পসারিনী, ওগো পসারিনী,

কেটেছে সকালবেলা হাটে হাটে লয়ে বিকিকিনি।

    ঘরে ফিরিবার খনে

    কী জানি কী হল মনে,

            বসিলি গাছের ছায়াতলে--

    লাভের জমানো কড়ি

    ডালায় রহিল পড়ি,

            ভাবনা কোথায় ধেয়ে চলে।

হাট , এখানে ভ্রমণ করার মধ্যে একটা বেশ মজা কাজ করে। তবে, সেটা উপভোগ করা যায় তখনি যখন হাট থাকে ক্রেতা বিক্রেতায় পরিপূর্ণ , সেখানে যখন লক্ষ্মীর আনাগোনা থাকে অহরহ। এটাই তো হাটের সজীবতা। গ্রামের হাটগুলোতে এমন প্রাণোচ্ছল সজীব দৃশ্য সর্বদা দেখা যায় না।বিশেষ করে রাঢ় বঙ্গের পুরুল্যার হাটে। পুরুল্যায় হাজারে হাজারে অকর্ষণযোগ্য পাথুরে , কাঁকুরে জমি পড়ে আছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে সেখানে সকল কিছু যেন উড়ান দেয়। আগে যাও জঙ্গল ছিল এখন আর ভীতি জাগানো ঘনত্ব নেই। অনেক জায়গাই ধূ ধূ প্রান্তর। পুরুল্যা গাঁ ঘরে তাই ভরসা বর্ষা কাল। বর্ষার জলে রোয়া ধানই সব কিছু। তবে এখন কোথাও কোথাও অল্পস্বল্প বোরো ধানের চাষ হচ্ছে এবং যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা যারা করতে তারা লিরনের দিনে কিছু শাক সবজি ফলানোর চেষ্টা করে। সেই সব সবজি , আনাজ নিয়ে তারা গিয়ে বসে গ্রামের সাপ্তাহিক হাটে। এখন তো পুরুল্যায় বাস যোগাযোগ পূর্বের তুলনায় ভালো। তাই ছোট ছোট চাষীরা সবজি ঝুড়ি করে বাসের মাথায় চাপিয়ে আরেকটু সদরে পৌছে দিতে চেষ্টা করে। সেখানে রোজ বাজার বসে আর দামে পড়তা হয় ভালো। এমনকি, বাস না পেলে সাইকেল কিংবা ভ্যান রিক্সা করে সদরে যায় অপেক্ষাকৃত জমাট বাজার পেতে।

আসলে কি জানেন তো ? পুরুল্যা খরা প্রবণ। খরা প্রবণ নানা কারণে , যেমন – স্বল্প বৃষ্টিপাত, পুরুলিয়ার ভূপ্রকৃতি, বৃক্ষের অপ্রাচুর্যতা এবং সেই সঙ্গে বৃক্ষ নিধন, কর্ষণ যোগ্য ভূমির অভাব এবং কৃষকদের একফসলী নির্ভরশীলতা, জলসেচের অব্যবস্থা ইত্যাদি। পুরুল্যার কৃষিজ অর্থনীতি দুর্বল। তাই কৃষি নির্ভর মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত আটপৌরে। এখানে মানুষ এখনো বংশানুক্রমে এত আকাল, দারিদ্র বহন করে আসছে যে , নাগরিক জীবনের বিলাসিতা , এমনকি স্বাচ্ছন্দ্য তাদের কল্পনাতীত। শিক্ষা , স্বাস্থ্যের ভাবনাও কখনো কখনো বাহুল্য হয়ে দাঁড়ায়। দুবেলার খাবার যোগাড় করার জন্য দিনভোর খাটাখাটনি তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই কঠোর বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্ন দেখাও বিলাসিতা। খাদ্যাভাব, অনটন , রোগশোক ইত্যাদি এদের গৃহপালিত জীব। পুরুল্যার গাঁ গেরামের হাট ঘুরলে এসব মানুষের অসম্পন্ন জীবনের করুণ ও বেদনাময় চিত্রটির আভাসও পাবেন। কেবল পুরুল্যা কেন? ভারত জুড়ে হাট, মেলায় এসব আভাস পাওয়া যায়।

