বহরমপুরের ছাত্রী খুনের ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। মৃতা সুতপার পরিবারের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁদের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত ছাত্রী খুনে অভিযুক্ত সুশান্ত। খুনের আগেও বার কয়েক হুমকি দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, সুশান্তের পরিবারের তরফে ‘প্রতারণা’ ও ‘বেইমানি’-র অভিযোগ আনা হয়েছে সুতপার পরিবারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই সামনে এসেছে একটি ২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ভিডিয়োবার্তা। যা শনিবার থেকে নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিয়োয় সুশান্তকে আবেগাপ্লুত হয়ে বেশ কিছু কথা বলতে শোনা গিয়েছে কোনও এক মহিলার উদ্দেশে। সুশান্তের পরিবারের দাবি, ওই মহিলা আর কেউ নন, সুতপা চৌধুরী। যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
ভিডিয়োর শুরুতেই আবেগতাড়িত হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা যায় সুশান্তকে। ধরা গলায় তিনি বলতে থাকেন, ‘‘পাঁচ মাস হয়ে গেল ভাল করে কথা বলিস না। পাঁচ মাসে একটা দিনও ভাল কাটেনি (আমার)।’’ তার পর আবার বলেন, ‘‘কী করে থাকব তোকে ছাড়া! মিডল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে অভিনয় করে কাঁদতে পারি না। হাসিখুশি হয়ে বললে বিষ খেয়ে মরে যেতাম। আমি কী করে থাকব? তোকে বড় ভালবেসেছিলাম। কান্না কি তোর অভিনয় মনে হয়?’’ এই ভিডিয়োয় সুশান্তকে বার বার কাঁদতে দেখা যায়। তাঁর পরিবারের দাবি, সম্পর্ক হারানোর যন্ত্রণা থেকে তীব্র মানসিক অবসাদে সুশান্ত যে ভুগছিলেন, এই ভিডিয়ো তারই প্রমাণ। আসলে কোনও ভাবেই তিনি মেনে নিতে পারেননি যে সুতপা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না।
সুশান্তর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ‘‘সুশান্তের সঙ্গে সুতপার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। অন্য এক নতুন সম্পর্কের টানে আমাদের ছেলেকে মানসিক ভাবে খুন করে দিয়েছিল আগেই (সুতপা)।’’ ইংরেজবাজারে সুতপা ও সুশান্ত, দু’জনেরই এক বন্ধু বলেন, ‘‘টিউশন পড়ার সময় থেকেই সুতপা ও সুশান্তের সম্পর্কের সূচনা হয়। যা কয়েক মাস আগেও সবার ঈর্ষার কারণ ছিল।’’
গত সোমবার সন্ধ্যায় নৃশংস ভাবে খুন করা হয় মালদহের ইংরেজবাজারের কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে। বহরমপুরের অভিজাত এলাকা গোরাবাজার সুইমিং পুলের গলিতে সুশান্তের অতর্কিত আক্রমণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন উদ্ভিদবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সম্পর্কের অবনতির কারণেই এই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
কেন সুতপার মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন এল, কেনই বা সুশান্তের সম্পর্ক বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যে লুকিয়ে বিয়ে করার তথ্য সামনে এনেছে সুশান্তের পরিবার। বিশিষ্ট মনোবিদ বিএন মল্লিকের মতে, ‘‘সাধারণত দীর্ঘ দিন মানসিক ও শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, সেই সম্পর্কের হঠাৎ বিচ্ছেদে এই ধরনের তীব্র বিকার ও শারীরিক মানসিক যন্ত্রণা শুরু হয়। যার পরিণতিতে এমন ভয়াবহ ফলাফল হতে পারে।’’