উদয়পুরে হিন্দু যুবকের গলা কেটে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রিয়াজ আত্তারি এবং গাউস মহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে করাচির দাওয়াত ই ইসলামি এবং তেহরিক ই লব্বাইকের যোগ খুঁজে পেল পুলিশ

উদয়পুরে কাণ্ডকে কেন্দ্র করে উত্তাল সারা দেশ। মাত্র এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এক দর্জিকে করা হল খুন। দুই হত্যাকারী হত্যা করার পরে আবার ভিডিও করে। যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ। এবার এই ঘটনা প্রসঙ্গেই মুখ খুললেন কানহাইয়া লালের স্ত্রী যশোদা।

তিনি দাবি করেন যে, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে প্রতিবেশী নাজিম দায়ী। তাঁর কথা অনুযায়ী এই ঘটনার সূত্রপাত জুন মাসের প্রথম দিকে। কানহাইয়া লাল নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে একটি পোস্ট করেছিল। সেই পোস্টকে কেন্দ্র করে তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি উঠতে থাকে। এই অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে নাজিম নামের এক প্রতিবেশী চলতি মাসের ১১ তারিখে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।

স্ত্রী যশোদা এও দাবি করেন যে, কিন্তু কানহাইয়া লাল কয়েকদিনের জেল খেটে এলেও তাঁর প্রতি মানুষের ক্ষোভ কমেনি। একের পর এক হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। প্রাণহানি হতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি থানায় অভিযোগ জানান ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দাবি করেন। পুলিশ তাঁর আবেদনে গুরুত্ব না দিলে কানহাইয়া লাল প্রায় ১ সপ্তাহের মতো টেলারিং শপে যাওয়া বন্ধ করে দেন। অবশেষে, একদিন গেলে, সেদিনই প্রাণ হারান তিনি। এই প্রসঙ্গে যশোদার দাবি, নাজিমই হত্যাকারী গৌস ও রিয়াজকে কানহাইয়া লালের দোকানের ঠিকানা দিয়েছিল।

উদয়পুরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এবার আইএসআইএস যোগ সামনে এল। পুলিশ সূত্রে খবর, ইসলামিক স্টেটের স্লিপার সেলের উদয়পুর শাখার প্রধান ছিল ধৃত মহম্মদ রিয়াজ। তার যোগ রয়েছে জয়পুরের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও। জয়পুরেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।

একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উদয়পুরের পুলিশ আগেই জানিয়েছিল মহম্মদ রিয়াজের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ছিল। ধৃত দুজনের মোবাইলে ৮টি পাকিস্তানি নম্বর মিলেছে। তদন্তকারীদের দাবি, পাকিস্তানের চরম মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন দাওয়াত-ই-ইসলামির মাধ্যমে আইসিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত রিয়াজ।

ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনটি ভারতেও জাল বিছিয়েছে। তাদের স্লিপার সেল অর্থাৎ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনটির গোপন শাখার উদয়পুরের প্রধান ছিল রিয়াজ। গত পাঁচ বছর ধরে সঙ্গী মহম্মদ গোশকে নিয়ে ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের আরও এক সঙ্গীর হদিশ মিলেছে ইতিমধ্যেই। রাজস্থানের টঙ্ক থেকে গ্রেফতার হয়েছে মুজেবকে। যার সঙ্গে সরাসরি আইসিসের যোগের প্রমাণ মিলেছে।

তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে রিয়াজের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিও। সেখানে সে আঙুলের মাধ্যমে একটি বিশেষ ভঙ্গি করে রয়েছে যা সাধারণত ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনের চিহ্ন। ধৃত রিয়াজ আবার নামের শেষে আটারি শব্দবন্ধ ব্য়বহার করত, যা আসলে পাকিস্তানের আটারের দাওয়াত-ই-ইসলামির পরিচয়বাহক।

উদয়পুরে হিন্দু যুবকের গলা কেটে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রিয়াজ আত্তারি এবং গাউস মহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে করাচির দাওয়াত ই ইসলামি এবং তেহরিক ই লব্বাইকের যোগ খুঁজে পেল পুলিশ। পাকিস্তানের ওঁই দুই সংগঠনের ভাবধারায় বিশ্বাস করে উদয়পুরের খুনিরা। জেরায় এ কথা জানিয়েছে তারা।

করাচিতে অবস্থিত ইসলামপন্থী জঙ্গী সংগঠন দুটি দুনিয়া জুড়ে শরিয়ত আইন চালু করতে চায়। তাদের সঙ্গে ধৃতদের সরাসরি যোগ ছিল কিনা, খুনের পিছনে প্রেরণা জুগিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ-ও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে টুইটে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের টুইট, রাজস্থানের উদয়পুরে কানাইয়া লাল তেলি খুনের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কোনও সংগঠন বা আন্তর্জাতিক যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। উদয়পুরে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে রাজস্থান সরকার। সিটের তরফেও এই ঘটনায় কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা জানানো হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উদয়পুর সহ গোটা রাজস্থানে পুলিশের কড়াকড়ি শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.