চত্তির থেকে জষ্ঠী মাস , লিরনের মাস বটেক ঠাওর। এ তিন মাস হাটে জাঁক থাকে না। আগেও #লিরন শব্দটি ব্যবহার করেছি। এখন আপনাদের প্রশ্ন হতেই পারে এই লিরন কি? লিরন না জানলে পুরুল্যার হাটকেও বুঝতে পারবেন না।

চইত লিরন চিহঢ় কটুস
রঁগনির রঁঞায় রঞায় ঞাতরাক
দরকে ভুনি লঢ়িমাঁস চিরায়
ডহরে বিঁড়ল কসুম-কসম
পসমেক ফুল ডুড়কে বন
জুঁঞাইল তেঁতলাক উদল
খামিধ কঁহুরে
সাঁঞাগি সাঁঞসাঁঞ পড়কিনি ভখ
ভেবায় খাসি ছাগল
পিদাঁড়েক সাল ফেগড়া আসমানি
ঝাঁউরে মুজি ফল
খাদান হড়হড়ি কড়কচ
সিঁঞাইড় সিঁঞাইড় কটাস চিল-সিকরা
ভুলুকে ভুলুকে
জুমঢ়া সলগে আলিকুলি কুইল গাচ
বাইসামেক ভাত বাটি আহাইনাক
ছলাচইল কুলহি
ভিঢ়িক ভিঢ়িক চাঁঞচরিখ খলায়
কুইরকুইঠা চেঁকা
কুকুরে খায় চাকাল চকল
হাঁগ হাঁগ আগুঢ় আউছি ধান
উঠুল ভাঁগা ঢেঁকির কাঁড়ি

লিরন অর্থাৎ রোহিন দিনে বীজ বপনের সূচনা। এসময় পুরুল্যা তথা রাঢ় বঙ্গের জনগণ, জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে নানারকম পরব চলে; শস্যকেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসব; বৃক্ষ, অরণ্য, প্রকৃতির উপাসনা। প্রকৃতি তথা অরণ্যকেন্দ্রিক যাপনের প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী অংশ এই থানের জঙ্গলই হল পবিত্র বন , আপনাদের কেতাবি ভাষায় স্যাক্রেড গ্রোভ। নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা বনাংশ বা চাষজমির ভৌগলিক সীমানার মধ্যে থাকা গাছপালা, পশুপাখি-সহ পুরো জৈববৈচিত্র্যই পবিত্র। স্থানীয় গরাম বা গ্রাম্য দেবদেবীকে উৎসর্গ করা। সাঁওতাল, মুন্ডা, লোধা, মাহালি, ওঁরাও প্রভৃতি বিভিন্ন জনজাতির জঙ্গলে নিজস্ব থান থাকে।

উপাস্য কখনও হন নিরাকার, কখনও সাকার। কোনও আদি পাথর, বা বিশেষ বৃক্ষ। এতদঞ্চলে জাহের থান, গরাম থান, সিনির থান ইত্যাদি নিয়ে আমি পূর্বে লিখেছি। মানুষ তাদের উপ্যাসের আবাসভূমিকে প্রাণের মতো আগলান। এইসব বন, জমিতে অবাধ বিচরণ, বা বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ।

প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত জৈববৈচিত্র্যের এমন দৃষ্টান্ত বিরল। এই বৃক্ষলগ্নতা, বৃক্ষপ্রেম আদিমবাসী মানুষজনের প্রজন্ম পরম্পরায় বাহিত উত্তরাধিকার। তা একদিনের বিষয় নয়। প্রকৃতি সংরক্ষণের আদিম পাঠ তাদের করায়ত্ত। উষ্ণায়নের এই পৃথিবী ব্যাপী সমস্যায় আধুনিক নাগরিক সভ্যতার নতজানু হয়ে পাঠ নেওয়া উচিত বৃক্ষ-উপাসক ‘জগদ্ধাত্রী’দের কাছে।

