কোভিড-১৯ নিয়ে চিনে নতুন করে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বিগত কয়েক সপ্তাহে। এই আবহে বিখ্যাত টেক কোম্পানি অ্যাপেল চিনের বাইরে ব্যবসা স্থানান্তরের কথা ভাবছে। ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মার্কিন সংস্থাটি তার কিছু চুক্তি ভিত্তিক উৎপাদককে বলেছে যে তারা চিনের বাইরে তাদের উৎপাদন বাড়াতে চায়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সংস্থাটি এর জন্য ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো দেশে যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় কোম্পানি অ্যাপেল কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল? এ বিষয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হচ্ছে। আসলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাতে চিন পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে সাহায্য করছে। এরপর অনেক পশ্চিমা কোম্পানি চিনের ওপর তাদের উৎপাদন নির্ভরশীলতা কমাতে চায়। এছাড়াও, চিনে কোভিডের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক শহরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার কারণে এই সংস্থাগুলিও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপেলের আইফোন, আইপ্যাড এবং ম্যাকবুক ল্যাপটপের ৯০ শতাংশই চিনে তৈরি। এপ্রিল মাসে অ্যাপেলের সাপ্লাই চেনের সাথে যুক্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক বলেছিলেন, ‘আমাদের সাপ্লাই চেন সত্যিই বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে, এবং সেই কারণেই আমাদের পণ্য সর্বত্র তৈরি করা হয়। আমরা ক্রমাগত অন্যান্য দেশে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পথ খুঁজছি।’
চিনে করোনা সংক্রান্ত নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সাংহাই ও অন্যান্য শহরে লকডাউন জারি করা হয়েছে। যার কারণে অনেক কোম্পানির সাপ্লাই চেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিনে চলমান বিধিনিষেধের কারণে, অ্যাপেল গত ২ বছর ধরে সেখানে তাদের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠাতে পারছে না। এর জেরে কোম্পানিটি চিনে তাদের উৎপাদন সাইট সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না।
এদিকে মনে করা হচ্ছে চিনের থেকে ব্যবসা গোটানোর পাশাপাশি অ্যাপেল ভারতের দিকে নজর ঘোরাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে উভয় দেশের জনসংখ্যা প্রায় সমান এবং উভয় দেশেই অ্যাপেল কম খরচে উৎপাদন করতে পারবে। এই বিষয়ে অবগত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অ্যাপেল কোম্পানি ভারতে তাদের উৎপাদন ও ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তার কিছু সরবরাহকারীর সাথেও আলোচনা করছে। উল্লেখ্য, ভারতে বেশ কিছু কারখানা আছে যেখানে আইফোন তৈরি হয়। গতবছর ভারতে অ্যাপেলের মোট উৎপাদনের ৩.১ শতাংশ উৎপাদিত হয়। এবছর সেই উৎপাদনের হার বেড়ে ৭ শতাংশ ছুঁতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আবহে ধীরে ধীরে চিন থেকে সরে এসে ভারতে নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে পারে অ্যাপেল।