বিপ্লবী অনুজাচরণ সেনের মাধ্যমে যুগান্তর বিপ্লবী দলে যোগদান করেন দীনেশচন্দ্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঘা যতীনের নেতৃত্বে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের সময় বালেশ্বরের গুপ্ত ঘাঁটির পরিচালক শৈলেশ্বর বোস যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে অনুজাচরণ রাত জেগে সেবা করেন। এরপর দলনেতার নির্দেশে তিনি বগুড়া ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় বিপ্লবী সংগঠনের কাজে বর্তী হন। লাঠি খেলার শিক্ষক হিসেবে “ছাত্রী সংঘ” প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন।
টেগার্ট হত্যা চেষ্টা এবং ডালহৌসী স্কোয়ার বোমা মামলাঃ- ১৯৩০ সালের ২৫ আগস্ট তারিখে অনুজাচরণ সেন ও দীনেশচন্দ্র মজুমদার অত্যাচারী কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট-এর গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করেন। টেগার্ট বেঁচে যান কিন্তু দীনেশ মজুমদার ধরা পড়েন। অনুজাচরণ ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিচারে দীনেশ মজুমদারের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। এই উপলক্ষে পুলিস বহু বাড়ি খানাতল্লাশ করে এবং বহু লোককে গ্রেপ্তার করে। এই সম্পর্কে শোভারানি দত্ত, কমলা দাশগুপ্ত, শৈলরাণী দত্ত, ডা. নারায়ণ রায়, ভূপালচন্দ্র বসু, অদ্বৈত দত্ত, অম্বিকা রায়, রসিকলাল দাস, সতীশ ভৌমিক, সুরেন্দ্র দত্ত, রোহিণী অধিকারীসহ অনেকে ধৃত হন। বিচারে নারায়ণ রায় ও ভূপাল বসু ১৫ বছরের দ্বীপান্তর, সুরেন্দ্র দত্ত ১২ বছর, রোহিণী ৫ বছর ও সতীশ ২ বৎসর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং অন্যান্য সকলে মুক্তি পান। তারা সকলেই তরুণ বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৩২ সালে মেদিনীপুর জেল থেকে অপর দুই বিপ্লবীসহ পালাবার সময় পা ভাঙা সত্ত্বেও দীনেশচন্দ্র আত্মগোপনে সমর্থ হন। আত্মগোপনকালে কুলির কাজও করেছেন। অবশেষে চন্দননগরে তাকে আশ্রয় দেন বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র ঘোষ।
ওয়াটসন হত্যা চেষ্টা ও কুইন হত্যাঃ- ১৯৩২ সালে তার নেতৃত্বাধীনে দুবার ওয়াটসন হত্যার চেষ্টা হয়। চন্দননগরের পুলিস কমিশনার কুইনের নেতৃত্বে একদল পুলিস বিপ্লবীদের তাড়া করলে দীনেশের গুলিতে কুইন নিহত হন এবং তিনি বিপ্লবীদের নিয়ে আত্মগোপন করেন।
দলের পুনর্গঠন ও কর্নওয়ালিস স্ট্রিট খণ্ডযুদ্ধঃ- ১৯৩২ সালের দিকে পুলিসি অত্যাচার ও ব্যাপক গ্রেপ্তারের ফলে দলের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি দলের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করেন। গ্রিন্ডলে ব্যাংকের জনৈক কর্মচারীর সাহায্যে টাকা সরিয়ে সেই টাকায় অস্ত্র কেনার চেষ্টা হয়। এসময় তিনি কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে নারায়ন ব্যানার্জীর বাড়িতে থাকতেন। ১৯৩৩ সনের ২৫ মে পুলিস সন্ধান পেয়ে বাড়িটি আক্রমণ করলে উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় চলে। দীনেশ, জগদানন্দ ও নলিনী দাস শেষ বুলেট পর্যন্ত লড়াই করে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। বিচারে তার প্রাণদণ্ডাদেশ এবং অপর দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
জন্ম
দীনেশচন্দ্র মজুমদারের জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগণার বসিরহাটে। তার পিতার নাম পূর্ণচন্দ্র মজুমদার। ১৯২৮ সনে বি.এ. পাশ করে আইন শিক্ষা শুরু করেন। আই.এ. পড়ার সময় যোগাভ্যাস করতেন, পরে সিমলা ব্যায়াম সমিতিতে লাঠি ও ছোরা খেলা শিক্ষা করেন।
তথ্য সংগৃহীত – প্রতাপ সাহা