ভারত এ বার তার নিজের স্বার্থ দেখবে। বিশ্বকে আর তুষ্ট করার চেষ্টা করবে না। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বুধবার এ কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘‘আমাদের আর কারও অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।’’
ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য বজায় না রাখার জন্য ইতিমধ্যেই ভারতকে ‘বার্তা’ দিয়েছে আমেরিকা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লি-মস্কো সামরিক সহযোগিতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছিলেন, ‘‘ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশগুলিকে আমাদের বার্তা— আমরা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের রাশিয়া-নির্ভরতা দেখতে চাই না। আমরা এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় তাদের নিরুৎসাহিত করছি।’’ এই প্রেক্ষিতে জয়শঙ্করের বুধবারের মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে এর আগে আপত্তি তুলেছিল আমেরিকা। গত ১৩ এপ্রিল আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিক বৈঠকে সেই আপত্তি খারিজ করে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘‘আপনারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আমি বলব, ইউরোপের দিকেও নজর দিন। আমরা অবশ্যই কিছু জ্বালানি কিনি। কিন্তু ইউরোপ এক বিকেলে যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, আমরা গোটা মাসেও তা করি না।” বুধবার বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারত এমন এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে, যেখানে অন্য মহল থেকে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ধারণাটিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও সরাসরি কোনও পক্ষ নেয়নি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বুচায় রুশ সেনার গণহত্যার নিন্দা করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি। আবার রাশিয়া নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকা তথা পশ্চিমী বিশ্বের নিন্দা প্রস্তাবে ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছেন। যুদ্ধের আবহে রুশ বিদেশমন্ত্রী ভারত সফরে এসে তেল বিক্রি এবং সামরিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলির জারি করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় সায় দেয়নি ভারত। জো বাইডেনের সরকার নয়াদিল্লির সেই সেই ‘ভারসাম্যের কূটনীতির’ পথ বন্ধ করার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন, জয়শঙ্কর আজ তার ‘জবাব’ দিলেন বলে মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশ।