যাহাঁ যায় প্রভু তাহাঁ কোটি সংখ্য লোক
দেখিতে আইসে দেখি খন্ডে দুঃখ শোক
যাঁহা যাঁহা প্রভুর চরণ পড় এ চলিতে
সে মৃত্তিকা লয় লোক গর্ত হয় পথে।।
নামসঙ্কীর্তন করতে করতে শ্রীচৈতন্য যখন রা্মকেলিতে আসছেন তাঁর পিছনে পিছনে লক্ষ লক্ষ লোক চলেছেন।
শ্রীচৈতন্য যখন রা্মকেলিতে এসেছিলেন বড়সোনা মসজিদ তখনো তৈরী হয়নি। হোসেন শাহের রাজধানী একডালা থেকে একটু বেশি রাতে ছদ্মবেশে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন সাকর মল্লিক আর দবীর খাস যাঁদের নাম অমর আর সন্তোষ। এঁরা দুজনেই হিন্দু হলেও বুদ্ধিবলে আর কিছুটা রাজ জ্যোতিষী চারুমিহিরের সুপারিশে হোসেন শাহের দরবারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিলেন। সাকর মল্লিক মানে প্রধান মন্ত্রী আর দবীর খাস একান্ত সচিব। শ্রীচৈতন্য রা্মকেলিতে আসার আগেই অমর আর সন্তোষের সঙ্গে তাঁর পত্রবিনিময় হত। মুসলমান সুলতানের দরবারে আমীর বনে যাওয়া অমর ও সন্তোষ সমাজের চোখে যBoন হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে গেল কিন্তু নবাবের চোখে তারা সেই Kaফেরই রয়ে গেল। আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে ভোগা এই দুটি পন্ডিত মানুষকে শ্রীচৈতন্য সেই রাতে রামকেলিতে বৈষ্ণবে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নতুন নাম দিলেন। বড় ভাই অমরের নাম হল সনাতন ছোট সন্তোষের রূপ।
রামকেলি ঐতিহাসিক দিক থেকে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একটি গ্রাম। বৃন্দাবন দাস রচিত চৈতন্যভাগবত (অন্ত্যখন্ড)-এ এই গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায় –
“গৌড়ের নিকটে গঙ্গাতীরে এক গ্রাম।
ব্রাহ্মণ সমাজ তার রামকেলি নাম।।”
ঐতিহ্যবাহী এই রামকেলি মেলা ৫০৭ বৎসরের প্রাচীন। মালদা শহর থেকে গৌড় যাবার পথে ১৪ কিলোমিটার গেলেই রামকেলি গ্রাম। জনশ্রুতি অনুযায়ী বনবাসে থাকাকালীন রামচন্দ্র তাঁর শ্বশুরবাড়ি মিথিলায় যাওয়ার পথে পুণ্ড্রদেশ বা মালদাতে কিছুদিন কাটিয়ে যান। সেখানে হনুমান রাম সহ সীতা ও লক্ষ্মণকে আম খাওয়াতে কালিন্দী নদীর তীরে এক আমবাগানে নিয়ে গেলে সেখানে আমের স্বাদে-গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে রামচন্দ্র ফলকেলি শুরু করে দেন। রামচন্দ্র আম নিয়ে ‘কেলি’ অর্থাৎ খেলা করেছিলেন বলেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় ‘রামকেলি’।
“ভুঞাবাড়ি্র বিষ্ণুমন্দিরের চাতালে কাঠের পিঁড়ির ওপর গোরা বসেছিল। বিষ্ণুর আসনের সামনে লম্বা এক পিলসূজের ওপর বড়ো প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপের আলো হালকা ভাবে চাতালে এসে পড়েছে। দু’পা মুড়ে দু’হাঁটু সামনে রেখে সন্ন্যাসী বসে রয়েছে। তার বাঁ পাশে কমন্ডুল। সাকর মল্লিক, দবীর খাস দন্ডবৎ হয়ে প্রণাম করল।। গোরা উঠে দাঁড়িয়ে দু’ভাইকে পরপর বুকে জড়িয়ে ধরতে তারা বলল, প্রভু এ কি করলেন? আমাদের জাতধর্ম নেই, আমরা পতিত।
