল। বছরের পর বছর ধরে কর্পোরেট জগতে চাকরি, উদ্ভাবনী পরিকল্পনা, গ্লোবসিন সাম্রাজ্য তৈরি, ইত্যাদির পরে তিনি জানতেন তাঁর পরবর্তী মিশন – সমাজের জন্য কিছু করা।
বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন। তাদের একাধিক শাখা রয়েছে — কলকাতা ব্রডওয়ে, কল্যাণী ফাউন্ডেশন এবং বিডিজি অ্যাঞ্জেলস। যাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবন উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করছে। যেমন, আমফানে আক্রান্ত বাউলদের জন্য ঘর তৈরি, দেশব্যাপী অভিবাসী শ্রমিকদের রেশন দেওয়া, বিশেষভাবে অক্ষম শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষমতায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা, বৃদ্ধাশ্রমে কোভিড কিট এবং চিকিৎসা সামগ্রী দান, প্রান্তিক প্রবীণদের মূলধারার উত্সব উপভোগ করতে এবং নিজেকে আপন বোধ করার জন্য নিয়ে আসা, অভাবী অভিনয় শিল্পীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া, জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের অপারেশনের জন্য কলকাতা ব্রডওয়ে ইয়ুথ স্কলারশিপ তহবিল তৈরি, তরুণ মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষার জন্য অর্থায়ন ইত্যাদি। বহু তরুণ উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্ট আপেও বিনিয়োগ করেছে বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন। তারা সবাইকে শিখিয়েছে যে সহানুভূতি সত্যিই নিরাময় করতে পারে। বলা বাহুল্য বিক্রম দাশগুপ্ত সত্যিই তরুণ মনকে প্রশিক্ষিত করার এবং জাতির জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার মিশনে রয়েছেন।
সম্প্রতি কৌশিক সেনের স্বপ্নসন্ধানীর পরবর্তী প্রজেক্ট ‘হ্যামলেট’-এর প্রযোজনা করছে বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন। ভারতীয় থিয়েটারে সম্ভবত এটিই এমন ধরনের সহযোগিতা। ক্যামেরার নেপথ্যে থাকা ব্যাকস্টেজ টেকনিশিয়ান, লাইট বয়, সাউন্ড টেকনিশিয়ান, মঞ্চ শিল্পী, যাঁদের বেশিরভাগই অতিমারির সময় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, তাঁদের জন্য শুধু উপার্জনের ব্যবস্থাই নয়, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ডও উপহার দিচ্ছে বিডিজি। কয়েক বছর আগে বিডিজি ফাউন্ডেশন দ্বারা চালু করা ‘ক্যালকাটা ব্রডওয়ে হেলথ কার্ড’ বিনামূল্যে উপভোক্তার প্রতিটি চিকিৎসা খরচ বহন করছে। চিকিৎসকের খরচ থেকে ওষুধ, এমনকি ছোট অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সব কিছু। এই কার্ডের আওতায় থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও এর সুবিধা পাচ্ছে। কার্ডটি এর আগে তনুশ্রী শঙ্কর ডান্স অ্যাকাডেমির বহু শিল্পীকে দেওয়া হয়েছিল। এবার নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনের গ্রুপ স্বপ্নসন্ধানীর টেকনিশিয়ানদের দেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে এই কার্ডগুলি হস্তান্তর করবেন অপর্ণা সেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী এবং সুজন মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরা।
বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন যেভাবে স্বপ্নসন্ধানীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, তাদের আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে একটি অনন্য মডেল। যা আাগামী দিনে ভারতীয় থিয়েটার মহলে প্রতিলিপি করলে এক আমূল বদল আসতে পারে। বর্তমানে অর্থায়নের অভাব এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাঁড়াশি চাপে, ভারতের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যশালী দেশ থেকে দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে থিয়েটার। গত বছর দূর্গা পুজোর সময় এমনই এক উদ্যোগ নিয়েছিল এই ফাউন্ডেশন। একটি চমৎকার নৃত্য-নাটক-সংগীত তৈরি করা হয়েছিল যার নাম ছিল ‘মা আসবেই’। খুব স্বল্প সময়েই যা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিল। এটি সারা বিশ্ব জুড়ে অনলাইনে স্ট্রিম করা হয়েছিল, এবং টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি চেক হিসাবে দরিদ্র পারফর্মিং শিল্পী এবং ব্যাকস্টেজ প্রযুক্তিবিদদের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরিত করা হয়েছিল।
সম্প্রতি চালু হওয়া ক্যালকাটা ব্রডওয়ে ইয়ুথ স্কলারশিপ সম্পর্কেও ঠিক একই কথা বলা যেতে পারে। যা মেডিকেল নিয়ে পাঠরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করছে। মাইক্রোবায়োলজি এবং সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রছাত্রীরা, পারফর্মিং আর্টসের তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা, অর্থের অভাবে যাদের স্বপ্নপূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই সংস্থা। বিশেষ করে মেধাবী ছাত্রীদের দেওয়া এই স্কলারশিপটি উল্লেখযোগ্য। যার মূল লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়ন। এটি বিক্রম দাশগুপ্ত তাঁর মা, কল্যাণী দেবীর নামে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছে কল্যাণী ফাউন্ডেশন।
স্বাস্থ্য পর্যায়েও নিজেদের জনহিতকর কাজ বহাল রেখেছে বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন। জন্মগত হার্ট ডিসঅর্ডার (সিএইচডি) শিশুদের অপারেশনে আর্থিকভাবে সহায়তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। বিডিজি ফাউন্ডেশন হার্ট টু হার্ট ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যার চেয়ারম্যান হলেন বিখ্যাত ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। বিগত সময়ে বহু ছোট শিশুদের জীবনের পথে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।
বার বার মানুষের টানে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন বিক্রম দাশগুপ্ত। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন এলেই তাঁর সহজ উত্তর, “আমার গল্পগুলি আসলে আপনাদের সম্পর্কেই। আর সেই কারণেই বিডিজি ফাউন্ডেশন তার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র, মেধাবী, বয়স্ক এবং বিশেষভাবে-অক্ষমদের জীবন উন্নয়নের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনিও কলকাতা ব্রডওয়ে এবং বিডিজি ফাউন্ডেশনের জনহিতকর মিশনের একটি অংশ হতে পারেন। বিশদে জানতে ভিজিট করুন — https://bdgfoundation.org