Satyajit Ray 101st birthday: ‘এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা’, পুরনো সেই শহরের দলিল লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়

সোমবার, ২ এপ্রিল সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী। এদিন ফিরে দেখা ওঁর চোখে বদলে যাওয়া কলকাতা। সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখলে, সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেন, উভয়ের কলকাতা ট্রিলজি সব দিক থেকেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভুললে চলবে না যে, যে সময়ে সত্যজিৎ রায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ ও ‘জন অরণ্য’ বানিয়েছিলেন, তখন কলকাতা উত্তাল ছিল একের পর এক সমস্যায়। তখন সত্তরের দশক, রাজ্যে ও কেন্দ্রে দুই জায়গাতেই তখন কংগ্রেস সরকার। দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর সামাজিক বৈষম্য— সব মিলিয়ে মানুষের জীবনে টানাপোড়েন এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ভায়োলেন্স বা হিংস্র কার্যক্রমের দিকে এগিয়েছিল মানুষ। এখানে কলকাতা একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন সত্যজিৎ রায়। যে শহরে ফেলুদার বাড়ি, সেই শহরেই প্রতিবাদের ঝড়, সামাজিক অবক্ষয়ের চিহ্ন রাস্তা ও জীবন জুড়ে। কলকাতা ট্রিলজির প্রাসঙ্গিকতা স্রেফ সিনেমা বা বিষয় হিসেবে নয়, তার চেয়েও অনেক ব্যাপ্তিতে।

‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও ‘জন অরণ্য’-এর সিদ্ধার্থ ও সোমনাথ দু’জনেই গ্র্যাজুয়েট এবং চাকরি খুঁজছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ তখন ছেলেমেয়েরা চাকরি ইন্টারভিউ দিতে যায়, জেনারেল নলেজ যাচাইয়ের পর্ব চলতেই থাকে যেন। ব্যক্তিগত আশা-নিরাশার সঙ্গে সমাজের এথিক্স নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকে। এছাড়া জীবনে মহিলা নিয়ে যে দ্যোতনা তাও যেন চোখে পড়ে বারবার। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র সিদ্ধার্থ তার সুন্দরী বোনকে নিয়ে বিব্রত হয়। ‘সীমাবদ্ধ’র শ্যামল সেই আন্দাজে অনেকটা সফল জীবনে। তবে অফিসের আরেক সতীর্থের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতেই থাকে সংস্থার ডিরেক্টর হওয়ার জন্য। শ্যামলের বাড়িতে যখন তার শ্যালিকা আসে তখন পর্দায় দেখা যায় শহুরে জীবনের স্বাচ্ছন্দের মধ্যে সব কিছু যেন কতটা পারফেক্ট হওয়ার মতো— বাড়িতে পার্টি চলছে, ক্লাবে যাওয়া সন্ধেবেলায়, সকালে রেসের মাঠ কিংবা কেরিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার তীব্র স্পৃহা।

‘জন অরণ্য’-এর সোমনাথের মন ভেঙে যায় যখন তার বান্ধবী কিছুটা পরিবারের চাপেই বিয়ে করে নেয় অন্য একজনকে। বাড়িতে পুরনোপন্থী বাবা আর কিছুটা স্বার্থপর দাদা, বাড়িতে কথা যেন এগোতে চায় না তার। কিছুটা কথা বলার অবকাশ খুঁজে পায় বরং জামাই বাবুর সঙ্গে, যে প্রয়োজনে সিগারেট কিনে দিতে পিছপা হয় না। ছেলে ব্যবসা করবে— বাবার কাছে এটা অনেক বড় স্ক্যান্ডাল মনে হয় যেন! ব্যবসায় মিডলম্যানের ভূমিকা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান হওয়া এবং শেষমেশ এথিক্সের বেড়াজাল টপকে কেরিয়ারকে অগ্রাধিকার দেওয়া— সত্যজিৎ রায় মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে বা তার ভনিতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

আজকের কলকাতা বদলেছে। সাদা কালো কলকাতাকে দূরে ঠেলে দেওয়া রঙিন কলকাতায় কিন্তু আজও দুই রকম পৃথিবী দিব্যি পাশাপাশি বাস করছে। আজকের শ্যামল মলে গিয়ে কেনাকাটা করে, বিদেশে ঘুরতে যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে চর্চা করে, নতুন চাকরির খোঁজে সিটিসি নিয়ে তত্ত্ব তল্লাশি করে। সিদ্ধার্থ আর সোমনাথরা কি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলা যায়? আর ব্যবসার কথা? পর্দায় উৎপল দত্ত বা রবি ঘোষ যা বলে গিয়েছেন সেটা এখনও ব্যবসার বাস্তব হয়েই থেকে গিয়েছে। তাই সত্যজিৎ রায়ের কলকাতা ট্রিলজি যে কখন রাজনৈতিক ট্রিলজি হয়ে গিয়েছে সময় ও বাস্তবের নিরিখে, তা ঠাওর করা নিতান্ত সহজ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.