হড়মিত্যান, একটি মানভূম্যা শব্দ। সাঁওতালি ও মুন্ডারিতে ‘হড়’ শব্দের অর্থ মানুষ। সমাজ সাহায্যকারী বিভিন্ন বৃত্তিভোগী মানুষের একত্র সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতায় জীবনযাপনের বিনি সুতোর মালা এই মানভূম্যা হড়মিত্যান— মানুষে মানুষে মিতালি। রুখাশুখা রাঢ়ের টাঁড়ভূমে তাই জাতি, বৃত্তি নির্বিশেষে মানুষ মেতে ওঠে শস্য-উপাসনায়।

বললাম না পুরুল্যা তথা রাঢ় অঞ্চলের কৃষি বৃষ্টিনির্ভর। কর্কটক্রান্তীয় অবস্থানের দরুন এখানের অত্যধিক উত্তাপ আর মাটির জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম হওয়ায় বর্ষার জল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে চাষবাস বেশ দুরূহ। এসব অঞ্চলে কত গৃহী মা বোন খরা মাস জুড়ে জৈড় গাছ গোড়ায় জল ঢালে।

কুড়মালি সমবত অনুযায়ী বইসাখ আর জেঠ এই দু’মাস হল খরার মাস। বইসাখ-এর পয়লা থেকে মানুষ জল ঢালেন জৈড় বা অশ্বত্থ গাছের গোড়ায়। সাঁওতালরা বইসাখ, জেঠ মাসের পূর্ণিমায় এরঃ শিম নামে জাহের থানে ঈশ্বরের উপাসনা করেন। এরঃ শিমের সঙ্গে সঙ্গে মারাং বুরু, জাহের এরা ও ধরমের কাছে তারা সুবৃষ্টি ও উত্তম ধানফলনের জন্য প্রার্থনা করেন। এই পূর্ণচাঁদের সময়েই গ্রামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরা আবগে নামক বংশের দেবতার উপাসনা করেন নিজ নিজ জমির উঁইঢিপিতে। আবগে রোগ বালাই দূর করে শস্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটান।

এই পুজোয় মেয়েরা অংশগ্রহণ বা প্রসাদগ্রহণ করে না। ধীরে ধীরে খরার দুর্গ ফেটে লাগে সবুজ মেলা। বইসাখ পূর্ণিমায় শালের জঙ্গল পথে তিনি আসবেন, অধিষ্ঠিত হবেন জৈড় গাছ তলে। তার আগমন প্রতীক্ষায় উদ্বেল প্রকৃতি। আর খরা মাস থেকে খড়কুটো মুখে নিয়ে শস্যবাসনা উড়ে যাবে রোহিনের দিকে।

জেঠ মাসে ‘বারো দিনে বারোনি
আর তেরো দিনে রোহিণী’

১৩ জ্যৈষ্ঠ রোহিন দিনে বীজ বপনের সূচনা। রাঢ় অঞ্চলের এক এক জনজাতির মধ্যে লিরনের দিন এক এক রকম হয়। তবে সময়টা থাকে বাঁধা ওই চত্তির থেকে জেঠ মাস।

লোকবিশ্বাস, এই লিরনের দিন বীজ ধান বপন করলে তাতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হবে। বীজপূণ্যাহ বা বীজপুজো করে গৃহস্থ কৃষকেরা জমিতে বীজ ফেলেন। ভোর-ভোর উঠে গৃহস্থ মেয়েরা ঘরদোর গোবর জলে নিকিয়ে আলপনা আঁকে। বাড়ি বা সীমানা প্রাচীর ঘিরে গোবর জল দিয়ে বেড়ি কাটলে নাকি অশুভ শক্তি গৃহে প্রবেশ করতে পারে না। স্নান করে, ভিজে কাপড়ে, মৌনী হয়ে মেয়েরা ক্ষেত থেকে নতুন ঝুড়ি করে রোহিন মাটি নিয়ে এসে তুলসীতলায় বা গোয়ালঘরে রাখা হয়। জমিতে ধান ফেলার আগে বীজের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে এই মাটি মেশানো হয়। এই ‘ধুলো বতরে’ মাটি ফেললে পুরুষ্টু, রোগবালাইহীন চারাগাছ ফরফরিয়ে বাড়ে।

