রাফায়েল নিয়ে দুর্নীতি, রামমন্দির তৈরি নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেওয়া, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা ইস্যুতে জেরবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ তা স্বত্ত্বেও দ্বিতীয়বার দিল্লির মসনদে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি৷ আর বিজেপিকে এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে দশটি কারণ৷ যে দশটি কারণ আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির গেম চেঞ্জার হয়ে যেতে পারে৷ দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ মসৃণ হতে পারে নরেন্দ্র মোদীর৷
১. বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইক: পুলওয়ামা হামলার ১২ দিন পর ১২টি মিরাজ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়ে আসে৷ ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢোকে ভারতের বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের ঠিক আগে বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইক বিজেপিকে নিঃসন্দেহে অ্যাডভান্টেজ দেবে৷ প্রচারে বিজেপি বলতে পারবে, নরেন্দ্র মোদীই পারেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব দিতে৷
২. উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক: বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের আগে বিজেপির প্রচারে সিংহভাগ অংশ জুড়ে থাকত উরির সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা৷ ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সীমান্তের কাছে থাকা জঙ্গি শিবিরগুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে আসে ভারতীয় জওয়ানরা৷ পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে শহিদ হন ১৯ জওয়ান৷ তার বদলা নিতেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক৷ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাফল্য নিয়ে বিজেপি নেতারা মোদীর জয়গান করে৷ অপরদিকে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনে৷
৩. সংরক্ষণ বিল: মোদী সরকারের অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক বলা হয় সংরক্ষণ বিলকে৷ আর্থিক ভাবে অনগ্রসর উচ্চবর্ণের গরিব মানুষদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য ঐতিহাসিক বিল সংসদে পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার৷ এতদিন সংরক্ষণ দেওয়া হত জাত-পাতের ভিত্তিতে৷ এই নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে৷ উচ্চবর্ণের অনেক মানুষই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা স্বত্ত্বেও জাত-পাতের প্যাঁচে পড়ে সংরক্ষণের সুবিধা পেতেন না৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদী সরকারের এই বিল উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপির ভোটবাক্সে টেনে আনবে৷
৪. আয়করে ছাড়: এবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে ৫ লক্ষ টাকা অবধি আয়করে ছাড় দিয়ে দারুণ রাজনৈতিক চাল দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধীদের এতদিনের অভিযোগ ছিল বিজেপি সরকার উচ্চশ্রেনির সরকার৷ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয়৷ কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে আয়করে বিপুল ছাড় দিয়ে মধ্যবিত্তদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী৷ ফলে মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশ আরও বড় কিছু প্রাপ্তির আশায় বিজেপিকে ভোট দিতেই পারে৷
৫.কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা: তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের নেপথ্যে উঠে আসে কৃষক অসন্তোষের কারণ৷ সেই কৃষকদের কাছে টানতে ভোটের মুখে আরও একটা মাস্টারস্ট্রোক মোদী সরকারের৷ সেটি হল কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা৷ গরিব চাষিদের জন্য বছরে ৬০০০ টাকা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে চাষিদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদী৷
৬.আয়ুষ্মান ভারত যোজনা: ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয় আয়ুষ্মান ভারত হেলফ কেয়ার স্কিম৷ আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য যোজনায় ১০ কোটি পরিবারের প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা দেওয়া হবে। এতে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পাবে প্রতিটি পরিবার। এটাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খরচে কোনও টাকা দিতে হবে না। সরকারি হাসপাতালে তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতালেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে। হাসপাতালে ভরতির আগে ও পরের খরচও এতে ধরা থাকবে।
৭. প্রধানমন্ত্রী উজ্জলা যোজনা: ২০১৬ সালের মে মাসে এই প্রকল্পের সূচনা করেন নরেন্দ্র মোদী৷ ২০১৯ সালের মধ্যে দেশের মহিলাদের ঘরে ঘরে পাঁচ কোটি কুকিং গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়৷ পরে সেটা বাড়িয়ে ৮ কোটি করা হয়৷ এই প্রকল্পের আওতায় সরকার প্রতিটি ফ্রি এলপিজি গ্যাস সংযোগে ১৬০০ টাকা ভরতুকি দেবে৷
৮. স্বচ্ছ ভারত অভিযান: ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছতা অভিযানের উপর জোর দেন৷ দেশজুড়ে শুরু হয় স্বচ্ছ অভিযান৷ সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে আম জনতা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন৷
৯. তিন তালাক: দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সমাজে চলতে থাকা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সরকার৷ তারপর আসে সেই ঐতিহাসিক রায়৷ যেখানে তিন তালাককে অবৈধ বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট৷
১০. এসসি/এসটি সংশোধনী অ্যাক্ট: অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিশেষ সাংবিধানিক ব্যবস্থা৷ (Prevention of Atrocities) Act, 2018 বলা হয়েছে তপশিলি জাতি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কারোর উপর কোনও হামলাকারীকে আগাম জামিন দেওয়া যাবে না৷