৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে সিপিআইএম আদাজল খেয়ে লেগেছে। গত ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত একটা দিনও এমন যায়নি যে সিপিআইএম এর দলীয় মুখপত্রের প্রথম পাতায় কাশ্মীর নিয়ে হাহাকার নেই। দলের এই আচরণের কারণটাও স্পষ্ট। দেশভাগের সময় ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি ছিল মুসলিম লীগের সহযোগী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গ হিসাবে পেতে চেয়েছিল। তাই এ বিষয়ে পার্টির নৈতিক সমর্থন বরাবর ছিল। ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ কলকাতায় কম্যুনিস্ট অফ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তাই কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের জন্য যখন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী জীবন দিয়েছিলেন তখন এখানকার কম্যুনিস্ট দলগুলি এক অদ্ভুত আচরণ করেছিল। ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন কাশ্মীরে এই বীরবঙ্গ সন্তানকে হত্যা করা হল। কিন্তু মাঝরাতে কলকাতা বিমান বন্দরে তার নশ্বর দেহ আনা হল। তখন বাংলা এই নির্মম হত্যার প্রতিকার চায়। কিন্তু ২৭ জুন তারিখে জ্যোতি বসুরা একটি ‘প্রতিরোধ কমিটি’ তৈরী করলেন। তারা ১ পয়সা ট্র্যাম ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করবেন। এই আন্দোলনে কলকাতায় একটার পর একটা ট্র্যাম পোড়ানো হল। ২রা জুলাই এই বামদলগুলি ‘বাংলা বন্ধ’ ডাকলেন। তাই শ্যামাপ্রসাদের আদ্যশ্রাদ্ধ সম্পন্ন হওয়ার আগে যারা এমন অদ্ভুত আন্দোলন করে এতবড় মাপের মানুষটি ভোলাতে চেষ্টা করেছিলেন তারা আজ শ্যামাপ্রসাদের জয়ের দিনে তো হাহুতাশ করবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের আচরণ বা নেত্রীর বক্তব্যে ধরা পড়েছে অসঙ্গতি।
প্রথমতঃ সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যের মানুষও ৩৭০ ধারা বিলোপকে দলমত, ধর্মসম্প্রদায় নিরপেক্ষভাবে স্বাগত জানিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বামেদের একটি আসনও মেলেনি। তাই ভোটের বালাই তাদের নেই। কিন্তু তৃণমূলের আছে। তৃণমূল সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান থেকে শুরু করে প্রশান্ত কিশোর সকলকে লাগাবে কেবলমাত্র ক্ষমতার টিকে থাকতে।
অনেকের একটা ভুল ধারণা যে কাশ্মীরের সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায় বা বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষেরা ৩৭০ ধারা ধরে রাখতে চান। ৩৭০ ধারাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ। কিন্তু যারা জেহাদি উগ্রপন্থী, যারা মনেপ্রাণে চান ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’ তাঁরা অবশ্যই ৩৭০ ধারা চাইতেন, কারণ রাজ্যে মাওবাদী গতিবিধি থেকে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ এসবের সঙ্গেই কাশ্মীরি উগ্রপন্থীদের, মুজাহিদিনদের যোগ আছে। সাধারণ দেশভক্ত সংখ্যালঘু মুসলমানের কোন সহমর্মিতা নেই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাই অদ্ভুত আচরণ করেছে। বামপন্থীরা যেখানে যেখানে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে, পুলিশ তাদের পূর্ণ সুরক্ষা দিয়ে মিছিল করতে দিয়েছে। কিন্তু এই সার্বভৌম দেশ ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে ড. শ্যামাপ্রসাদের নিজের জন্মভূমিতে কোন মিছিল করার অনুমতি দেয়নি।
সত্যিই ভোট বড় দায়। বাংলার স্বাভিমান বোধ, দেশপ্রেম, ন্যায়নীতির থেকেও বড় ভোটব্যাঙ্ক হারানোর ভয়। ৫ আগস্টের পর থেকে যতদিন গেছে তত বেশী করে ফুটে উঠেছে মাননীয়া ও তাঁর দলের ৩৭০ ধারা বিষয়ে অস্পষ্ট অবস্থান।
জিষ্ণু বসু