হিমালয়ের বরফে থাকা পোকার ডিম জড়িয়ে থাকে কিরা জারি, পাঁচ কেজির দাম সোয়া কোটি

কিরা জারি। নামটা কি আপনার চেনা ? শুনেছেন কি কখনও ইয়াসের গুম্বার নাম ? আন্দাজ করতে পারবেন আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি কিরা জারি বা ইয়াসের গুম্বার দাম কত?

দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা বলছেন, এক কেজি কিরা জারি ছত্রাকের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দাবি, এই দাম আরও বেশি। ভাবছেন তো, হঠাৎ এই দুর্মূল্য ছত্রাকের প্রসঙ্গ কেন টেনে আনা?

আসলে নেপাল ও ভারতের একমাত্র অরুণাচল প্রদেশের হিমালয় সন্নিহিত অঞ্চলে মেলা এই দুর্মূল্য ছত্রাক পাচার করতে গিয়ে সোমবার গভীর রাতে এসএসবির জালে পড়ল তিন ভুটানি নাগরিক। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ কেজি কিরা জারি ছত্রাক। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বলে দাবি করেছেন এসএসবির আধিকারিকরা। অভিযানে তাদের সঙ্গে সামিল ছিলেন বনদফতরের আধিকারিকরাও।

এই কিরাজারি ছত্রাকের বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ বলে দাবি করেছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। তাঁরা জানান, গোপন সূত্রে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন, ভূটানের জয়গাঁও সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হবে এই কিরা জারি ছত্রাক। সেই মতোই এসএসবির ৫৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা ফাঁদ পেতেছিলেন জয়গাঁ সীমান্তে। গভীর রাতে এখান থেকেই পাকড়াও করা হয় ছোটেন নামগেল, দোরজি কিয়াং ও কোম্বু দোরজি নামে তিনজনকে। এরা প্রত্যেকেই থিম্পুর বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এদের কাছ থেকেই মেলে পাঁচ কেজি কিরা জারি ছত্রাক। উদ্ধার হওয়া এই দুর্মূল্য ছত্রাক ও ধৃতদের হ‍্যামিলণ্টনগঞ্জ বনদফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এসএসবির ৫৩ নম্বর ব‍্যাটেলিয়নের কমান্ড্যান্ট অরবিন্দ কুমার।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অভয়পদ দাস বলেন, ‘‘কিরা জারিকে না শুধু পতঙ্গ বলা যায়, না বলা যায় শুধু ছত্রাক। আসলে এই দুইয়ের মিলনেই সৃষ্টি এর। হিমালয়ের বরফ ঢাকা প্রান্তরে এক ধরণের লম্বা আকৃতির পোকা দেখা যায়। সেই পোকা যখন ডিম পারে তখন সেই ডিমকে পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে এই বিশেষ ধরণের ছত্রাক। তার থেকেই জন্ম কিরা জারি ছত্রাকের। একমাত্র নেপাল ও ভারতের অরুণাচল প্রদেশ সংলগ্ন হিমালয়েই মেলে কিরা জারি বা ইয়াসের গুম্বা। প্রচলিত বিশ্বাস, যৌবন ধরে রাখতে এর জুড়ি নেই। তাই বাজার দাম খুবই চড়া। শুধুমাত্র গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যায়। বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ।’’

বন দফতরের কর্তারাও জানান, ক্যান্সার, ক্রনিক হেপাটাইটিসের মতো বেশ কিছু রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয় এই কিরা জারি ছত্রাক। কিন্তু বর্তমানে দেশের খুবই সীমাবদ্ধ কিছু জায়গায় এর খোঁজ মেলে। তাই বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চিনে সোনাও তিনগুণ দাম মেলে এই ছত্রাকের। তাই পাচারকারিদের সবসময়ের লক্ষ্য থাকে কিরা জারি। সেই কিরা জারির পাচার রুখে দিয়ে পেরে রীতিমতো উৎফুল্ল হ্যামিলটনগঞ্জের বন বিভাগের কর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.