গোরা হাসল, বলল, তোমরা বিনয়ী, প্রেমভক্তি ছাড়া এমন বিনয় হয় না, তোমরা আসল বৈষ্ণব’।
রাত্রির চতুর্থ প্রহরে শ্রীচৈতন্য রামকেলি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন কানাই এর নাটশালের দিকে। কারণ বুদ্ধিমান রূপ-সনাতন সে রাত্রে শ্রীচৈতন্যকে একটি মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছিলেন, সেটি হল অবিলম্বে রামকেলি ছেড়ে যাওয়া। এত লোক-লস্কর নিয়ে এরকম উচ্চৈস্বরে নামগান শ্রীচৈতন্যের প্রাণশংশয় করতে পারে।
ইহাঁ হইতে চল প্রভু ইহাঁ নাহি কাজ
যদ্যপি তোমারে ভক্তি করে গৌড়রাজ
তথাপি যবন জাতি না করি প্রতীতি
বন যাত্রায় এত সংঘট্ট ভাল নহে রীতি
যাহা সঙ্গে চলে এই লোক লক্ষকোটি
বৃন্দাবন যাত্রার এ নহে পরিপাটি।।
যেখানে এই সাক্ষাৎকার হয়েছিল বলে লোকে মনে করে সেখানে এক বিরাট গাছ। কেলিকদম্ব। তেমনই বিরাট এক চৈতন্যমূর্তি। দুবাহু উপরের দিকে তোলা। নিচে লেখা আছে সেই সাক্ষাৎকারের কথা। আর গাছের নিচে ছোট একটা মন্দির। তার মধ্যে লালচে একখন্ড পাথরে দুটি পায়ের ছাপ। শ্রীচৈতন্যের। দুধ মেশানো জল সেই চরণচিহ্নের গভীরে ঢুকে ছাপকে আরো স্পষ্ট করেছে। ভুঞাবাড়ি্ কোথায় তা জানা নেই। রাস্তার ধারে ধারে মাটির নিকোনো ঘর। টালির চাল।
সন্তোষ , অমর দুইভাই রূপ সনাতন রূপে মহাবৈষ্ণব হয়ে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রামকেলিকে বৃন্দাবনের রূপদান হেতু আটটি কুণ্ড খনন করে দেন। বৈষ্ণব সাধনা চর্চা এবং রূপ সনাতনের প্রভাবে রামকেলি এক সময় গুপ্তবৃন্দাবন নামেও পরিচিত হয়। ৯২২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠের সংক্রান্তি তিথিতে রামকেলি পদার্পন করেন গৌরাঙ্গ। মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন কেলিকদম্ব এবং তমাল তলা আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে।
পূর্বে রামকেলি মেলা চলত প্রায় একমাস। অবশ্য এখন সাতদিনের অধিক মেলার জন্য প্রশাসনিক অনুমতি মেলে না। নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই মেলা চলে আসছে ৫০৭ বৎসর ব্যাপী চলে আসছে। রথবাড়ি মোড় থেকে রামকেলি্র প্রবেশ পথ পিয়াসবাড়ি মোড় ১৬ কিলোমিটার। আধ ঘন্টার এই রাস্তায় যদি বাইরে তাকাবার সুযোগ পান, দেখবেন দু ধারে আমের বাগান, চাষের ক্ষেত, পিঠে ঝোলা নিয়ে মেলার দিকে হেঁটে যাচ্ছে দু একটি পরিবার। পিয়াসবাড়িতে অটো থেকে নেমে হেঁটে চললাম। চাষের ক্ষেতে নীল রঙা মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছে বৈষ্ণব। পথের দু ধারে পরপর টুকরো টুকরো লাল শালু ছেঁড়া শাড়ি, গামছা পাতা। তাতে ছিটিয়ে রয়েছে ভিক্ষার চাল। শ্রীচৈতন্য আসবেন শুনে নৃসিংহানন্দ এই পথ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন সে কথা চৈতন্যচরিতামৃতে আছে-
