Prosenjit: ‘ইন্ডাস্ট্রি’ নই, নিজেকে ‘ইন্ডাস্ট্রির সিইও’ বলতে পারি: অ-জানাকথায় ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ

গত এক যুগ ধরে ‘বুম্বাদা’র পোশাকি তকমা টলিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’। সংবাদমাধ্যম সাক্ষাৎকারে, লেখায়, ভিডিয়ো ঝলকে অনায়াসে ব্যবহার করে এই বিশেষণ। কবে থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হলেন? তিনি কি নিজে বিশ্বাস করেন তিনি ‘ইন্ডাস্ট্রি’? শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডা ‘অ-জানাকথা’ শুরু থেকেই ‘ব্যক্তি’ প্রসেনজিতের আবেগ, অনুভূতি ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছিল। তাই দ্বিতীয় প্রশ্নই ছিল তাঁর এই বিশেষ তকমা নিয়ে। কী বললেন প্রসেনজিৎ? এই প্রথম তিনি বিষয়টি নিয়ে এত অকপট। তাঁর কথায়, ‘‘লোকে বলে, আমি ইন্ডাস্ট্রি। এটা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অটোগ্রাফ’ ছবির জনপ্রিয় সংলাপ, ‘আমি অরুণ চট্টোপাধ্যায়, আমি ইন্ডাস্ট্রি’। তাই হয়তো এত জনপ্রিয়।’’ আড্ডায় তিনিও প্রশ্ন ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেউ কোনও দিন ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হতে পারে? একা এক জনের পক্ষে কি ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হওয়া সম্ভব?

উত্তর খুঁজতে গিয়ে স্মৃতিতে ডুব নায়কের। তাঁর চোখে ইন্ডাস্ট্রি মানে বাংলা ছবির দুনিয়া। ‘বুম্বাদা’ যখন প্রথম অভিনয়ে তখন সাদা-কালো সিনেমার যুগ। ধীরে ধীরে ছবি রঙিন হয়েছে। অভিনেতার মতে, কর্পোরেট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবলে তখন ‘চেয়ারম্যান’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক। এর পরের প্রজন্ম চিরঞ্জিৎ, তাপস পাল এবং প্রসেনজিৎ স্বয়ং। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবেই কাজ করতে করতে একটা সময় আস্তে আস্তে আমার দায়িত্ব বেড়েছে। সে সব সামলাতে গিয়ে আমি সিইও-র চেয়ারে। একটি সংস্থাকে দাঁড় করাতে গেলে এক জন সিইও যা যা করেন, সেগুলোই করার চেষ্টা করে এসেছি। আমি কখনও বলতে পারি, আমি ‘ইন্ডাস্ট্রি’? আমি টলিউডের সিইও।’’

এ ক্ষেত্রে তাঁর আরও যুক্তি, কেউই একা কোনও কিছুর ‘স্তম্ভ’ হয়ে উঠতে পারে না। ছবির দুনিয়ায় সবাই গুরুত্বপূর্ণ। যে কলাকুশলী ট্রলি বয়ে নিয়ে যান, আলো লাগান, সেট তৈরি করেন, তাঁদের অবদানও অস্বীকার করা যায় না। তাই তাঁর চোখে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি একটি বড় সংস্থা। যেখানে প্রচুর মানুষ কাজ করেন। সংস্থার উন্নতির জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। ‘বুম্বাদা’ও তা-ই করেছেন। তিনি অভিনয়-দুনিয়ার অগ্রজ এবং অনুজদের সম্মতিতেই বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে বাংলা ছবিকে বাণিজ্যিক দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। তাতে সবাই অল্পবিস্তর উপকৃত হয়েছে।


কী ভাবে ধাপে ধাপে ছবির দুনিয়ার উন্নতি দেখেছেন প্রসেনজিৎ? তারও লম্বা ইতিহাস জানিয়েছেন তিনি। সাদা-কালো, কোরো ফিল্ম, ১৬ এমএম হয়ে সিনেমাস্কোপে কাজ তাঁর। অভিনেতার পরিচালনায় প্রথম সিনেমাস্কোপে বাংলা ছবি তৈরি হয়েছিল। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ থেকেই প্রতিটি বাংলা ছবি সিনেমাস্কোপে তৈরি হতে থাকে। এ ভাবেই ধাপে ধাপে ছবির দুনিয়া বিস্তৃত হয়েছে। একটা সময়ের পরে সিনেমাস্কোপ গিয়ে ডিজিটাল ছবির যুগ এসেছে। ২০১০ সালে তৈরি ‘অটোগ্রাফ’ প্রথম সুপারহিট ডিজিটাল ছবি। বিনোদন জগতের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে বদলেছেন ‘বুম্বাদা’ও। ছবির ধারা বদলেছে। বিষয় পাল্টেছে। তিনিও তাঁর অভিনয় বদলেছেন। সে ভাবেই আজ তিনি ‘নায়ক’ থেকে ‘অভিনেতা’। খারাপ লাগলেও দর্শকদের মুখ চেয়ে এই রূপান্তর সহ্য করে নিয়েছেন প্রসেনজিৎ।

একটা সময় তিন থেকে চার শিফটে টানা শ্যুট করে গিয়েছেন। স্টুডিয়ো পাড়াই তখন তাঁর ঘরবাড়ি। তখন বাতানুকূল রূপটান ঘর ছিল না। মেকআপ ভ্যান দূরঅস্ত। দুটো শিফটের অবসরে গাড়ির খোলা ছাদে শুয়ে ঘুমিয়ে নিতেন। খাওয়ার সময়টুকুও তাঁকে দিতেন না প্রযোজক-পরিচালকেরা। নায়ক পেট ভরাবেন কীসে? প্লেটে করে দই-শসা হাজির! ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওই একটি খাবারই তখন খেতে বাধ্য হতেন। কখনও একটু-আধটু তরকারি। যে দিন রাতে বাড়ি ফিরতে পারতেন, সে দিন হয়তো মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার সুযোগ হত তাঁর। এ ভাবেই বছরের পর বছর চলেছে।

দীর্ঘ অযত্ন, অত্যাচারের ফলে গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। বয়স ৫০ ছুঁতেই তাই সাধু সাবধান! চাবুক মেরে নিজেকে বশে এনেছেন প্রসেনজিৎ। বন্দি করেছেন নিয়মের বেড়াজালে। আজও তার অন্যথা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.