আমফানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে কি সত্যি প্রস্তুত কলকাতা

শুক্রবার ২০ মে। ঠিক দুই বছর আগে, ২০২০ সালে, করোনা আর লকডাউনের আবহের মধ্যেই কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল ভয়ঙ্কর আমফান। কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় এক সপ্তাহের মত বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। একাধিক জায়গায় জল জমে তৈরি হয়েছিল গুরুতর সমস্যা। আর শহর জুড়ে ইতিউতি গাছ পড়ে গিয়েছিল। বলতে গেলে, ১৯৭৮ এর বন্যার পর এত ভয়ানক অবস্থা কলকাতা দেখেনি বললেই চলে। তার সাথে সাথে সর্বত্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা তৈরি করেছিল চূড়ান্ত অরাজকতা। বাড়িতে খাওয়ার জল নেই, বিভিন্ন জায়গায় ঘরে জলে ঢুকে গিয়েছে, মোবাইলে চার্জ নেই, মোবাইলের টাওয়ার দূর অস্ত, ইন্টারনেট ভিনগ্রহের বলে মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মীদের দেখলেই বিক্ষোভ, করোনা পরীক্ষা শিকেয়— আমফান পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ রীতিমত নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল কলকাতাবাসীকে।

কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সন্ধে সাতটা থেকে শুরু হয় আমফানের তাণ্ডব। ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডব দেখেছিল সেদিন। তবে শুধু কলকাতা নয়, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কোথাও লেগেছিল দুই মাস আর সুন্দরবন পিছিয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর। তবে আমফান কঠিন প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল তার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই কোনও প্রস্তুতিই পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। কিন্তু তাই বলে প্রস্তুতিতে খামতি রাখাও চলে না। কলকাতা পুরনো শহর, শহরের দক্ষিণ দিক বাদ দিলে অন্যত্র অনেকটাই পুরনো। ঘর বাড়ি থেকে আরম্ভ করে রাস্তা – আধুনিকতার রূপরেখা স্পষ্ট নয়। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতির জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞান সম্মত অ্যাকশন প্ল্যান। কিন্তু আমফানের পূর্বে কি সত্যি এই ধরনের কোন অ্যাকশন প্ল্যান ছিল? যেভাবে শহরের ইতিউতি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছিল, অচিরেই বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এছাড়া, ব্রিটিশ আমলের নিকাশি ব্যবস্থা আজকের দিনে একদম অচল। বর্ষাকালের আধ ঘণ্টার সাধারণ বৃষ্টিতেই যেখানে জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের রাস্তা, সেখানে টানা এক দিন যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতি যা হবে, শিহরণ জাগানোর মত। যেখানে সেখানে বহুতল বানানোর ফলে নিকাশি ব্যবস্থার দফারফা হয়েছে অনেকটাই। এর সাথে গঙ্গা নাব্যতা হারানোর ফলে জলধারন ক্ষমতা হয়েছে অনেকটা, যা বিপজ্জনক সামনের দিনের জন্য।

একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের যথেষ্ট বিপদ রয়েছে। তাই দেরি না করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে দ্রুত ভাবনা চিন্তা করা উচিত। আমফান কিন্তু অশনি সংকেত ছিল, সামনের দিনে কলকাতা বিপদের মুখে পড়লে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.