মাথার ট্রেড মিল কি হয় ? জানা আছে কারুর ।

মাথা আর সাথ দিচ্ছে না ।

একটা মাথা তাতে অনুব্রতকে বাঁচানোর চিন্তা, অভিষেক, রুজিরা, মেনোকাকে নিয়ে চিন্তা, এস এস সি র ঘোটালা ধরা পড়ে যাওয়ার চিন্তা, মলয় ঘটককে ডেকেছে সেই চিন্তা, পার্থকে কবে ডাকবে সি বি আই সেই চিন্তা, একসঙ্গে নেওয়া যায় এত সব ?

আমি হলে পারতাম না । কি করতাম ?
স্রেফ বলতাম হিজ হিজ হুজ হুজ। যে যা অপকম্ম করেছ দায় নাও তার । আমি চললুম।

বলতাম তো বটে । কিন্তু তারা কি ছাড়ত? বলত সব করেছি তোমার জন্য । এখন পালালে হবে ? ভাইপো বলতো ২০১৯ র নির্বাচনের সব টাকা গরু, কয়লা থেকে তুলে দিয়েছি । এখন আমি খারাপ ? স্ত্রী খারাপ ? শালী খারাপ ? বিনয় খারাপ ? না হয় আমি বিদেশে অনেক সরিয়েছি । দলকে দিয়ে তো সরিয়েছি । সেটা কি অস্বীকার করতে পারবে ?

পারব না । যেটা সত্যি অস্বীকার করব কি করে ?

অনুব্রত বলবে দিনের পর দিন গরু, কয়লা, পাথর, বালি থেকে ট্রাংক ট্রাংক নগদ পাঠিয়েছি ভাইপোর শান্তিনিকেতনে । পুলিশি পাহারায় । তখন মনে ছিল না ? এম পি হতে চেয়েছি ? এম এল এ হতে চেয়েছি ? আমি যা কামিয়েছি ৯০ শতাংশ তোমাদের কলকাতায় পাঠিয়েছি । হায়েস্ট পেড জেলা করেছি । সব ভুলে গেলে ? এই অল্প সময়ে ? হ্যাঁ এটা ঠিক তুমি আমায় ১৮ জনের সেন্ট্রাল কমিটির একজন মেম্বার করেছ । কল্যাণ ব্যানার্জীকে জায়গা দাওনি আমাকে দিয়েছ । আমার প্রায় কিছু না হওয়া সত্বেও উডবার্ন ওয়ার্ডে রাণীর জামাইয়ের স্টেটাস দিয়েছ । চিকেন উইথ মাটন স্যুপ খেতে খেতে তোমার বৌমার কথা ভীষণ মনে পড়ছে । ও থাকলে বলত দিদি এই বয়সে ওর ওপর থেকে তোমার হাতটা তুলে নিও না । প্লিজ দিদি ।
ও নেই আমি বলছি যা করেছি দলের জন্য করেছি । আজ সত্যি ভীষণ ভয় লাগছে উডবার্নের এই আধো অন্ধকার ঘরে । বাসন্তী পুজোর ঢাকের আওয়াজ কানে আসছে । চড়াম চড়াম । ভয় লাগছে দিদি ভয় । তার ওপর আমার দলেরই লোকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে কত না রঙ্গ করছে । লিখছে শুনলাম – অনুব্রতর ওভারিতে সিস্ট খুঁজে পেয়েছে ডাক্তাররা । আমরা জেলা জুড়ে যজ্ঞ করব ।

সয় এসব বল দিদি ?

