নে ভা র ল্যা ন্ড

ইমরান খানের ইন্টারভিউ দেখছিলাম। সাফ ভাষায় বলতে চাইলেন, ‘ইউক্রেনে যখন হামলা শুরু হয়, তখন রাশিয়াতে গিয়েছিলাম। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হুমকি দিয়েছিল, ইমরান বড় ভুল কাজ করলে।’ এখন যদি ইমরান নিজের পদ থেকে সরে যান, তাহলে হয়তো অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে মাফ করে দেবে। বরনা অঞ্জাম কুছ ভি হো সকতা হ্যায়।

আমার মনে পড়ে গেল বিগত শতাব্দীর সাতের দশকের পাকিস্তানি পলিটিক্সের কথা। জনাব ভুট্টো ঠিক করলেন নিউক্লিয়ার বোমা বানাবেন। এরপরে ভারত ‘বুদ্ধ হেসেছেন’ নামক বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিশ্বকে জানান দিল আমরা প্রস্তুত। ভুট্টো আবার হুঙ্কার দিলেন, ‘পাকিস্তান ঘাস খা লেগা লেকিন নিউক্লিয়ার বম্ব বনাকর রহেগা।’

জনাব ভুট্টো জোর কদমে এগোলেন। পাকিস্তানের এসব হরকতের ওপরে অ্যামেরিকা নজর রাখছিল। তাদের আবার বেশি লাফালাফি না-পসন্দ। তখন সম্ভবত মার্কিন মুলুকের সেক্রেটারি অব স্টেট ছিলেন কিসিঞ্জার। তিনি বললেন, ভুট্টো যদি এই প্রোগ্রাম না থামায় তবে অ্যামেরিকা পাকিস্তানের এমন দশা করবে যা পরবর্তী প্রজন্মদের কাছে শিক্ষণীয় হবে।

লারকানার মেজাজি ভুট্টো। তিনি বললেন, মরে যাব, তবু এই প্রোগ্রাম থামবে না।

রাশিয়ার হাত ধরলেন ভুট্টো।

অ্যামেরিকা তখন ভুট্টোর পেয়ারের লোক খুঁজতে লাগল।

পেয়ারের লোক কেন?

আজ্ঞে, পেয়ারের লোক হলে তবেই তাঁকে বিশ্বাস করবেন ভুট্টো। আর বিশ্বাস করলে তবেই না বিশ্বাসঘাতক হওয়ার সুযোগ মিলবে।

তা পেয়ারের লোক মিলল?

হ্যাঁ… হ্যাঁ। জিয়া – উল – হক। বলা হল, ভুট্টোকে থামাতে হবে।

কিন্তু কীভাবে? নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম তখন জোরকদমে চলছে। ওই সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের খুব খারাপ সম্পর্ক চলছিল। আফগান সরকার তখন খাইবার পাখতুনবা প্রদেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ফিনান্সিং করছিল। পাকিস্তানও বসে থাকার দেশ নয়। পালটা জবাব দেওয়ার জন্যে মুজাহিদিন তৈরি করছিল — কাবুল – সরকারের গদি উলটে দেবে এটাই তখন পাকিস্তানের মকসদ।

ইত্যবসরে ভুট্টোর বিরুদ্ধে হাওয়া উঠল পাকিস্তানে। অপোজিশনের নেতা বলি খান বয়ান দিলেন, ‘আমি একটা কবর খুঁড়ে রেখে এসেছি, এবার দেখতে চাই ওটায় আমি শুই নাকি ওই ভুট্টো।’

পাক আর্মির জেনারেল আরিফ ভুট্টোকে বলে দিলেন, আর্মি দেশকে কবজা করবে বলে ঠিক করছে। যত তাড়াতাড়ি পারেন বিরোধীদের সঙ্গে নিজের ঝামেলা মিটিয়ে নিন। ভুট্ট শ্রুড পলিটিশিয়ান–মিটিয়ে ফেললেন সব ঝঞ্ঝাট। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে জনাব ভুট্টোকে বন্দি করলেন জিয়া – উল – হক।

ভুট্টোর ফাঁসি হল। পাকিস্তান তখন অ্যামেরিকার ক্রীড়নক। পাকিস্তানে আর ভবিষ্যৎ নেই দেখে রাশিয়া এগোল আফগানিস্তানের জমির দিকে।

বিদ্দ্বজ্জনেরা বলেন, সেদিন অ্যামেরিকা কোটি কোটি ডলার ফাণ্ডিং করেছিল পাকিস্তানের আর্মির পিছনে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই — কিছুতেই রাশিয়াকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। রাশিয়া ইউক্রেন ইত্যাদিকে হাতিয়ে নিতে পারলে বিরাট সাফল্য পাবে জিওপলিটিক্সের বিচারে। গম পাবে। প্রাকৃতিক গ্যাস পাবে। আর এখান থেকেই শুরু হবে জিও পলিটিক্সের নতুন অধ্যায়।

ইমরান খানের জেল হতে পারে। নির্বাসন হতে পারে। মায় ফাঁসি হলেও অবাক হব না। এই পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ ওটা নেভারল্যান্ড। ওই দেশে কেউ বড় হয় না। কাউকে বড় হতে দেওয়া হয় না।

অভীক মুখপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.