দিদি দেখুন : শুধু ভোট এলেই বিদ্যুৎ আসে গ্রামে, জ্বলে ওঠে ইভিএমে আলো

গ্রামের স্কুলে সে দিন উৎসব। রাতেও যেন দিন। ঝকঝক করে চারপাশ। ভোট দেওয়া কখন শেষ, তবু সেই আলোর মায়া কাটিয়ে ঘরমুখো হতে ইচ্ছে করে না কারও। এই এক ভোটের দিনেই যে আলো জ্বলে ওঠে। হোক না সে শুধু ইস্কুলের চৌহদ্দিতে। তবুও বিজলি বাতি তো। ঘরে ঘরে অন্ধকার। তাও সে দিন যেন অনেকটা ফিকে হয়ে যায় দূর থেকে আসা আলোর ছটায়।

কাটোয়া মহকুমার অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের কলোনি গ্রাম। ভাগীরথীর গর্ভে সেই কবে থেকে একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে চরবিষ্ণুপুর গ্রাম। এখন কলোনি গ্রাম নামে এসে ঠেকেছে তার অস্তিত্ব। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে কয়েকশো পরিবারের সংখ্যা কমতে কমতে এখন মাত্র কুড়ি। এই ক’জন মানুষকে কে আর পাত্তা দেয়? নিজেরাই বলছেন গ্রামবাসীরা। তাই অনেক কিছুই নেই কলোনি গ্রামে। বিদ্যুৎ ও নেই। বিকেল গড়ালেই হ্যারিকেন ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করে রাখেন ঘরের গৃহিনীরা। সন্ধ্যা নামলেই বাড়ি বাড়ি জ্বলে ওঠে হ্যারিকেন। পড়াশোনা, গৃহস্থালি, অতিথি আপ্যায়ন সব সে আলোতেই। আর ইতিউতি জোনাকি পোকার মতো ঘোরে টর্চের আলো। সাপখোপ বাঁচিয়ে পথ চলতে।

গ্রামে টিভি নেই কোনও বাড়ি। তাই চন্দ্রযানের সফল উৎক্ষেপণ দেখা হয়নি কারও। মোবাইল আছে কয়েকজনের। যাঁরা কাজেকর্মে রোজ বাইরে যান, কেবল তাঁদের। চার্জ দেওয়ার কাজটুকু যাতে সেখানেই সেরে আসতে পারেন। একমাত্র আলো জ্বলে ভোটের দিন। অস্থায়ী ভাবে দূরের কোনও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে টেনে আনা হয় বিদ্যুৎ। গ্রামের স্কুলে জ্বলে ওঠে আলো। ঘোরে পাখা।

কলোনির মানুষ উদয়, হারাধন, সাধনরা বলছেন, “যেখানে কয়েকশো গ্রামবাসী হার মেনেছে, সেখানে বোধহয় প্রশাসনও মানসিক জোর হারিয়েছে। কলোনি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সময় নষ্ট করতে চায় না বিদ্যুৎ দফতর। তাঁরা বারবার দরবার করতে গেছেন। কিন্তু ফিরে আসতে হয়েছে খালি হাতে। বলা হয়েছে, সংযোগ দিয়েই বা কী হবে? আর তো কয়েকটা বছর। চর বিষ্ণুপুর গ্রামের মতোই কলোনী গ্রামটাই তো তলিয়ে যাবে নদী গর্ভে। তখন বৃথা যাবে বিদ্যুৎ দপ্তরের শ্রম।”

অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায়ই যেমন জানালেন, “গ্রামটাই তো নেই। যেটুকু আছে সেটুকুও হয় তো তলিয়ে যাবে। বিদ্যুৎ দেব কোথা থেকে? ওদের অন্য জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে।”

সেই পুনর্বাসন যে কোথায় তা অবশ্য জানেন না তাঁরা, এমনটাই দাবি কলোনি গ্রামের মানুষদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.