দিদি দেখুন: বর্ষা এলেই স্কুলের সামনে কোমর জল, কাদা মাখামাখি ক্লাসঘরে কী আর পড়বে পড়ুয়ারা

বর্ষা আসে নিয়মমাফিক। আর বর্ষা এলেই স্কুল ভেসে যায়। এটাই দস্তুর। আজ অন্তত তিন বছর ধরে। তাই খররোদে পুড়তে পুড়তেও দেরিয়া জামবেরিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা কখনও ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে গান গায় না।’ বৃষ্টি এলেই যে জল থইথই স্কুল, ক্লাসঘরে সাপের ভয়, কাদা মাখামাখি স্কুলে ক্লাসঘরটাও আচমকা যেন ছোট হয়ে যাওয়া। কারণ বেশিরভাগ জায়গাটাই যে হয়ে পড়ে বসার অযোগ্য।

কুলপির দেরিয়াতে জামবেরিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাই বর্ষায় পড়তে আসে না বেশির ভাগ পড়ুয়া। জানা গেল স্কুলটি নিচু জায়গায়। তাই বর্যায় গোটা গ্রামের নিকাশিজল এসে জমা হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। ভরে ওঠে স্কুলের উঠোন। এবং তা ছাপিয়েই একাকার হয়ে যায় ক্লাসঘর, মিডডে মিল খাওয়ার ঘর, টয়লেট।

গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন বিবি বললেন, বৃষ্টি নামলে আর স্কুলে পাঠাই না মেয়েকে। জলের মধ্যে জুতো খুলে খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। বারবার ঠাণ্ডা লেগে যায়। রান্নাঘরেও জমে থাকে নোংরা জল। সেখানে তৈরি খাবার খেয়ে পেটের অসুখে ভোগে। এই সময় বড় সমস্যা হয়, জানেন? অনেক বার বলেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয় না।

আরেক পড়ুয়ার মা আমিনা বিবির কথায়, ছেলেকে ভয়ে পাঠাই না স্কুলে। খাওয়ার জলের কলের নীচেও নোংরা জল। যদি জল খেয়ে কিছু খারাপ হয়, তাছাড়া ক্লাসঘরে পোকামাকড়- সাপের উৎপাত হয়। অনেকবার মাস্টারমশাইদের বলেছি। কিছু হয়নি। তাই বর্ষার সময় ছেলেকে বাড়িতেই বসিয়ে রাখি।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সত্যপ্রিয় মণ্ডলের অবশ্য দাবি, বহুদিন ধরে এই সমস্যা চলে আসছে। বারবার তিনি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোরঞ্জন ময়রা অবশ্য পুরো সমস্যাটাই জানেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “গ্রামের জল নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যার জেরেই এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে এই স্কুলকে।” এই সমস্যা মেটানো হবে বলে আশ্বাস তাঁর। কিন্তু কবে? তা অবশ্য নিশ্চিত বলতে পারেননি তিনি।

কুলপি ব্লকের স্কুল সার্কেল ইন্সপেক্টর নাসিরউদ্দিন মিস্ত্রি বলেন, “বৃষ্টি হলেই যে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নাকাল হন, তা আমরা জানি। কত তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা দেখে নিচ্ছি। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”

এত আশ্বাস যে অন্তত এই বর্যায় পূরণ সম্ভব নয়, বিলকুল বুঝেছেন পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু পরের বর্ষাতেও কি একটা ঝকঝকে ক্লাসঘরে বসে পড়াশোনা করা সম্ভব হবে? যদি দিদি দেখেন একটু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.