এই সময় রাঢ় বঙ্গের গাঁ ঘরে কত রকম পিঠে বানানো হয়। তার মধ্যে একটি নাম #কচড়া_পিঠে। মহুল ফল আর চালগুড়ি দিয়ে বানানো। পরবের সময় গান ধরে গাঁ ঘরের মানুষ….

বড়বাঁধের আইড়ে যাতে মাইরি,
লাগল প্রেমের হাওয়া
প্রেম পীরিতের বড় জ্বালা মাইরি,
ছাইড়ে দে মায়া ছেলা’।

আগে কচিকাঁচারা ধুলো, বালি, রং, কাদা মেখে রোহিন গান গাইতে গাইতে কুলিহ কুলিহ ঘুরে মাঙন করত। কেউ কেউ আবার কালি ঝুলি মেখে, ছেঁড়া কাপড় পরে কাপ বা সঙ সেজে পেঁপটি বা তালপাতার বাঁশি বাজিয়ে ঘুরত; আবার নানা জীবজন্তুর বেশে রঙ্গতামাশাও করত। রোহিনের কাপ গান গাইত—

‘কাপ নাচ নাচব না।
না দিলে তো ছাড়ব না।
একপুয়া চাল লিব
প্যাট না ভ্যরলে গাল দিব।’

বা,

‘বেহাইকে মাইরেছে কাড়াতে
বেহাই পইড়ে আছে নালাতে…’

এমন সব গান হত। ছেলেপিলেদের আনন্দে শামিল হয়ে গাঁ ঘরের লোক তাদের চাল-পয়সা-খেজুরপাকা দিত। এই মাঙনের পয়সায় কোনও মাঠের ধারে খিচুড়ি, মাংসের আনন্দ আয়োজনের সঙ্গে রোহিন নৃত্য হত।

প্রবাদ আছে, রোহিনে বৃষ্টি হবেই আর সেই রোহিন জল খেতে জাতসাপেরা গর্ত থেকে বের হয়।

এইদিন রাঢ় অঞ্চলে মনসা পুজোর সূচনা হয়। সবাই বিষক্ষয়ী আষাঢ়ী বা রোহিন ফল খায়। রোহিন দিনে শিবপুজো হয়। পুঞ্চার পাকবিড়রায় তিনদিনের বিখ্যাত রোহিন মেলা বসে। কালভৈরবের থানে পরম ভক্তি ভরে মানুষ পুজো দেয়। রোহিন মেলায় না যেতে পারলেও অন্য কোনও সময়ে পাকবিড়রা ভ্রমণ আমার আশ্চর্য সব বিস্ময় জন্মানোর সাক্ষী। বলরামপুরের উরমা, দড়দা, দলদিরিতেও রোহিন মেলা হয়।

লিরনের সময় হাটে তাই অনাজপাতি খুব একটা দেখতে পাবেন। আর হাট গুলোতে খুব একটা জাঁকও থাকে না। থাকবে কি করে? ওই সময় যে পরব, বীজতলা তৈরীর সময়। এই সময় শাকসবজির আমদানি কম হওয়াতে দাম একটু বেশি থাকে। তবে এই সময় হাটে অনাজপাতির আমদানি না হলেও অন্য জিনিস আমদানি হয়। লিরনের সময় এলেই গাঁ ঘরে চাষের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। হাটগুলোতে হাল, কোদাল, বীজ, চারা, হালের ফলা, সার, কীটনাশক ইত্যাদি নিয়ে দরাদরি চলে। এছাড়াও প্রবল উদ্যমে কেনাবেচা চলে জোয়ালের বলদ, জোয়াল, গরুর গাড়ির চাকা, গোরুকাড়া ইত্যাদি।

