বিচারালয়েরও জানা দরকার এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন “পাশ ” করা জেনুইন লইয়ার

নাকতলার এক সেলুনে । দুই ভাই । এক ভাই ঘাড় টিপতেন, বডি ম্যাসাজ করে দিতেন ।
আরেক ভাই চুল কেটে দিতেন ।
দুজনেই এখন শিক্ষা দফতরের কর্মচারী । একজন গাড়ি চালান । আরেকজন গ্রুপ ডি তে কর্মরত ।

#

নাকতলার এক মিষ্টির দোকান । ভালো মন্দ মিষ্টির জন্য বিখ্যাত । তাঁর ছোট ছেলের ছোট ছেলে চাকরি পেলেন ইরিগেশনে, তার বউকে বাড়ি ডেকে কভিড কালে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিলেন শিক্ষা দফতরের গ্রুপ ডি তে ।

#

মন্ত্রীর সব থেকে কাছের কাউন্সিলর । তাঁর দহরমের বন্ধুর স্ত্রীর চাকরি হয়ে গেল সায়েন্স সিটির কাছে এক স্কুলে । টেট পরীক্ষা না দিয়েই ।

#

বান্টি সিনেমা হলের খুব কাছে হোটেল ছিল ছেলেটির । মন্ত্রীর বাড়ির খুব কাছে বাড়ি হওয়ায় চাকরি জোটালেন । এখন নাক তলায় চায়ের দোকানে দিবা রাত্র আড্ডা মারেন । মাসের শেষে গিয়ে মাইনে নিয়ে আসেন ।

#

মন্ত্রীর বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ টা বাড়ি দূরে। আগে বীরভূমে পোষ্টিং পেয়েছিলেন । এখন এসে গেলেন বিধান নগরে ।

#

স্বামী মারা গেছেন অল্প বয়সে । মন্ত্রীর বাড়ি যাওয়া আসার সুবাদে চাকরি জুটে গেল অচিরেই শিক্ষা দফতরে । পরীক্ষা ব্যতিরেকেই ।

#

কাহিনীগুলো শুনছিলাম নাক তলার এক অধিবাসীর কাছে । বললেন “কয়েকশ এমন কাহিনী আছে । গত ৫ বছরে শিক্ষা দফতরে কাজ পেয়েছেন তার সংখ্যা হাতে গুণে শেষ করা যাবে না । নাকতলা, বেহালা অঞ্চলে কয়েক শো এমন অবৈধ নিয়োগ আছে । সি বি আই তদন্ত করে দেখুক ।”

ভদ্রলোক মিষ্টির দোকানের নাম, সেলুনের নাম সব দিলেন, যাঁরা চাকরি এভাবে পেয়েছেন তাঁদের কারুর ডাক নাম, কারুর ভাল নামগুলো দিলেন । নামগুলো লিখলাম না এখানে তাঁদের পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে । মন্ত্রী মহোদয়টি কে, তাঁর প্রিয় পাত্র কাউন্সিলরটি কে সেগুলো বুঝে গেছেন আপনারা, লিখলাম না তাই ।

মহামান্য বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী এই প্যান্ডরা বাক্সেই হাত দিয়েছেন । ইতিমধ্যেই অনেকটা বে আব্রু করে দিয়েছেন এই সমুদ্র সমান দুর্নীতিকে । বিচারটাকেই একটা অন্য উচ্চতায় এক অসীম দ্রুততায় নিয়ে গেছেন যেখানে আসামী গুলোকে গরাদে ঢোকানো শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল । আইনি গেরোয় তা অথৈ জলে কি না সময় বলবে । কিন্তু দ্রুত গরাদে ঢোকানো দরকার তা বাংলা চাইছে ।

এই শনি সন্ধ্যাকাল আসন্ন বলে ম্যাডামও হয়ে গেলেন মরিয়া । বিচারপতির কাছে প্রভাবশালী দূত পাঠিয়েছিলেন । দূত শুধু প্রত্যাখ্যাত নয় বিচারপতি রাজ্যের এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে বিষয়টি জানিয়েও দিলেন । এমন অবস্থায় আপোসের কোন পথ আর খোলা ছিল কি ?

অগত্যা তৃণমূল প্রভাবিত বার এসোসিয়েশনকে নামিয়ে দিলেন । আবদার কি ? বিচারপতি গাঙ্গুলী যেন আর শিক্ষা দফতরের এই সমুদ্র সমান দুর্নীতির বিচার না করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করতে হবে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে । কি আবদার ভাবুন !!

ঠিক এই পর্যায়েই বাধ সাধলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি অরুণাভ ঘোষ । ফল কি হল ? তাঁকেও প্রহৃত হতে হল কোর্টের মধ্যে । বার বাবুদের হাতে । উত্তম মধ্যম ।

বার বাবুরা ঠিক কি চাইছেন তাহলে ? চাইছেন ওই যে সেলুনের ছেলেটি যিনি মন্ত্রীর দেহ ম্যাসাজ করতেন তিনি শিক্ষা দফতরে কাজ করুন নির্বিঘ্নে । যে ছেলেটি চুল কাটতেন মন্ত্রীর তিনি গ্রুপ ডিতে বহাল থাকুন । যে লোকটি মন্ত্রীকে নানান স্বাদের মিষ্টি খাওয়াতেন তাঁর পরিজন শিক্ষা দফতরে বহাল থাকুন । খোঁচা খুঁচি চলবে না । কারণ ?

কারণ মুখ্যমন্ত্রী এগুলো একদমই চাইছেন না । ভালো চোখে দেখছেন না । বার-বাবুরা তাই আজ পেটালেন অরুণাভ ঘোষকে ।

বার্তা খুব পরিষ্কার – বিচারালয়কেও পথে আসতে হবে । বিচারালয়েরও জানা দরকার এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন “পাশ ” করা জেনুইন লইয়ার । বিচারালয় যেন তাঁকে আইন না শেখায় । কে চোর তাই তিনি ঠিক করবেন । অন্য কেউ নয় । কতটা চুরি করলে সেটা চুরি হয়, চুরির পরিমাণ ঠিক কতটা হলে সেটা ডাকাতি হয়, সেসব তার মুখস্থ, কণ্ঠস্থ । সে অভিজ্ঞতা তাঁর আছে । বিচারালয় যেন একটু মনে রাখে ।

সেই বার্তা দিতেই আজ মাসীকে মেরে মাকে বার্তা দিলেন অনুপ্রাণিত বার-বাবুরা ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.