শ্রী গুরুজী অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক শ্রী মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকরজী শ্যামাপ্রসাদের আত্মবলিদানের পর একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। শিরোনাম “ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।” সেখানে শুরুতেই দেখিয়েছেন, দেশের কোটি কোটি ভাইবোন পূর্ববঙ্গে অমানুষিক অত্যাচারে উৎপীড়িত হয়ে, বাসভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয়ের খোঁজে এলেন। তখন শ্যামাপ্রসাদ মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন। জনসেবাই যে জীবনের লক্ষ্য, লাভজনক পদে আটকে থাকা নয়, এই দৃঢ়তা ব্যক্ত করলেন। শ্যামাপ্রসাদ সম্পর্কে সঙ্ঘের জানকারি এমনই ছিল। জানকারিটি হচ্ছে স্বদেশের হিতে সর্বদা শ্যামাপ্রসাদের পণ এবং জীবনপণ।
[১৯৪২ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। প্রতিবাদের কারণ ছিল মেদিনীপুরের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হলেও ব্রিটিশ সরকারের ত্রাণকার্যে অনীহা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মেদিনীপুরবাসী সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল ইংরেজ শাসক।
স্বাধীনতার পর তিনি শিল্প বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গের দাঙ্গায় হিন্দুর জীবন বিপন্ন হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা যে নীতি অবলম্বন করেছিল, তার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে মন্ত্রিত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি ‘নিখিল ভারত জনসঙ্ঘ’ দল গঠন করলেন। দলের আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে গিয়ে অপরিসীম পরিশ্রম করলেন। কাশ্মীরে গিয়ে কারারুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।]
গুরুজী তাঁর রচনায় শ্যামাপ্রসাদকে দেবোপম মহামানব রূপে দেখিয়েছেন। খোলাখুলিভাবে উল্লেখ করেছেন জনসঙ্ঘ স্থাপনার কথা, তার প্রধান হিসাবে শ্যামাপ্রসাদের অন্তর্ভুক্তি, সঙ্ঘ-জনসঙ্ঘ সম্পর্ক এবং কালজয়ী কীর্তির কথা।
শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেছেন, বিধির বিধান অলঙ্ঘনীয়। লিখেছেন একবারই তিনি আমার সঙ্গে, এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে পরামর্শ না করে নিজের বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত সেটা তাঁর পক্ষে প্রাণঘাতী প্রমাণিত হল।
ভবিতব্যের আশঙ্কা করে চাইছিলেন, ড. মুখার্জি যেন সেখানে না যান। যদি তিনি যান তাহলে, আর ফিরে আসবেন না। তিনি যাতে সেখানে না যান এমন বার্তা প্রেরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। বিধির বিধান ছিল অন্য রকম। সম্ভবত বার্তাটি শ্যামাপ্রসাদের পরিকর/পার্ষদদের মধ্যেই হারিয়ে গেল। কারণ তারা সূর্যালোকের আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত ছিল। দুঃখ করে গুরুজী বলেছিলেন, পরিণাম হল, “আমার একটি আধারই চলে গেল। তাঁর উপর অনেক আশা আকাঙ্খা ছিল, যা সাকার হয়ে উঠছিল। সব ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।”
কল্যাণ গৌতম।