তাপ্পর চলে আসে আসাড়, সরাবন বেরসার মাস। বীজতলায় অঙ্কুরোদ্গম হয়ে তখন তা মাঠে রোপণ করতে হবে। আষাঢ়ের মাঝামাঝি অম্ববাচীর ঠিক পরেই হয় ‘জাঁতাল’ পুজো। গরাম থানে গ্রাম দেবতার পুজো হয়। সুবৃষ্টি, উত্তম ফসল আর গৃহশান্তির কামনায় পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়ার ছলন উৎসর্গ করা হয়। পুরোহিত বা ‘লায়া’ গরাম দেবতার পুজো করেন। তারপর চারা তুলে খেতে রোপণ করা হয়। সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন এসময়ে পালন করেন ‘যান্থাল’। ধানরোপণ উপলক্ষে আবার জাহের থানে পুজো হয়। সুবৃষ্টি কামনায় গ্রামবাসীদের সমবেত প্রার্থনা শোনা যায় – ‘স্বরগেতে মেঘ হুড় হুড় করে গো পৃথিবীতে জল নাই পড়েপৃথিবীতে জল নাই পড়েশ্রীনাথ রাজা পরমেশ্বর নালা জল ছাড়িছেকাশি ঘুটু রুঁয়া চলে নাই।’একটা লোকবিশ্বাস আছে, আগেকার দিনে অনাবৃষ্টি হলে, সাঁওতাল পল্লীর কোনও কিশোরীকে দিয়ে গোবর ছড়া দেওয়া হত। তারপর টানা ৩ বা ৫ বা ৭ দিন ধরে টানা নাচ হত। তাতে নাকি মেঘডম্বরুর সঙ্গে সঙ্গে নামত বৃষ্টি। এ গল্পের একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। একাধিক সাঁওতাল পল্লীতে একযোগে নাগাড়ে বাদ্যযন্ত্র বেজে গেলে এবং নাচ হলে ওই এলাকার বায়ুমণ্ডলে কাঁপন লাগে আর সেই কম্পন সঞ্চালিত হয় মেঘস্তরে। এসবের সঙ্গে বাঁশের ছাতা, ঘঙের ছাতা, ঝুড়ি, ঝাঁটা, চাল ছাওয়ার লরা ও বাঁশবাতা কেনার লোকের ভিড় হাটগুলোতে উপচে পড়ে। মনসা পুজোর সময় হাটগুলোয় মানুষের কোলাহল ছাপিয়ে যায় হাঁসের প্যাঁকপ্যাকানি আর পাঁঠার ডাক। মরা হাট বৃষ্টির জলে চনমনিয়ে ওঠে। মানুষ ,পশু, পাখি সকলের চিৎকার , ঠেলাঠেলিতে হাটের প্রাণ ফিরে আসে।

পরদিন ছিল হাটবার

জানলায় বসে দেখছি চেয়ে।

   রৌদ্র ধূ ধূ করছে পাশের সেই খোলা ছাদে।

তার স্পষ্ট আলোয় বিগত বসন্তরাত্রের বিহ্বলতা

                      সে দিয়েছে ঘুচিয়ে।

     নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ল আলো মাঠে বাটে,

                মহাজনের টিনের ছাদে,

          শাক-সবজির ঝুড়ি-চুপড়িতে,

                         আঁটিবাঁধা খড়ে,

             হাঁড়ি-মালসার স্তূপে,

                  নতুন গুড়ের কলসীর গায়ে।

             সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিল

                 মহানিম গাছের ফুলের মঞ্জরিতে।

পথের ধারে তালের গুঁড়ি আঁকড়ে উঠেছে অশথ,

    অন্ধ বৈরাগী তারই ছায়ায় গান গাইছে হাঁড়ি বাজিয়ে--

             কাল আসব বলে চলে গেল,

    আমি যে সেই কালের দিকে তাকিয়ে আছি।

ক্রমশঃ

তথ্যঃ প্রেম ডুরিয়া শাড়ি

©দুর্গেশনন্দিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.