আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হেনস্থার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে তলব করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রবিবার টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, ‘ভাইরাল হওয়ায় ভিডিয়োয় যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে তার প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিবকে আগামীকাল দুপুর ১টার মধ্যে সর্বশেষ পরিস্থিতির তথ্য নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।’ সঙ্গে ধনখড় টুইটে আরও লিখেছেন,‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে যেখানে আইন লঙ্ঘনকারী দুর্বৃত্তরা আইনের ভয় ছাড়াই তাদের পথ চলছে, আইন মান্যকারীদের জন্য অবশ্যই ভয়ঙ্কর দৃশ্য’। নিজের টুইটটির সঙ্গে উপাচার্য হেনস্থার ভিডিয়ো শেয়ার করেন রাজ্যপাল।
এই প্রথমবার নয়। এর আগেও একাধিক ইস্যুতে রাজ্যপাল মুখ্যসচিবকে রাজভবনে তলব করেছেন। কোনও ক্ষেত্রে রাজভবনে গিয়েছেন মুখ্যসচিব। আবার কখনও যাননি। তাই সোমবার দুপুর ১টায় মুখ্যসচিব রাজ্যপালের ডাকে সাড়া দিয়ে আদৌ রাজভবনে হাজির হবেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে প্রশাসনিক মহলে। কারণ ২০১৯ সালের জুলাই মাসে রাজ্যপালের দায়িত্বে আসার পর থেকেই একাধিক ইস্যুতে রাজভবনের সঙ্গে সঙ্ঘাত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী-সহ তাঁর ক্যাবিনেটের একাধিক সদস্যের সঙ্গেও বাগযুদ্ধ চলেছে রাজ্যপালের। গত আড়াই বছরে বার বার এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ বারের ঘটনা তৃণমূল যে সমর্থন করে না তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের অস্বস্তি কাটেনি। আর মুখ্যসচিবকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়ে রাজ্য সরকারকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন রাজ্যপাল, এমনটাই মত রাজনীতির কারবারিদের।
প্রসঙ্গত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাঁকে চড় মারার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্রনেতা গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল। উপাচার্যের ঘরে রীতিমতো তাণ্ডব করেন গিয়াসুদ্দিন-সহ আরও কয়েকজন যুবক। এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতে শিক্ষামহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর পর রবিবার অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভাইরাল ভিডিয়োয় উপাচার্য মহম্মদ আলিকে উদ্দেশ্য করে গিয়াসুদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওই গালে দুটো চড়িয়ে দেব। আমার চড়ে প্রচুর লাগে। যে ক’টা তোর ছেলে আছে জিজ্ঞেস করে নিবি।’’উপাচার্যের ঘরে রীতিমতো তাণ্ডব করেন গিয়াসুদ্দিন-সহ আরও কয়েকজন যুবক। এর পর রবিবার অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে টেকনো থানার পুলিশ।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিগ্রহে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিনকে দু’বছর আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল। লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই বিবৃতিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তিকে উপাচার্যের উপর আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে, তাঁকে ২০১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোনও রকম সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরও জানান, ‘সম্প্রতি আলিয়া নিয়ে একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কিছু বহিরাগতকে মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। আমরা তৎক্ষণাৎ সেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’