কুলিয়া গ্রাম হইতে পথ রত্নে বান্ধাইল
নিবৃন্ত পুষ্প শয্যা উপরে পাতিল
পথে দুই দিগে শোভে বকুলের শ্রেণী
মধ্যে মধ্যে দুই পাশে দিব্য পুষ্করিণী।
সেই পুষ্করিণীতে স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে ঢুকে যাচ্ছে কেউ অস্থায়ী আখড়ায়, কেউ দাঁত মাজছে। ভোরের কীর্তনের প্রস্তুতি চলছে, হারমোনিয়ামে বেজে উঠছে-
জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ
জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌড় ভক্তবৃন্দ।
এই মেলা পুরোপুরি গ্রামীন গন্ধের।বিশাল বট গাছে্র তলায় শিল নোড়া বিক্রি হচ্ছে, পাথর খোদাই এর ছেনি হাতুড়ির শব্দে শিলের উপর ফুটে উঠছে মাছ পাখি আর জলের ঢেউ এর ছবি। মেয়ে বউরা শাঁখা পরছে। চোখের সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে কোথাও ফাটলের সূক্ষ্ম কোনো দাগ আছে কি না। আরেকটু দূরে বসেছে পুজোর সামগ্রী। একটু উঁচুতে একসারি মাটির ঘর। তার প্রত্যেকটির দাওয়ায় ঝুলছে নানা রঙের নানা মাপের শ্রীখোল। মূল রাস্তা থেকে এই দোকান গুলো ততটা দৃশ্যমান না হলেও সন্ধানী লোকেরা ঠিক পৌঁছে যাচ্ছে এই খোলের বাজারে। সাকুল্যে আট দশটি দোকান। কীর্তনীয়ারা এসে বাজিয়ে বাজিয়ে পরখ করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দসই খোল। কারোর হাতের পাঞ্জা বড়, কারোর ছোট। সবার জন্য রয়েছে সব মাপের খোল। একেবারে ছোট শিক্ষার্থীর জন্যও আছে কয়েকটা। দাম হাজার খানেক থেকে পাঁচ ছ’হাজার পর্যন্ত। ওঁরা আসেন পাশের দিনাজপুর থেকে, কেউ আরো উত্তরের। সামনে বর্ষার দু তিন মাস হাতে কোনো কাজ থাকবে না। তার আগের এই মেলাই ওঁদের সম্বল। তবে মেলার বিক্রিবাটা খুব ভাল। সামনে বসিয়ে রাখা আর ঝোলানো যাবতীয় খোল দেখিয়ে বললেন এই সবই বিক্রি হয়ে যাবে এই চারদিনে। দাম অনু্যায়ী একেকটা খোলে হাজার বারোশো টাকা পর্যন্ত ছাড় দিয়ে দেন ওঁরা। এত কমে কোথাও এ জিনিস পাওয়া যায়না। তাই বাদকেরা সবারই রামকেলির মেলা থেকে খোল কেনার লক্ষ্য নিয়েই আসেন।
এই মেলা চরিত্রগত ভাবে এখনো গ্রামীন আর যথেষ্টই স্বতন্ত্র। ভরদুপুরে প্রকান্ড আমবাগানের মধ্যে শুধুই ছায়া। আমগাছ গুলো সবই বেঁটে বেঁটে। প্রত্যেক মালিকের বাগানের সীমানা তারকাঁটায় ঘেরা। এরকম চার-পাঁচটি বাগান পেরিয়ে নদী। হা-ক্লান্ত হয়ে যার ধারে দাঁড়ালাম তাকে নদী না বলে নালা বলাই শ্রেয়। জল কচুরিপানায় ঢাকা, কালো আর মলিন।
তটস্থ হইয়া মনে বিচার যদি করি
সর্ব রস হইতে শৃঙ্গারে অধিক মাধুরকরী
অতএব মধুর রস কহি তার নাম
স্বকীয়া পরকীয়া ভাব দ্বিবিধ সংস্থান।।
