উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দত্তপুকুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবাধই উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক ) এর ১৭৫ বছরের পূর্তি অনুষ্ঠান। কলকাতার হিন্দু স্কুলের পরে এটিই হল দ্বিতীয় সবথেকে পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান – যা এখনো টিকে আছে। আজো বিদ্যালয়ের বুকে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা আছে ভারতবর্ষের আবহমান কালের মূল মন্ত্র – তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ! আমকে অন্ধকারের থেকে আলোতে নিয়ে চলো। বৃহদারণ্যক উপনিষদের যে পাবমান মন্ত্রটিকে একদিন নিজেদের ক্ষমতায় অর্জন করেছিল আদি ভারতীয় সভ্যতা‚ তাকেই নিজেদের লক্ষ্য বানিয়ে এগিয়ে চলেছে এই নিবাধই উচ্চ বিদ্যালয়।
এই নিবাধই উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে জুড়ে আছে এক দীর্ঘ আর গৌরবান্বিত ইতিহাস। বাঙালির নবজাগরণের সময়ের ইতিহাস বহন করছে এই বহু মনীষীর পদধূলিধন্য এই বিদ্যালয়টি।
সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তারের উদ্দেশ্যে সমাজ সংস্কারক কালীকৃষ্ণ দত্ত এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মে। নিবাধই গ্রামের কেন্দ্রস্থলে এক বটগাছের তলায় একটি চালাঘরে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কাজে কালীকৃষ্ণ দত্তের অন্যতম সহায়ক ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গৃহশিক্ষক সাতকড়ি দত্ত মহাশয়। যদিও তখন এই বিদ্যালয়ের নাম ছিলো নিবাধই অ্যাংলো সংস্কৃত বিদ্যালয় ( Nebadhai Anglo Sanskrit School )!
এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার খবরে সারা বাংলা প্রেসিডেন্সি জুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। খোদ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এই খবরে খুশি হয়ে তার সংবাদ প্রভাকরে ( বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র ) এই খবর প্রচার করেন। এছাড়াও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্ববোধনী প্রত্রিকাতেও এই খবর প্রকাশিত হয়। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে এই বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছিলেন। কবি ও সাহিত্যিক অক্ষয়কুমার দত্ত এই বিদ্যালয়ের বহু অনুষ্ঠানে নিজে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত থাকতেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – দুইজনেই নিয়মিত আর্থিক সাহায্য পাঠাতেন এই বিদ্যালয়ে।
এই অনুষ্ঠান নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীদের উৎসাহ – আগ্রহ ছিলো চোখে পড়ার মতো। সম্পূর্ণ স্কুল চত্ত্বরকে ফুল ও আলোকসজ্জায় সাজানো হয় ছাত্রছাত্রীদের তরফ থেকে।
৭ই মে শনিবার সকালে প্রভাতফেরির মাধ্যমে ১৭৫ বছরে পদার্পনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরবর্তীতে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিবন্ধনের পর হয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাননীয় শ্রী রথীন ঘোষ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আমডাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রফিকুর রহমান। অতিথিরা দর্শকদের প্রতি মনোগ্রাহী বক্তব্য রাখেন। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তন শিক্ষকদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি মূর্তিও স্থাপিত হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে।
এছাড়া রবিবার অর্থাৎ ৮ তারিখেও প্রাক্তন ছাত্রলীগের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।