#BoycottHimalaya। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই ডাক দিয়েছেন। এই তালিকায় আছেন অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও। কী বলছে কোম্পানিটি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুলভাবে ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে #BoycottHimalaya স্লোগান। কারণ এই কোম্পানির ক্রিম, শ্যাম্পু, মাজন, এমনকী ওষুধেও নাকি মাংস রয়েছে। আর তাই এই কোম্পানির দ্রব্য বয়কট করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই দাবি বিরাট জোরদার হয়ে উঠেছে।
এই দাবিতে সরব হয়েছেন অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও। তিনিও টুইট করেছেন #BoycottHimalaya। তার পর থেকেই এই কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা মত প্রকাশ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভেষজ নানা দ্রব্যের কোম্পানি হিসাবে রীতিমতো জনপ্রিয় এই হিমালয়। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও তাদের নানা দ্রব্য রফতানি করা হয়। কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটেছে?
হালে একটি Certificate বা শংসাপত্র Viral হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কী এই শংসাপত্র? সেটিতে লেখা রয়েছে হিমালয় কোম্পানির যাবতীয় প্রোডাক্ট হালালের নিয়ম মেনে তৈরি।
আর এই শংসাপত্রের ছবিটি Viral হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধ্বনি উঠেছে।
শেষ পর্যন্ত এই ধ্বনির উত্তর দিয়েছে হিমালয় কোম্পানিও। তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার তরফে বলা হয়েছে, প্রায় ১০০টি দেশে তাদের দ্রব্য রফতানি করা হয়। সে সব দেশে দ্রব্য রফতানি করার জন্য হালাল শংসাপত্র বাধ্যতামূলক।
এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের তরফে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তাদের কোনও দ্রব্যেই কোনও প্রকার মাংস থাকে না। লেখা হয়েছে, হালাল শুধুমাত্র মাংসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য— এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ভেষজ বা উদ্ভিজ্জ বস্তুও হালাল নিয়মের আওতায় আসতে পারে।
হালাল কি ?
বিভিন্ন মাংসের দোকান ও রেস্তোরাতে দেখা যায় কিছু মানুষ জিজ্ঞেস করেন সেখানকার মাংস হালাল কিনা।এই কারণে আমরা কম বেশি সকলেই এই হালাল শব্দের সাথে পরিচিত। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে অনেকের মতে হালাল মানেই জবাই করা মাংসের কথা ভাবছেন। আসলে হালাল একটি সুচতুর এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বলা যেতে পারে। হালাল শুধু মাংস না, অন্য বহু জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটু শব্দ।
সম্প্রতি দেখা গেছে এই হালাল শব্দটির ব্যবহার নিয়ে অনেক হিন্দু সংগঠন মুখর হয়েছে।সেই সকল হিন্দু সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে এই হালাল শব্দটি ব্যবহার করে শুধুমাত্র মুসলিম ব্যবসায়ীদের একটি বড় এবং অবৈধভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।অবৈধ কেন? কারণ শুধুমাত্র এই শব্দ ব্যবহার করে তারা একটি ব্যুহ রচনা করে ফেলেছে যেখানে অন্য কোনো অমুসলিম ব্যাবসায়ী প্রবেশ করতে পারেনা। অমুসলিম ব্যাবসায়ী অনেক চেষ্টা করলেও এই ব্যুহ ভেদ করে কোনো ভাবেই নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেন তার কারণ হালাল একটি সুদূর প্রসারী ব্যবস্থা বা চেইন বলা যেতে পারে। ঠিক এই কারণেই অমুসলিম ব্যাবসায়ী অল্প কিছুটা যাবার পরে আটকে যেতে বা থমকে জেতে বাধ্য হয়।
এগ্রিকালচার অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা APEDA এর বর্তমান সংস্করণে বলা হয়েছে যে, আমদানিকৃত দেশ বা আমদানির চাহিদা অনুযায়ী এই হালাল পদ্ধতিতে প্রাণী বা পশু জবাই করা হয়। APEDA এর পূর্ব সংস্করণ অনুযায়ী কিন্তু এই হালাল পদ্ধতিতে পশু জবাইয়ের কারণ একটু অন্যরকম ছিল! পূর্বসংস্করণ অনুযায়ী ইসলামিক দেশগুলির হালাল মাংস ব্যবহারের বিপুল চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই হালাল পদ্ধতিতে পশুদের জবাই করা হত। অর্থাৎ পূর্বের সংস্করণ দেখে এটাই বোঝা যায় শুধুমাত্র হালাল পদ্ধতিতে জন্তু জবাই করা হতো মুসলিম সম্প্রদায়ের আমদানি কারীদের ব্যবসার স্বার্থে।
যদিও বর্তমানে হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ অনুযায়ী APEDA এর ম্যানুয়ালে হালাল শব্দ ব্যবহারের অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে সব আমদানিকারীদের হালাল মাংস নিতে বাধ্য করা অর্থাৎ মাংসের চাহিদা যেখানেই থাকুক বা যাদের থাকুক সেটা একমাত্র হালাল হতে হবে। এখানেই বোঝা যাচ্ছে যে পূর্বে যে কারণ দেখানো হয়েছিল সেটা সম্পূর্ন ভাবে পরিমার্জন করে এখন নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাধ্যতামূলক একটি অলিখিত বা অনৈতিক পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। হিন্দু সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, শুধুমাত্র পশ্চিমের ইসলামী দেশেই যে ভারত মাংস সরবরাহ করে তা নয়। চীন, শ্রীলঙ্কার মত বিভিন্ন দেশেও মাংস সরবরাহ করে, যেখানে হালাল মাংস বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু সেসব দিকে না তাকিয়ে এখন সম্পূর্ন ভাবেই ভারত থেকে সরবরাহ করা মাংস মাত্রেই সেটা হালাল বলে বাধ্যতামূলক একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় যা অনৈতিক বলে খুব সহজেই বোধগম্য। তাহলে শুধুমাত্র পশ্চিমী দেশগুলোর উপর ভিত্তি করেই হালাল পদ্ধতিতে পশু জবাইয়ের কারন কি!
