কালবৈশাখী হোক না হোক, কাল বৈশাখ।

কাল নতুন বছর। বাঙালির যেটুকু খুদকুঁড়ো ঘটিবাটি সম্বল তার নতুন রঙচঙে চুষিকাঠি ওই একটিই, পয়লা বৈশাখ। ভিক্টোরিয়ার সামনে ছেঁচড়ে চলা বেতো ঘোড়াটির মত, ধর্মতলার শতাব্দীপ্রাচীন বারের ঘোলাটেচোখ বয়স্ক ওয়েটারের মত, বুড়ো অসুস্থ বাপ মায়ের দায় টেনে চলা মধ্যবয়সী অবিবাহিতা মেয়েটির মত সে ক্লান্তম্লান চোখে চেয়ে থাকে আমার দিকে। সে আমার চোখে চোখ রাখে, সে আমার হাতে হাত রাখে। তার সেই মায়াকোটরের টান পেরিয়ে পালাই, এমন জোর আমার কলজেয় আছে কই?

তবুও সে আসে। জলসাঘরের বিশ্বম্ভরের মত জীর্ণ জমিদারি তার৷ শতচ্ছিন্ন চোগা চাপকান পরে, শীর্ণ মাথায় রংচটা উষ্ণীষ চড়িয়ে আসে সে। আর সেই ফুরিয়ে আসা আলাদিনের প্রদীপের সামনে আমরা নতজানু হয়ে বলি, এসো হে নাথ এসো, রথ হয়ে, জয় হয়ে, কাব্য হয়ে এসো৷ এসো আমার দুধের ছানার রূপোর ঝিনুক হয়ে, আমার বউয়ের সোনার বাউটি হয়ে, আমার কিশোরী মেয়ের কাঁকন হয়ে, আমার বুড়ো বাপ মায়ের চোখে শান্তির ঘুম হয়ে।
আমি আরও বলি এসো হে আমার জীবনপ্রভু, এসো বাঙালি চাষীর গোলাভরা ধান হয়ে, বাঙালি শ্রমিকের কষ্টের ঘাম হয়ে। এসো বাঙালি ছেলের চাকরির চিঠি হয়ে, এসো বাঙালি মেয়ের উজ্জ্বল দিঠি হয়ে। এসো বাঙালি উদ্যোগপতির লক্ষ্মী হয়ে, এসো বাঙালির সম্মান আর সম্পদের রক্ষী হয়ে৷ আমাদের ঘরে যেন ধান থাকে, মান থাকে। হাতে যেন কাজ থাকে, মুখে যেন হাসি থাকে, বাছাদের মাঝে যেন ভালোবাসাবাসি থাকে৷

কাল নতুন বছর। ভালোবাসা থাক৷ উপার্জন থাক৷ সম্পদ থাক। সমৃদ্ধি থাক। বাঙালির কপালে যা যা লেখা ছিল, সব কিছু থাক। উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে। আগামীর আশা হয়ে। খুব ভালোবাসা হয়ে।

থাক।

অভীক সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.