AFSPA: উত্তরপূর্বের বহু এলাকা থেকে সরছে আফস্পা! নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অসম কোন আশায় বুক বাঁধছে?

সবেমাত্র হয়েছে সিদ্ধান্ত ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা। তারই মাঝে আফস্পা আইন নিয়ে অমিত শাহের মন্ত্রকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত উত্তরপূর্বের বুকে বিজেপির জমি কতটা শক্ত করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ৩১ মার্চ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, নাগাল্যান্ড, অসম, মণিপুরের যে সমস্ত জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদ ঘিরে অশান্তি কমে গিয়েছে, সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা আফস্পা। যে আইন আলাদা করে বিশেষ কিছু অশান্তিপ্রবণ এলাকায় বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়েছে সেনাকে। প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রের নয়া সিদ্ধান্তে উত্তরপূর্বে কোন আশায় বুক বাঁধছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফস্পার মতো বিশেষ আইন উত্তরপূর্বে বিজেপির জমি পোক্ত করতে সাহায্য করবে। আফস্পা সরানো নিয়ে বহু দিন ধরেই উত্তরপূর্বের একাধিক রাজ্য দাবি দাওয়াতে সরব হয়েছে। সরব হয়েছে সেখানের বিভিন্ন সংগঠন। তার মাঝে সেই দাবি ঘিরে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সদ্য পদক্ষেপ করা শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ‘সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, একটা সময় শুধুমাত্র অসমেই শুধু ছিল ৬০ টি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী। গত ৫ বছরে ১৬ টি জঙ্গি সংগঠন আত্ম সমর্পণ করেছে। স্বাক্ষর করেছে শান্তি চুক্তিতে। এই মুহূর্তে উলফা ও কামতাপুর একমাত্র সংগঠন যারা বিচ্ছিন্নতাবাদ ঘিরে উত্তরপূর্বে সক্রিয়। ‘সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল’ বলছে, ২০০১ সালে যেখানে উত্তরপূর্বে জঙ্গিদের হাতে ৫৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে গত বছর জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা ২৯। ২০১৪ সালে যেখানে উত্তরপূর্বে জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা ১৮৭ জন ছিল, সেখানে ২০২১ সালে নভেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সংখ্যা ১৮৭ জন ছিল। এই সময়কালে সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর পরিসংখ্যানও কমে এসেছে। এই পরিসংখ্যান খোদ কেন্দ্র রেখেছে সংসদে। এমন প্রেক্ষাপটে এদিকে, ২০২১ সালে নাগাল্যান্ডে সেনার গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে আফস্পা প্রত্যাহার ঘিরে দাবি আরও জোরালো হতে পারে। তড়িঘড়ি নাগাল্যান্ড বিধানসভা আফস্পা প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাশ করে। দাবি জোরালো হতে থাকে উত্তরপূর্বে। এরপর আসে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নাগাল্যান্ডের ইউয়েনসাং, সামতোরে, সেমিন্যু থেকে উঠে যাচ্ছে আফস্পা। কেহিমা, ওখা, লোংগেং থেকে আংশিক আফস্পা উঠে যাবে। তবে মায়ানমার সীমান্তের কয়েকটি জায়গা থেকে এখনই উঠছে না এই আইন। কারণ সীমান্তের ওপারে নাগাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইউং আংয়ের সক্রিয়তা বিভিন্ন সময়ে টের পাওয়া গিয়েছে।জনপ্রিয় খবর

এদিকে, মণিপুরে ১৫ টি পুলিশ স্টেশন এলাকা থেকে উঠে যাচ্ছে আফস্পা। সেখানে সেকামাই, পাটসই, লামলাই, লামসেং, থৌবাল, বিষ্ণুপুর সহ একাধিক জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে আফস্পা আইন। সেখানের ৬টি জেলার এই ১৫ টি পুলিশ স্টেশন আপাতত আফস্পার বাইরে থাকছে। যদিও ইম্ফল উপত্যকা এলাকায় সেভাবে প্রভাব নেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। প্রসঙ্গত, গোটা পরিস্থিতি নিয়ে অসমের মুখ্যমন্তরী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, ‘AFSPA অসমের সীমানার ৬০ শতাংশ জায়গা থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত রাতারাতি নেওয়া হয়নি কিছু মহলের দাবির ভিত্তিতে। যাতে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল হয়, তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ 

মানবাধিকার কর্মীবাবলু লোইটংবাম বলছেন, ‘এটা সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ। তবে এটি লড়াইয়ের শেষ নয়, সম্পূর্ণভাবে আফস্পা সরিয়ে নিতে আমাদের লড়াই চলবে।’ উল্লেখ্য, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উত্তরপূর্বের ২৩ টি জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে আফস্পা, অসমের একটি জেলা থেকে আংশিক ও তিনটি জেলা থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়া হবে এই আইন। নাগাল্যান্ডের ৪ টি জেলা থেকে আংশিক ও মণিপুরের ৬ টি জেলার ১৫ টি পুলিশ স্টেশন এলাকা থেকে আংশিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে এই আফস্পা আইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.