আইপিএল শুধু নতুন ক্রিকেটার নয়, অধিনায়কও চেনায়। এ বারের আইপিএল যেমন চিনিয়ে দিল হার্দিক পাণ্ড্যকে। গুজরাত টাইটান্সকে নেতৃত্ব দিলেন। একে বারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। আইপিএল জেতালেন। ইডেনে ১৮৯ রান তাড়া করার সময় অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন। ঠান্ডা মাথায় উইকেটের এক দিক আটকে রাখেন। উল্টো দিক থেকে ডেভিড মিলার রান তোলেন। ফাইনালে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং পরিবর্তন করে রাজস্থান রয়্যালসকে আটকে দিলেন। আইপিএল হয়ে রইল হার্দিকময়।
গোটা আইপিএলেই এক পরিণত অধিনায়ক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন হার্দিক। মাত্র তিন বছর আগেও এতটা পরিণত হার্দিককে দেখা যায়নি। কর্ণ জোহরের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হার্দিক। সেখানে নারীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য সারা দেশে সমালোচিত হয়। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা তিরস্কার করেন। ভারতীয় দল থেকে নির্বাসিত হন। সেই হার্দিকই পাল্টে গিয়েছেন অধিনায়কত্ব পেয়ে।
ইডেনে জিতে হার্দিক বলেন যে, ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির থেকে অনেক কিছু শিখেছেন তিনি। ধোনির নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটে হার্দিকের। ফাইনালে উঠে হার্দিক বলেন, “মাহি ভাই আমার জীবনে খুব বড় ভূমিকা নেয়। ও আমার দাদা, বন্ধু এবং পরিবারের অংশ। আমি ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি।” মাঠে হার্দিক যে ভাবে শান্ত মাথায় নেতৃত্ব দেন তাতে ধোনির সঙ্গে তাঁর মিলও পাওয়া গিয়েছে।
কঠিন পরিস্থিতির সামনে কখনও হার্দিককে চিন্তিত হতে দেখা যায় না। ঠান্ডা মাথায় স্কোর বোর্ড সচল রাখেন হার্দিক। যে বিধ্বংসী হার্দিককে দেখা যেত, সেই তিনিই দলের প্রয়োজনে শান্ত হয়ে যাচ্ছেন। ইডেনে ৪০ রানের ইনিংসে পাঁচটি চার মারলেও, ছয় মারতে দেখা যায়নি হার্দিককে। দলের এমন ইনিংসই প্রয়োজন ছিল সেই সময়।
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোয়েব আখতার বলেন, ‘‘হার্দিক সত্যি নিজের ছাপ রাখছে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসাবে কড়া নাড়তে শুরু করেছে সে। কেউ জানে না কত দিন রোহিত নেতৃত্ব দেবে।’’ তবে সেই কাজ যে কঠিন হবে তা জানেন শোয়েব। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ নয়। হার্দিক কিন্তু অধিনায়ক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। কিন্তু বোলিং এবং ফিটনেস নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। অলরাউন্ডার হিসাবে খেললে ভারতীয় দলে ওর জায়গা পাকা। শুধু ব্যাটার হিসাবে খেললে জায়গা হবে না।’’
এ বারের আইপিএলে গ্রুপ পর্বে ১৪টি ম্যাচের মধ্যে ১০টি জেতে গুজরাত। কিন্তু মরসুমের শুরুতে হার্দিককে অধিনায়ক করার পর অনেকেই চোখ কুঁচকেছিলেন। অধিনায়ক হার্দিককে তো সেই ভাবে কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু আইপিএল তো চমক দেয়। আইপিএলই তো চিনিয়েছিল অলরাউন্ডার হার্দিককে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স নজর কাড়ে বলেই তো জাতীয় দলের দরজা খোলে হার্দিকের। সেই আইপিএলই এ বার চেনাল অধিনায়ক হার্দিককে। কিন্তু টিভিতে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মেয়েদের সম্পর্কে নিম্নরুচির মন্তব্য করার জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ক্ষমা চেয়ে ছাড় পান।
ভুল মন্তব্য, চোট, অস্ত্রোপচার, এমন সব বাধা টপকে আসা হার্দিক হয়ে উঠলেন। নিজেই বলেন, “আমার জীবনের সব কিছুতে একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছি। অধিনায়ক হওয়ার আগেও আমি চেষ্টা করেছি যে কোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে। এটা করাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছিল। দ্রুত সব কিছুর মধ্যে ঢুকে যাওয়ার থেকে ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভেবে কোনও কিছু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
অধিনায়ক হওয়ার পর হার্দিক বলেছিলেন ধোনি, বিরাট এবং রোহিতের থেকে অধিনায়কত্ব শিখেছেন। হার্দিক বলেন, “বিরাটের থেকে আমি আগ্রাসন শিখতে চাইব। যে আবেগ, শক্তি ও মাঠে দেখায় সেটা অভাবনীয়। মাহি ভাই শান্ত। যে কোনও পরস্থিতিতে ও এক ভাবে থাকতে পারে। রোহিতের থেকে শিখতে চাই ও যে ভাবে ক্রিকেটারদের উপর সিদ্ধান্ত নিতে ছেড়ে দেয়।”
এই তিন জনের মিশেল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন হার্দিক। তাঁর নেতৃত্বে খেলা ডেভিড মিলার বলেন, “গুজরাত দলে আমরা সবাই জানি কার কী দায়িত্ব। সেই জন্য নিজেদের সেরা খেলাটাও খেলতে পারি।” একটা দল তৈরি করতে পেরেছেন হার্দিক। যে দল যে কোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ জিততে পারে। শেষ বল অবধি সেই দলের উপর ভরসা রাখা যায়। ছন্দ হারানো খেলোয়াড়রা এই দলে এসে ছন্দ খুঁজে পান। এমন অধিনায়কের নেতৃত্বেই তো খেলতে চাইবেন ক্রিকেটাররা।
এ বারের আইপিএল চেনাল তেমনই এক অধিনায়ককে। ৩৪ বছরের রোহিত নেতৃত্ব ছাড়লে পরবর্তী অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে লোকেশ রাহুল, শ্রেয়স আয়ারদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঢুকে পড়লেন হার্দিকও।