একসময়ে এই মেলায় ‘কন্ঠীবদল’ প্রথা ছিল। বৈষ্ণব পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়েদের আনা হত মেলায়। তাঁদের সর্বশরীর ঢাকা থাকত কাপড়ে আর সেই কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে থাকত বাম হাতের কড়ে আঙ্গুল (মতান্তরে অনামিকা)। মুখ নয়, মুখশ্রী নয়, মরাল গ্রীবা নয়, রেশমকোমল চুল নয় পাণিপ্রার্থীদের কাছে পছন্দ করার মত রইল শুধুমাত্র একটি কড়ে আঙ্গুল। বিয়ের জন্যই ত তাদের আসা। আচ্ছা কড়ে আঙ্গুলই কেন? কেন তর্জনী বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ নয়? কারণ কি এই যে, কড়ে আঙ্গু্লটি অন্যান্য আঙ্গুলের তুলনায় সাংসারিক ঝড় ঝাপ্টার প্রভাব থেকে বেশ কিছুটা মুক্ত? তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে হয়ত গৃহকর্মের ভারী ছাপ, হয়ত সে আঙ্গুল দুটোয় বঁটিতে কাটা ফাটলের মত দাগে মোচার কালো কষ লেগে তাদের মন ভোলানোর ক্ষমতা হারিয়ে গিয়েছে।
শ্রীচৈতন্যের অতি প্রিয় খাবার ছিল দুধে পাক করা লাউ, মোচার ঘণ্ট, থোড়। আচ্ছা থোড় কাটলেও তো হাত কালো হয়ে যায়, আচ্ছা, শ্চীর আঙ্গুলেও কি এইরকম বঁটির কালো দাগ ছিল? একজন লিখেছেন শ্রীচৈতন্য চেয়েছিলেন সব জীবের উদ্ধার হোক, উঁচু নিচ জাতি, দরিদ্র ধনী, সমাজচ্যুত সবাই কৃষ্ণনামে উদ্ধার পাক, এই প্রথাটা হয়ত তারই একটা সম্প্রসারিত রূপ। কড়ে আঙ্গুলে সবাই সমান হওয়ার একটা সুযোগ পাচ্ছে।
শীতলপাটি্র বিক্রি জমে ওঠে মেলার বুকে। গোল করে গোটানো সারি দেওয়া প্রচুর পাটির মধ্যে থেকে মনোমত পাটি বেছে নেওয়ার অঢেল সুযোগ। কারো পছন্দ দু রঙের নকশা করে বোনা পাটি, কারো বা নিরলঙ্কৃত। দাম আট ন’শো। বারোদুয়ারির সামনে দিয়ে রাস্তা বেঁকে গেছে ডানদিকে। সে রাস্তা যেমন যেমন চলেছে তেমন তেমন চললে আরেকটা সৌধের সামনে যাওয়া যায়। এর নাম দাখিল দরওয়াজা। এই সৌধের নিচেই বসে গম্ভীরার আসর। গম্ভীরা শিবের গীত। কিন্তু এখন এর জনপ্রিয়তা অন্য জায়গায়। যে সব গম্ভীরা এখন গাওয়া হয় তা শুনতে অনেকটা কবির লড়াই এর মত।
শ্রীচৈতন্য এখানে আসার আগেই হোসেন শাহ ভাবছিলেন উৎকল আক্রমণ করবেন। তাঁর দুই উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী অমর আর সন্তোষ সে রাতে শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে দেখা করার পর সব কিছু উলটে গেল। রূপ-সনাতন শ্রীচৈতন্যকে বললেন -প্রভু আমাদের কি হবে? গোরা বললেন পৌষসংক্রান্তিতে প্রয়াগে এসো, দেখা হবে। ছোট ভাই সন্তোষ (রূপ) রাজধানী ছেড়ে চলে গেলেন দেশের বাড়ি আর বড় ভাই অমর যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করে বন্দী হলেন হোসেন শাহের কারাগারে। এক চালে সুলতানের উৎকল আক্রমণের ছক ভেস্তে গেল। শক্তিহীন সুলতান এরপরেও যুদ্ধে গেছিলেন তবে ততদিনে উৎকলরাজ প্রতাপরুদ্র নিজেকে গুছিয়ে নিতে অনেকটা সময় পেয়ে গেছেন। আর সেই ছিল হোসেন শাহের শেষ উড়িষ্যা আক্রমণ।
