RSF মানে Reporters sans frontières ইংরেজীতে Reporters Without Borders নামক এক বেসরকারি ইউরোপিয় সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রেস ফ্রীডম বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারত ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৫০ তম স্থান পেয়েছে। আশানুরূপ ভাবেই প্রথমস্থানে অবস্থান করছে একটি ইউরোপিয় শ্বেতাঙ্গ দেশ, নরওয়ে।
রিপোর্টটি দেখার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের একাংশ ভারত সরকারের ভূমিকা এবং ভারত দেশের সেকুলার গণতন্ত্রের উপরেই বরাবরের মতন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। মজার কথা হল যে, দেশে গণতন্ত্র নেই বলে ওনারা ভারতে থেকে নিশ্চিন্তে সরকারের বিরোধ করেছেন।
যাইহোক সেটা অন্য কথা, আসল বিষয়টা হল কি এই RSF এবং তাদের রিপোর্টটা কতটা ভরসা যোগ্য এবং কিসের ভিত্তিতে তারা রিপোর্ট তৈরি করে ?
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক তারা কিসের ভিত্তিতে তৈরি করে। RSF বিভিন্ন দেশে সার্ভে করে এবং তার ভিত্তিতে তাদের রিপোর্ট তৈরি হয়। এবার প্রশ্ন হল, সার্ভে কাদের থেকে করে ? উত্তর হল সাংবাদিকদের থেকে। আবার প্রশ্ন হল কোন সাংবাদিক ? উত্তর হল এমন কেউ যারা মূলত ঐ দেশের বর্তমান সরকার বা প্রতিষ্ঠান বিরোধী অনেকটা ভারতের রানা আয়ুব বা বরখা দত্তা বা রাজদ্বীপ সরদেশাইদের মতন।
১৯৮৫ সালে তৈরি হয় RSF নামক এই বেসরকারি সংস্থাটি। এদের প্রধান কাজ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখা। বর্তমানে RSF র হেডকোয়ার্টার রয়েছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস-এ। একদম জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন বিতর্কে জড়িত সংস্থাটি। দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি বিতর্ক,
???? শীতলযুদ্ধ এবং শীতলযুদ্ধ পরবর্তী সময় মূলত এশিয় দেশ গুলোতে পশ্চিমা প্রপাগ্যান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
????চীন অলিম্পিকের সময় সার্কেলের জায়গাতে হ্যান্ডকাফের ছবি সমেত পতাকা উত্তোলন করে চীনের ফ্রীডম লেস প্রেসের বিরোধীতা করে।
????একবিংশ শতকের একদম প্রথমে ভেনেজুয়েলার বাম শাসক হুগো চাভেজের বিরুদ্ধে হওয়া বিপ্লবে বিপ্লবীদের সমর্থন করে।
????সংস্থাটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ওরা হোয়াইট সুপ্রিমেসির মতন রেসিস্ট চিন্তাকে সমর্থন করত।
????এখন আরও একটি নতুন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে ওরা রেজিম বদলেছে জর্জ সোরসের ফান্ডিঙের জন্য।
????আপনাদের হয়েত মনে আছে ক’দিন আগেই আর্থিক তছরূপের অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতীয় সাংবাদিককে রানা আয়ুবকে বিদেশে যাওয়ার সময় ভারতীয় এজেন্সিরা আটকে ছিল, তখন সেই ঘটনাকে দ্যার্থ ভাষায় নিন্দা করেছিল এই RSF নামক সংস্থাটাই।
একটি সংস্থা যারা হোয়াইট সুপ্রিমেসির সমর্থক বলে অভিযুক্ত, তাদের রিপোর্ট নিয়ে ভারতের কিছু লোকের মধ্যে মাতামাতি চলছে। মজার কথা হল এরা কেউ দক্ষিণপন্থী নয়, সবাই মূলত বামপন্থী। আরও মজার কথা হল RSF বাম বিরোধী বলেও কুখ্যাত।