ওদিকে পার্থ বলছে যা কিছু করেছি মমতা তোমার নির্দেশ মত করেছি । এখন হাত তুললে আমি কোথায় যাব ? সি বি আই ডাকব ডাকব করছে । যে কোনোদিন ডাকবে এবং আমার সেলফ ডিফেন্সের জায়গাটা খুব লিমিটেড । এস পি সিনহা সব ফাঁস করে দিয়েছে । এবার কল্যাণময়, সুবিরেশরা বাকিটা করে দেবে । আমি যাব কোথায় ? মমতা প্লিজ কথা বল, কিছু তো বল ! তুমি বল আমি যে সাড়ে ৮ বছর দায়িত্বে ছিলাম শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছি সেটা তুমি ভরা ঘরে মাঝে মাঝেই ববি, অরূপ, সুব্রতর সামনেই বল। আমি অস্বীকার করিনি কিন্তু এটাও তো ঠিক যে সব থেকে বেশী লোক নীতি বহির্ভূত ভাবে এই দফতরে ঢুকিয়েছি তোমারই পরামর্শে । আজ শ্রীঘরে গেলে তার কি কোন দায় নেই তোমার বা দলের ? বল মমতা, বল। কথা বল । কি চুপ কেন মমতা ? আজ কুণালকে দিয়ে প্রায় প্রতিদিন আমাকে লাথি মারাচ্ছে তোমার ভাইপো শ্রীমান । স্পেশ্যাল কোর্টে গিয়েও বলে এসেছে আই কোরের জন্য আমাকে নাকি ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো উচিত ছিল ? এটা আমার প্রাপ্য ? আমাকে নামেই তুমি মহা সচিব করে রেখেছ । আর কুণালকে দিয়ে লাথি মারাচ্ছ ? ঠিক হচ্ছে বল মমতা বল । চুপ কেন তুমি ?

মমতা তখনও চুপ । পার্থ কি খুব ভুল বলেছে ? অনুব্রতর কোন কথাটা ভুল ? কুণালকে দিয়ে রিভেঞ্জ নিচ্ছে ভাইপো বেশ বুঝছেন । কিন্তু কি করবেন ? কি করা উচিৎ ? ভাইপোই বা এমন করছে কেন ? সব গুলিয়ে যাচ্ছে । আমি প্রধানমন্ত্রী হলে ও সি এম হত । গোয়া ত্রিপুরার অভিসারের পর এটা বুঝেছি পি এম হওয়া আর এ জন্মে হবে না । তাই বলে সি এম পদ এখনই ছেড়ে দিতে হবে ওকে ? এ কেমন বায়না ?

সব গুলিয়ে যাচ্ছে । সব । কিছু মিডিয়া অবাধ্য হচ্ছে, সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে । বুদ্ধিজীবিগুলো একমাত্র এখনও বশে আছে, কথা শুনছে । গরমেন্টের অবাধ্য হচ্ছে না । কি যে করি কে জানে !

আজ হাঁসখালিতে দিন মজুরের ১৫ বছরের মৃত মেয়েটাকে নিয়ে তাই কি সব হাবি জাবি বলে ফেললাম ! মেয়েটার শুনেছি এফেয়ার ছিল । এফেয়ার থাকলে ধর্ষণ হয় কি করে ? আর অন্তঃসত্বা হলে খুন তো নাও হতে পারে । এমনি এমনি শরীর খারাপ হয়েও মরে যেতে পারে । তাও তো হতে পারে । তাহলে তৃণমূলের আর দোষ কোথায় ? আরও এরকম হাবি জাবি কত কি যে বলে ফেললাম মিলন মেলায় সরকারি অনুষ্ঠানে । সামনে আই এ এস, আই পি এস সব শ্রোতা হিসেবে বসিয়ে রেখে । ওরা আমার কথা শুনে মনে মনে সব হাসছিল, বেশ বুঝছিলাম যখন বলছিলাম ।

মাথাটা আর সত্যিই কাজ করছে না ইদানিং । বুঝি কিন্তু কিছু করার নেই । বড্ড চাপ । নিতে পারছি না আর । মাথাটার একটু ফাইন টিউনিং দরকার ।

মাথার ট্রেড মিল কি হয় ? জানা আছে কারুর । জানাবেন আমাকে । ঠিকানা – “নবান্ন ” ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.