ঘটনাক্রমে দেখা গেছে যে বিজেপি পরিচালিত দক্ষিণ দিল্লির পুরসভা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সেখানকার প্রতিটি মাংসের দোকান ও রেস্তোরাঁতে কি ধরনের মাংস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা হালাল নাকি ঝটকা, সেটার সম্পর্কে দোকানদারদের বা রেস্তোরা মালিকদের লিখিতভাবে জানানো উচিত যা তারা করছে না। পুরসভার চেয়ারপার্সন রাজদত্ত গেহলোটের বক্তব্য অনুযায়ী এই করোনা মহামারীর জন্য প্রতিটি মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন, তাই রেস্তোরাঁয় কি ধরনের মাংস খাওয়ানো হচ্ছে তা জানানো আবশ্যক কিন্তু দোকানদার ও মালিক কেউই তা জানাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করছে। অর্থাৎ এখানেও দেখা যাচ্ছে যে এই খাবার বা মাংসের ক্ষেত্রে একটা অলিখিত ব্যুহ রচনা করে বা একটা অনৈতিক নিয়ম লাঘু করে সেটা মেনে চলছে এই অবৈধ মাংস কারবারী লোকজন।
আরবিতে হালাল শব্দের অর্থ অনুমোদনযোগ্য যার মানে একটা সম্প্রদায়ের জন্য যেকোনো জিনিস বা বস্তু হালাল হলে তবেই তারা কিনবে না ব্যবহার করবে।এক্ষেত্রে হালাল মাংস শরিয়া আইন দ্বারা অনুমোদিত। বিশ্বব্যাপী বিপুল ইসলামী জনসংখ্যার কাছে এই হালাল মাংস বিক্রির এক বিরাট বাজার আছে যে বাজারের লোভ প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষে সামলানো দায় হয়ে গেছে। যা অমুসলিম ঝটকা মাংস বিক্রেতাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এর কারণ এত বড় জনগোষ্ঠীর চাহিদা মতো জিনিস সরবরাহ না করতে পারলে সেখানে ব্যবসা করে টিকে থাকা অসম্ভব একটা পক্রিয়া।তাই সহজেই হালাল খাবার বা মাংসের নামে একটা অনৈতিক চক্র সমগ্র বিশ্বে তাদের নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছে অলিখিত ভাবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন হালাল সার্টিফিকেশন সংস্থার মত ভারতেও তৈরি হয়েছে হালাল সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা, যেমন- গ্লোবাল ইসলামিক শরিয়া সার্ভিসেস( GISS), হালাল ফুড অথোরিটি ( HFA), Jamiat Ulama-i-Hind Halal Trust, Halal India Private Limited, Halal Certification Services India Private Limited, Ulama-E-Maharashtra – a State unit of Jamiat Ulama-E-Hind,
Jamiat Ulama-i-Hind Halal Trust। এটাও একটা বড় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে কোনো অমুসলিম কাজ করতে পারেনা। মানে একজন মুসলিম ব্যাবসায়ী মাংসের ব্যবসা শুরু করলে সেই হালাল সার্টিফিকেট পাবে যে সংস্থার থেকে সেই সংস্থায় কাজ করবে শুধুমাত্র মুসলিম। আবার দেখা যাচ্ছে কোনো অমুসলিম রেস্তোরা মালিক যদি তার রেস্তোরাঁতে হালাল মাংস বিক্রয়ের কথা ভাবে তাকেও সেই মুসলিম হালাল সংস্থা থেকেই সার্টিফিকেট নিতে হবে, এমনকি তার রেস্তোরাঁতে হালাল মাংস রান্না করার লোকটিও হতে হবে মুসলিম। তাই সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে এই চক্র সমগ্র বিশ্বে অনৈতিক ভাবে অর্থনীতিকে কব্জা করে রেখেছে।