Communal harmony: পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, মেয়ের বিয়ে দেবেন কী করে? পাশে দাঁড়িয়ে পাকিজার বিয়ে দিলেন তাপসরা

তিন দিন ধরে চারপাশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মেয়ের বিয়ে দেবেন কী করে? সব আয়োজন কি বৃথা যাবে?

চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন ইদ্দেনেসা মল্লিক। তিন দিন ধরে আত্মীয়-স্বজনও বিশেষ আসতে পারেননি। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার খলিসানির ওই প্রৌঢ়ার মুশকিল আসান হয়ে উঠলেন পাড়ার ক্লাবের তাপস কোদালি, লক্ষ্মীকান্ত কয়াল, উত্তম দোলুইরা। রবিবার তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন ইদ্দেনেসার মেজো মেয়ে পাকিজার। নিমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন থেকে বরকে অভ্যর্থনা, সবশেষে পাকিজাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো— সব কিছুর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে তা পালনও করলেন ওই তিন যুবক।

দিনের শেষে চিন্তামুক্ত ইদ্দেনেসা, ‘‘ওঁরা চলে আসতেই মনে জোর পাই।’’ প্রৌঢ়ার নতুন জামাই শেখ মোক্কাবীর অভিভূত, ‘‘বিয়ে করে স্ত্রীকে যে ঘরে নিয়ে যেতে পারছি, তা তো ওই ক্লাবের সদস্যদের জন্যই। তিন দিন ধরে উলুবেড়িয়া ও আশপাশে যা হল, টিভিতে দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। রবিবার বিয়ে হবে তো!’’

যাঁদের জন্য বিয়ে হল, তাঁদের মধ্যে তাপস বলেন, ‘‘ছোট থেকে এক গ্রামে মানুষ হয়েছি। ওই পরিবারের সঙ্গে সবসময় ক্লাবের যোগাযোগ থাকে। ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের পাশে থাকেন ওঁরা। আর এখন একটা অশান্তির পরিবেশে ওঁরা যখন ভয় পাচ্ছেন, আমরা পাশে থাকব না? ওঁরা বিয়ের দিন পিছিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন। আমরা পিছোতে দিইনি।’’

৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই ইদ্দেনেসাদের বাড়ি। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন আট বছর আগে। তাঁদের তিন মেয়ে, এক ছেলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সামনে একটা সাইকেল জমা রাখার গ্যারাজ চালান ইদ্দেনেসা। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক আগে। মেজো মেয়ে পাকিজার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের শেখ মোক্কাবীরের বিয়ে ঠিক হয় মাসতিনেক আগে। বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করেছিলেন ইদ্দেনেসা।

এ দিকে, পয়গম্বরকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র (এখন সাসপেন্ডেড) নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার থেকেই অবরোধ-গোলমালে উত্তপ্ত হয়েছে উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, খলিসানি-সহ হাওড়ার বেশ কয়েকটি এলাকা। চোখের সামনে সে সব দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ইদ্দেনেসারা।

শনি, রবি— ইদ্দেনেসাদের এলাকায় গোলমাল হয়নি।

কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি করে দেয় প্রশাসন। কী হবে? ইদ্দেনেসা সাহায্য চাইতে যান পাড়ার ক্লাবে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন ক্লাব-সদস্য তাপস, লক্ষ্মীকান্ত, উত্তমরা। তাঁরাই পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ করেন।নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। এসেছিলেন অর্ধেক। তাতে কষ্ট নেই ইদ্দেনেসার। তাপস-উত্তমরা পাশে দাঁড়ানোয় মেজো মেয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারল। এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.