গত কাল মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদনিপুরে প্রশাসনিক সভা করেছেন আমলা, সচিব, নিজের দলের বিধায়ক, মন্ত্রী এবং পুলিশকে নিয়ে ।
এক একটি প্রশাসনিক সভা সংগঠিত করতে সরকারের খরচ কত হয় ? কোন ধারণা ?
আমার এক সময় ধারণা ছিল কয়েক লাখ খরচ হয় । ধারণাটা ভেঙে ছিল দুটি সভার বিল হাতে পাওয়ার পর । নবান্নের এক যুগ্ম সচিবের সই করা বিল । ২০১৬ সালে নারায়ণগড়ে মুখ্যমন্ত্রীর এক দিনের সফরের জন্য খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার কিছু বেশি । ২০১৯ এর ১২ জুলাই জল ভর জল ধর দিবস পালনের জন্য আমলা, মন্ত্রীদের নিয়ে মমতা জোড়াসাঁকো থেকে মেয়ো রোড হেঁটেছিলেন । দফতরের খরচ হয়েছিল সাজগোজ, খাওয়া, মাইক্রোফোন, উত্তরীয় বাবদ ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা । পেমেন্ট করা হয়েছিল নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে যেটি চালান প্রভাবশালী ভাইপোর খুব কাছের এক সংস্থা ।
দুটি বিলের প্রতিলিপি নবান্ন সূত্রেই পেয়েছিলাম । প্রতিলিপি ফেস বুকে তুলেও দিয়েছিলাম প্রমাণ হিসেবে ।
আমার ধারণা বদলে ছিল সেই থেকেই । যে সূত্র ধরে আজও জানলাম মুখ্যমন্ত্রীর এখনকার যে কোন প্রশাসনিক সভায় বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি । এলাহি আয়োজন, আমলা থেকে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক তাঁদের আপ্যায়ন, গাড়ি, ভোজন, এমনকি সাংবাদিকদের রাজসিক আপ্যায়ন, প্রচার, সম্প্রচার, লাইভ সম্প্রচার, জেলা জুড়ে ১৫ দিন ধরে প্রচার, প্রায় হাজার তিনেক আস পাশের জেলা থেকে পুলিশ সিকিউরিটি, তাদের গাড়ি, আগের রাত থেকে থাকা, তিন বেলার খাওয়া, মুখ্যমন্ত্রীর হেলিপ্যাড নির্মাণ সব কিছুই এই সাড়ে তিন কোটির যজ্ঞের মধ্যে ধরা হয় । শুধু মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার খরচ আলাদা । কলকাতা থেকেই প্রায় আড়াইশো গাড়ি গেছে জেলায়, তার ড্রাইভার, তেল, খাওয়া, ওভার টাইম মিলে খরচ অনেক সময় বরাদ্দের বাইরে চলে যায় ।
এর বাইরে আছে বড় সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন । আজই দেখলাম পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন প্রায় সব কাগজে । কাজের ফিরিস্তি । তাতে হিসেব করে দেখলাম প্রায় সোয়া এক কোটির শ্রাদ্ধ ।
সাড়ে তিন কোটি + সোয়া এক কোটি = চার কোটি ৭৫ লক্ষ এক দিনে উড়ে গেল একটা সরকারের । আমার সূত্রের করা এবং আমার করা হিসেবে ।
এবার রিয়ালিটিতে আসুন । এইমুহুর্তে
সরকারি দফতরে পৌঁছানো রিপোর্ট বলছে –
১. জলপাইগুড়িতে ৩৯৩৬ টি শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ির মধ্যে খরচের বিল না মেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৭০ টি কেন্দ্র ।
২.উত্তর দিনাজপুরে র ৩৭৮৭ টি অঙ্গনওয়াড়ির মধ্যে খরচ না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ৯০ টি ।
৩. পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে বন্ধ হয়ে গেছে ৫৩৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র । দু মাস তাদের বকেয়া পড়েছে ৪২ লক্ষ টাকা ।
৪. পশ্চিম বর্ধমানের অঙ্গনওয়াড়ির বহু কেন্দ্রে বন্ধ হয়ে গেছে ডিম দেওয়া ।
৫. মুর্শিদাবাদেও অবস্থা আরও সঙ্গীন । খাবার কেনার টাকায় টান । ত্রাহি ত্রাহি রব ।
#
পাশাপাশি দুটি চিত্র রাখলাম । মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারের খিদে মেটাতে এক দিনে সরকারের গলে গেল একদিকে চার কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা । ওদিকে অঙ্গনওয়াড়ির বাচ্চা গুলো শুকনো মুখে দিন কাটাচ্ছে বহু জেলায় এই গ্রীষ্মের তাপদাহে ।
খেয়াল করুন পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন (ছবি নীচে) পেয়ে এই বিষয়ে একদম মুখে লিউকোপ্লাসট বাংলা সংবাদপত্রগুলোর । তথাকথিত সুশীল সমাজ সব কিছু দেখেও কি অদ্ভুত ভাবে গভীর কোমায় আচ্ছন্ন ।
আর সেই সুযোগে এপাং ওপাং ঝপাং আত্মপ্রচারে ট্রেজারির টাকা ফাঁক করে চলেছেন দেদাং ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)