দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্বলিত এক অনবদ্য দলিল ‘স্বতন্ত্রতা সংগ্রাম’ শীর্ষক এই দেওয়ালপঞ্জী। বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজ দন্ড রূপে, অর্থাৎ ভারতবর্ষের ভাগ্যে দেখা দিল ইংরেজ উপনিবেশবাদের এক অন্ধকারময কাল রাত্রি। আক্রান্ত হল দেশ। বিপন্ন হল মানুষের জীবন, জীবিকা, জীবন দর্শন। তবে এই আক্রমণ ও বিদেশী শাসন কে এদেশের মানুষ কখনোই বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয় নি। দুই শতাব্দী ব্যাপী ব্রিটিশ শাসন কালে ভারতবাসী দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে লড়াই চালিয়ে গেছে। যার ফল স্বরূপ দেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে একের পর এক বিদ্রোহ। ১৭৭০ এর সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, চুয়াড় বিদ্রোহ থেকে শুরু করে স্বাধীনতার প্রাক পর্বের নৌ বিদ্রোহ পর্যন্ত স্বাভিমানী জনগণ অত্যাচারী বিজাতীয় শাসককে কখনও শান্তির নিদ্রা উপভোগ করতে দেয়নি। দেশের ১২ টি বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্বলিত এক অনবদ্য দলিল ‘স্বতন্ত্রতা সংগ্রাম’ শীর্ষক এই দেওয়ালপঞ্জী।
২৮ চৈত্র ১৪২৮ (ইং ১২ এপ্রিল ২০২২) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহে স্বাধীনতার ৭৫ অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত আয়োজিত – “স্বতন্ত্রতা সংগ্রাম” (Struggles for Freedom) শীর্ষক দেওয়ালপঞ্জীর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। লোকার্পণ করেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী চণ্ডী চরণ দাস মহাশয়।
দেওয়ালপঞ্জীর তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব ছিলেন নীলাঞ্জনা রায়, প্রচ্ছদ কথা লেখেন অধ্যাপক রবিরঞ্জন সেন, ১২ বিদ্রোহের চিত্রাঙ্কন করে দেওয়ালপঞ্জী কে আকর্ষণীয় করে তোলেন শিল্পী পিন্টু কর্মকার, চিরন্দীপ মিত্র, দীপক দাস, জয়দেব বণিক, কনাদ দাস, জয়দীপ ভকত ও আদিত্য রায়।
নীলাঞ্জনা রায় বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সংস্কার ভারতী এই সাংস্কৃতিক দেওয়ালপঞ্জী প্রকাশ করে আসছে।ইতিমধ্যেই এই বিষয়ের উপর গবেষণা করছে একাধিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা। দেওয়ালপঞ্জীর ইতিকথা থেকে জানা যায়, প্রথম দেওয়ালপঞ্জী প্রকাশের সূচনা ১৪১২ বঙ্গাব্দ (ইং ২০০৫) তৎকালীন সংস্কার ভারতীর সভাপতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র শিল্পী, বর্তমানে সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা, ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত শ্রী ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেরণায়। প্রথম বছর দেওয়ালপঞ্জীর বিষয় ছিল ‘বাংলার পালাপার্বণ। সংস্কার ভারতীর শিল্পী সদস্যরা গবেষণামূলক এই দেওয়ালপঞ্জী প্রকাশের পরম্পরাটি বর্তমানেও অব্যাহত রেখেছেন। বিগত বিভিন্ন বছরে ভারতের সংস্কৃতি ভিত্তিক যে বিষয়গুলি নিয়ে দেওয়ালপঞ্জী প্রকাশিত হয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ভারতের উৎসব’, ‘ভারতের লোককলা’, ‘বাংলার দেবদেউল’, ‘নমন ১৮৫৭’, ‘ডাকঘর নাটকের শতবর্ষ’, ‘ভারতের নদনদী’, ‘ভারতের মহীয়সী নারী’, ‘ভারতের প্রাচীন নগরী’, ‘ভারতের গুহাশিল্প’ ও ‘বিবেকানন্দ শিলা স্মারক- কন্যাকুমারী।