সদ্য প্রকাশিত RSF র রিপোর্টিতে দেখা যাবে প্রথম ১০-১৫ টা দেশের প্রায় সব ক’টাই শ্বেতাঙ্গ এবং অবশ্যই খৃষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এশিয়ান দেশ হিসেবে সবচেয়ে ভাল স্থান অর্থাৎ ১৭ নম্বর স্থানে আছে “তিমোর লেস্টি” নামক এক অতি ক্ষুদ্র, বিশ্বের কাছে প্রায় অজানা একটি খৃষ্ঠ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ভদ্র লোকের দেশ হিসেবে পরিচিত জাপানের স্থান ৭১ নম্বরে যা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত শেতাঙ্গের দেশ আর্মেনিয়া, বিতর্কিত ইউরোপিয় দেশ কসভো এমন কি ডিক্টেটরশিপে চলা খৃষ্ঠান অধ্যুষিত কেনিয়ার থেকেও পিছনে। এহেন রিপোর্টে ভারতের স্থান যে আরও পিছনেই হবে, সে বিষয় সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
তবে প্রশ্ন তো আসেই ভারত কি সত্যিই এত পিছনের স্থান পাওয়ারই যোগ্য ? কারণ ভারতের আগে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক ভারতের আগে থাকা সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত সেই দেশের নাম ও স্থান গুলি:-
PRESS FREEDOM INDEX RANKING 2022:-
???? কেনিয়া- ৬৯ (ডিক্টেটরশিপে চলা দেশ)
???? ইউক্রেন- ১০৬ (যুদ্ধের জন্য মার্শাল ল জারি)
???? কাজাখিস্থান- ১২২ (ক’মাস আগেই দেশ জুড়ে দাঙ্গা আটকাতে সংবাদ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল)
???? নাইজেরিয়া- ১২৯ (গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত)
???? জিম্বাবোয়ে- ১৩৭ (রেসিস্টদের ডিক্টেটরশিপে চলা দেশ)
???? সোমালিয়া- ১৪০ (প্রায় সরকারহীন, পাইরটসদের দেশ)
???? লিবিয়া- ১৪৩ (গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত)
এবং
???? ভারত- ১৫০ (বিশ্বের বৃহত্তম সেকুলার গণতন্ত্র)
এখানেই শেষ নয় বাংলাদেশের “ফ্রীডম অফ প্রেস” এই রিপোর্ট অনুযায়ী স্থান পেয়েছে আফগানিস্থানের থেকেও নিচে !!
ঠিকই পড়ছেন, এর পরেও এই রিপোর্টকে মানতে হবে আনবায়স্ড ! কোন সুস্থ্য মাথার মানুষের পক্ষে মানা সম্ভব ? একদম পরিস্কার ভাবে রিপোর্টটি বলছে শেতাঙ্গ এবং খৃষ্ঠান অধ্যুষিত দেশ গুলোতেই “ফ্রীডম অফ প্রেস” সবচেয়ে ভাল। সঙ্গে আরও বলছে পশ্চিমা অর্থনীতির সঙ্গে টক্কর দেওয়া জাপান বা ভারতের মতন এশিয়ান বড় অর্থনীতি বা বাংলাদেশের মতন হবু এশিয়ান বড় অর্থনীতির দেশ গুলির সামাজিক ব্যবস্থা খুব খারাপ। RSFর রিপোর্ট পরিস্কার বলছে খৃষ্ঠান, হোয়াইট এবং ওয়েষ্টার্ন সুপ্রিমেসির দেশ গুলোই ভাল, বাকি সব খারাপ।
যদিও ভারত সরকার বিরোধীতা করার নামে ভারত খুব খারাপ দেশ প্রমাণের চেষ্টায় সর্বদা তৈরি থাকা, ভারতে বসবাসকারি লোক গুলোর কাছে তাতে কিছু্ যায় আসে না। কারণ এটাই এখন নব্যতম হাতিয়ার।
তবে এবারের লড়াইটা সম্ভবত একটু কঠিন, কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে সস্তার ইন্টারনেট ব্যবহারকারি মানুষ গুলোকে বিশ্বাস করাতে হবে, ডিক্টেটরশিপে চলা কেনিয়া, জিম্বাবোয়ে, প্রায় সরকারহীন সোমালিয়া ও গৃহযুদ্ধ চলা নাইজেরিয়া এবং লিবিয়ার থেকেও তাদের নিজেদের দেশ ভারতের গণতন্ত্রটা বেশি বিপন্ন।