রয় কৃষ্ণ যে এ বার এটিকে মোহনবাগানে থাকছেন না, তা ২০২১-২২ মরশুম শেষ হওয়ার আগেই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এটিকে মোহনবাগানের জার্সিতে তিন মরশুম খেলার পর দল ছাড়লেন তারকা ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণ। বলা ভাল, তাঁকে ছেড়ে দিল এটিকে মোহনবাগান। কারণ Football Monk-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রয় নিজেই স্পষ্ট দাবি করেছেন, তিনি ক্লাব ছাড়েননি। তাঁকে রাখেনি এটিকে মোহনবাগানই।
এটিকে মোহনবাগান ছেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রয় কৃষ্ণ কটাক্ষ করে বলেন, ‘এটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি মনে করি, কোচের সিদ্ধান্ত ছিল এটি। যিনি ভিন্ন স্টাইলে খেলতে চেয়েছিলেন এবং আমাকে জানানো হয়েছিল, যে আমি এই স্টাইলে ফিট নই।’
তবে রয় এই চ্যাপ্টার ভুলে এগিয়ে যেতে যান। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘এটি ফুটবলেরই অংশ – আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। এ বার একজন নতুন কোচ এসেছেন এবং সব কিছু বদলে গেছে। তবে ম্যানেজমেন্টকে আমি যথেষ্ট ধন্যবাদ জানাতে পারি, যারা প্রথম সিজনে যখন আমি ওখানে যাওয়ার পর সাহায্য করেছিল।”
ক্লাব ছাড়ার সময়ে তিনি জুয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে রয় বলেন, ‘আমি ওর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি খেলছি না শুনে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’
জুয়ান ফেরান্দোকে নিয়ে রয় মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না, সেটা তাঁর কথায় পরিষ্কার। তবে তিনি তাঁর পুরনো কোচ হাবাসকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। রয় বলেছেন, ‘আমি দু’জনের (হাবাস এবং ফেরান্দো) থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং দু’জনকেই সম্মান করি। তবে আমি হাবাসের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়তাম। কারণ তার সাফল্য বেশি এবং আমি ওর সঙ্গে আড়াই মরশুম কাজ করেছি। এবং আমি গত কয়েক মাস ধরে জুয়ানকে চিনি। আমার কাছে হাবাস ছিলেন একজন বাবার মতো। তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন, আমাকে এগিয়ে যেতে প্রয়োজনে সজরে ধাক্কা দিয়েছেন এবং আমি আমার প্রথম সিজনেউ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এবং দ্বিতীয় মরশুমে আমরা ফাইনালে গিয়েছিলাম।’
মেরিনার্স এবং তাদের সমর্থন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ফিজির তারকা স্ট্রাইকার বলেন, ‘সমর্থকদের এই ভিড় আমার কাছে খুব বিশেষ। আমি ভাগ্যবান যে আমি শেষ ম্যাচে সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণায় গিয়েছিলাম।’
রয় মনে করেন, শেষ খেলার আগে তাঁকে বিদায়ের কথা জানানো হলে ভালো হতো। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, যদি ওরা আমাকে তাড়াতাড়ি বলত, অবশ্যই, আমি বেরিয়ে আসতাম এবং আরও প্রশংসা করতাম এবং শেষ খেলায় ভক্তদের সঙ্গে আরও সময় কাটাতে পারতাম।’
২০১৯-২০ সালে আইএসএলে যাত্রা শুরু রয় কৃষ্ণের। নিজের প্রথম মরশুমেই সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে ১৫টি গোল করে এটিকে-কে তৃতীয় আইএসএল জেতান তিনি। পরের মরশুমে এটিকে ও মোহনবাগান গাঁটছড়া বাঁধলে কৃষ্ণের সবুজ-মেরুন সফর শুরু হয়। তিনি ওই মরশুমেও আবার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৪) হন। তবে এ বার যুগ্ম ভাবে। কৃষ্ণের কাঁধে চেপে এটিকে মোহনবাগান ফাইনালে গেলেও খেতাব জেতা হয়নি। গত মরশুমে অবশ্য কৃষ্ণকে স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি। চোট আঘাতের জেরে নিজের সেরা দিতে পারেননি তিনি।
তা সত্ত্বেও ২০২১-২২ আইএসএল মরশুমে তাঁর সাতটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট ছিল। কিন্তু নিজের সেরা ফর্মে না থাকায়, মরশুম মাঝেই তাঁর দল ছাড়ার জল্পনা শুরু হতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই জল্পনা আরও বাড়ে। অবশেষে ৪৫ ম্যাচে ২৪টি গোল ও ১৩টি অ্যাসিস্টের পর এটিকে মোহনবাগানকে বিদায় জানালেন রয় কৃষ্ণ। তাঁর সঙ্গী ডেভিড উইলিয়ামসও এ মরশুমে ক্লাব ছেড়েছেন। সুতরাং, নতুন মরশুমে নতুন স্ট্রাইকারের খোঁজ করতে হবে সবুজ-মেরুনকে।