রাস্তা থেকে একটু দূরে হয় হাতে তৈরী কম্বল। বড় ভাই অমর ততদিনে সনাতন। প্রয়াগে শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে তার ভগ্নিপতি সনাতনকে একটা মূল্যবান ভেট কম্বল দিয়েছিলেন। সন্ন্যাস নেওয়ার পর যখন শ্রীচৈতন্যের কাছে ভিক্ষা করে আহার সংগ্রহের অনুমতি চাইছেন সনাতন তাঁর গায়ে তখনো সেই দামি কম্বল। দেখলেন শ্রীচৈতন্য ওই কম্বলের দিকে বারবার দৃষ্টিপাত করছেন। ব্যাপার বুঝে সনাতন সেটি এক দরিদ্রকে দিয়ে দিলেন। খুশি হয়ে শ্রীচৈতন্য বললেন দামি জিনিস নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি মানায় না। তবে মেলার কম্বলের বিক্রেতাও কোণঠাসা। বাজারে এসেছে চিনে কম্বল, যদিও এ মেলায় এখনো তাদের প্রবেশাধিকার নেই।
জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির আগের দিন বা ৩২ দিনে মাস হলে ৩১ শে জ্যৈষ্ঠ, ৩১ শে মাস হলে ৩০ শে জ্যৈষ্ঠ মদনমোহন মন্দির ও মন্দির প্রাঙ্গনে মহাপ্রভু শ্ৰীচৈতন্যদেবের আরাধনার অনুষ্ঠান হয়। মূলত ওইদিন থেকে চলতে থাকে মেল, পূজা অর্চনা এবং নরনায়াণ সেবা। প্রায় ১০ – ১২ হাজার ভক্তের আগমন ঘটে মেলায়। সারা রামকেলি মেলা জুড়ে থাকে প্রচুর বৈষ্ণব আখড়া। আখড়াগুলোতে চলে কীর্তন ও বাউল গান।
রামকেলি পুণ্যভূমি। রামকেলি মহাতীর্থ। এখান থেকে সামান্য দূরে গৌড়েশ্বরী থান। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী এই এলাকাটির প্রাচীন নাম ছিল বামন পাড়া। জনশ্রুতি যে আসল মন্দির নবাবী আমলে ধ্বংস হয়ে যায়। আবার অন্য একটি মতানুসারে মূল মন্দির গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যায়। একসময় এই মন্দির ছুঁয়ে প্রবাহিত হত জাহ্ণবী নদী। এই মন্দিরে পাথর খোদিত একটি চতুর্ভুজ দেবী মূর্তিকে দেবী গয়েশ্বরী বা গৌড়েশ্বরী রূপে আরাধনা করা হয়। রামকেলি মেলা উপলক্ষ্যে সেখানে মহিলারা আসেন মাতৃপিন্ড দানের উদ্দেশ্যে। ভারতে একমাত্র এখানেই মেয়েরা মায়ের পিন্ডদান করেন, বিহার আর উত্তরপূর্বের দলে দলে মহিলারা তাঁদের মৃত মায়ের পিন্ড দিয়ে নতুন কাপড়ে সে পিন্ড মুড়ে জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসেন।সব মিলিয়ে ইতিহাস ও ধর্মের এক অনবদ্য মিলনস্থল এই রামকেলি।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
যাঁরা বিদেশকেই ছুটি কাটানোর মূল বলে মনে করেন তাঁরা যাবেন নাকি একবার রামকেলি? না হয় একটু গরম হবে!
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. চৈতন্যচরিতামৃত
২. বাংলার মেলা
৩. পুণ্যভূমি রামকেলি : একটি ঐতিহাসিক মহামিলন ক্ষেত্র
৪.রামকেলি মেলা/ জ্যৈষ্ঠ মাস