রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশে। দুটি রাজ্যেই মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। গুজরাতের দুটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যু হয়ে এক বৃদ্ধের। মধ্যপ্রদেশে হতাহতের খবর নেই। তবে সেখানে কার্ফু জারি করা হয়েছে।
গুজরাতের রাজধানী গান্ধীনগর থেকে ৭০ কিমি দূরে হিম্মতনগর এবং ১২৫ কিমি দূরে খামভাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষগুলি হয়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে রাম নবমীর মিছিল যাওয়ার সময় পাথর ছোঁড়া হয় মিছিল লক্ষ্য করে। পাল্টা শুরু হয় সংঘর্ষ। রাজ্যের পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) আশিস ভাটিয়া বলেন, ‘রাম নবমী মিছিল যখন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তারপরই সহিংসতার ঘটনা ঘটতে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, খামভাতে সংঘর্ষের জেরে এক বৃদ্ধ প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশে শোভাযাত্রায় লাউড স্পিকারে চড়া সুরে গান বাজানো হচ্ছিল। সেই নিয়ে আপত্তি করেন স্থানীয় মুসলিমরা। তা থেকে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। এরপরে মিছিলের ওপরে পাথর ছোঁড়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন যুবক পাথর ছুঁড়ছে। পুলিশকর্মীরা কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছেন। পাথরের আঘাতে অনেক পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এরপরে পুলিশ লাউড স্পিকারে নির্দেশ দেয়, সবাই ঘরে থাকুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে জারি হয়েছে কার্ফু।
গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশ দুটিই বিজেপি শাসিত রাজ্য। বিরোধীরা বলেন, বিজেপি শাসনে মুসলিমদের চেপে রাখা হয়। কিন্তু হিন্দু অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা দেখে বিরোধীদের দাবি কতটা সত্যি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এ দেশে কোনও হিন্দু পার্বনই কি শান্তিতে পালন করা যাবে না?
এবার বুলডোজার চলল কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে। না, বুলডোজার চালিয়ে অভিযুক্তদের বাড়ি বা বেআইনি নির্মাণ নয়, ৩০০ বছরের পুরনো মন্দির ভেঙে দিল কংগ্রেস সরকার। এমনকী মন্দিরের বিগ্রহও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজস্থানের আলওয়ারে পুরসভার তরফে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আলওয়ার জেলার রাজগড়ে মাস্টার প্ল্যানের কাজ করছে কংগ্রেস সরকার। প্রাচীন বাড়ি ও দোকানে বুলডোজার চালানো হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা উন্নয়নের নামে মন্দিরও ভেঙে দিয়েছেন। মাস্টার প্ল্যানের কথা বলে কোনও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাড়ি এবং দোকান ভেঙে ফেলা হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রাজগড় শহরের প্রধান সড়ক।
সাধারণ মানুষের দাবি উন্নয়নের নামে ইচ্ছা করে মন্দির ভেঙ্গেছে প্রশাসন। শুধু তাই নয় মন্দিরের বিগ্রহও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আলওয়ারের এই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৈলাশ চৌধুরী।
টুইটে ওই বিজেপি নেতা লিখেছেন, ‘আলওয়ারে ৩০০ বছরের পুরনো শিব মন্দির ভাঙার ঘটনা রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের হিন্দু ধর্মবিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী, দাঙ্গাবাজ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এই বুলডোজার ব্যবহার করলে ভাল হত।
রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রায় হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। একটা দুটো নয়, দেশ জুড়ে এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। এবার এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করলেন আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। তাঁর দাবি, দেশ জুড়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। এতে দেশবিরোধী শক্তিও জড়িত থাকতে পারে।
ওই জনস্বার্থ মামলায় শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে, রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তীর শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তার পিছনে আইসিস বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠনের হাত রয়েছে কিনা, তা সুপ্রিম কোর্ট যেন খতিয়ে দেখে।
অপর একটি পিটিশনে আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান যে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে হনুমানজয়ন্তীর শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করা হোক। আইনজীবী অমৃতপাল সিং খালসা দুই পাতার চিঠিতে প্রধান বিচারপতি এনভি রমন্নাকে সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির নেতৃত্বেই একটি তদন্তকারী কমিটি গঠনের আর্জি জানান নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য।
সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা আর্জিতে বলা হয়েছে, ‘যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তাতে আইসিস বা অন্য কোনও দেশবিরোধী ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের সামাজিক কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট করছে। ভক্তদের লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়েছে এবং পাথর ছোঁড়া হয়েছে। এটা দেশের সার্বভৌমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’।