বিবেক অগ্নিহোত্রীর দ্যা কাশ্মীর ফাইলস সিনেমাটা দেখে আসলাম। আমি সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যারা এই হাউজফুল হয়ে যাওয়া সিনেমার টিকিটের জন্য চারিদিকে আক্ষরিক অর্থেই হাহাকার চলার মাঝে নিজের টিকিট পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার পক্ষে ধৈর্য্য ধরে রাখা সত্যিই মুশকিল ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় আধ ঘন্টা আগেই আমি হলে পৌঁছে গিয়েছিলাম। বহুদিন ধরেই সিনেমাটি রিলিজ হওয়া আটকে যাচ্ছিল। আমিও বহুদিন ধরে অপেক্ষা করে ছিলাম। ফলে আজ সত্যিই আর অপেক্ষা করার ক্ষমতা ছিল না।
ইতিহাস ভিত্তিক সিনেমার বিষয়বস্তু অবশ্যই আগে থেকে জানতাম। যদিও একে শুধুমাত্র সিনেমা বললে ঠিকমতো বর্ণনা দেওয়া যায়না। এ হল দলিল‚ কাশ্মীরের নারকীয় ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। যেদিন কাশ্মীরের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে হিন্দুদের গণহত্যা করেছিল তাদেরই ভিন্নধর্মী প্রতিবেশীরা।
আজ থেকে প্রায় ৩১বছর আগে ১৯ শে জানুয়ারি নিজেদের পিতৃপিতামহের ভূমি ছেড়ে দলে দলে রিফিউজি হতে হয়েছিল কাশ্মীরদের।
কাশ্মীরি আইডেন্টিটি একসময় হিন্দুদের ছিলো। তারপর একদিন ওরা আসল। বলল আমরা তোমরা ভাই ভাই। ধর্ম আলাদা হলেও আমাদের রক্তের রং একই। আমরা উভয়েই একই বৃন্তে দুটি কুসুম।
তারপর শুরু হলো ব্যাপক হারে ডেমোগ্রাফির পরিবর্তন। নিজেদের ভূমিতে ক্রমশঃ সংখ্যালঘু হতে শুরু করলেও কাশ্মীরি পন্ডিতরা কিন্তু এই সময় চোখ বুজে ছিলো।
আর তারপর একদিন? কাশ্মীর জুড়ে আওয়াজ উঠল – রালিভ‚ গালিভ ইয়া চালিভ। হয় আমাদের সাথে এসো (ধর্মান্তরিত হও) নয় মরো আর নয়তো চলে যাও ( কাশ্মীর ছেড়ে )!
শুরু হল কাশ্মীর জুড়ে গণহত্যা!
আরো বলা হল‚ “কাশ্মীর বানেগা পাকিস্তান, ভট ভরয়ে, ভাটনি সান।” অর্থাৎ , কাশ্মীর হবে পাকিস্তান, পন্ডিতদের ভাগিয়ে কিন্তু পন্ডিতপত্নীদের রেখে দিয়ে! ওদের নিয়ে যাদের ন্যূনতম পড়াশোনা আছে তারাই জানেন বিধর্মী মেয়েদের প্রতি ওদের সীমাহীন লালসার সম্পর্কে।
সিনেমা দেখতে দেখতে প্রতিটি মূহুর্ত যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল আমার কাছে। নিজেই যেন শুনতে পারছিলাম প্রত্যেকটাদিন সকাল সন্ধ্যে ওদের হুঙ্কার – রালিভ‚ গালিভ ইয়া চালিভ। অনুভব করতে পারছিলাম শীতের রাতে হঠাৎ একদিন মাইকিং হল- এই (কাশ্মীরের ) মাটি হিন্দু আর শিখদের না। কালকের মধ্যে যেন ঘর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাই অন্য রাজ্যে। আর তারপরই শুরু হল পুরুষদের গনহত্যা! আর মেয়েদের ধর্ষণ করে গণিমতের মাল ভোগ করার উল্লাস। সুন্দরী হলে তাদের ওখানেই বন্দী করে রাখা হবে। বানানো হবে যৌনদাসী। যেতে দেওয়া হবে না অন্য রাজ্যে। নিজের হৃদয় দিয়েই যেন বুঝতে পারছিলাম নিজেদের আজন্ম পরিচিত জন্মভূমিকে ছেড়ে রাতারাতি পলিথিনে ঢাকা রিফিউজি ক্যাম্পে উদ্বাস্তু হয়ে ওঠার যন্ত্রনাকে। সাক্ষী হচ্ছিলাম কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদ‚ কুচক্রী কমিউনিস্ট আর বিদেশী অর্থসাহায্য পুষ্ট NGO দের দ্বারা কাশ্মীরি হিন্দু গনহত্যাকে ভুলিয়ে দেওয়ার হীন চেষ্টার।
সিনেমাটিতে কাশ্মীরের সৌন্দর্য‚ সুন্দর সুন্দর উপত্যকা, হিমালয়ের তুষারাবৃত চূড়া, সুন্দর ডাল লেক, লম্বা পুরনো চিনার গাছ, মশলাদার সুস্বাদু কাশ্মীরি খাবার সবকিছুই দেখালেও তা সবকিছুই ম্লান হয়ে যায় হিন্দু গনহত্যার সামনে।
প্রসঙ্গত কদিন আগে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখছিলাম বিবেক অগ্নিহোত্রী এবং পল্লবী যোশীর প্রায় 20 মিনিটের প্রশ্নোত্তর সেশনের। সেই ভিডিওর লিঙ্ক আমি এখানে জুড়ে দিলাম। সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি ভিডিওটি অবশ্যই দেখতে। সেই গনহত্যা ও উদ্বাস্তুকরণের শিকার কয়েকজনের কথা আপনি নিজের কানে শুনতে পাবেন সেখানে।
পরিশেষে শুধু একটা কথাই বলব যে সিনেমাটা কলকাতা সহ রাজ্যের প্রায় সব জায়গাতেই এসেছে। যদিও প্রথমে তা আসেনি। প্রথমে কলকাতার মাত্র দুটো হলে এসেছিল। পরে সাধারণ মানুষের চাপে পড়ে সমস্ত হল সিনেমাটি আনতে বাধ্য হয়।
সবাইকে অনুরোধ করছি নিজের যথাসাধ্য বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়দের য়ে এই ফিল্মটি অবশ্যই দেখুন। এই সিনেমাটা কিন্তু বহু মানুষের ভাবনাচিন্তা পরিবর্তন করে দিতে পারে।
আর একবার যদি পরিচালকরা হিন্দু গনহত্যা নিয়ে সিনেমা বানানোর সাহস পেয়ে যায় ( কারণ দিনের শেষে মার্কেটই দ্বিতীয় ঈশ্বর ) তাহলে কিন্তু নোয়াখালী – কলকাতা – মোপলা – বরিশাল – মুম্বাই – মীরপুর – গোপাষ্টমী – ১৯৭১-১৯৪৬ সহ যাবতীয় হিন্দু গনহত্যা নিয়ে সিনেমা হতে থাকবে আর ইহুদিদের মতো আমাদের জাতির গনহত্যাও আন্তর্জাতিক মহল জানতে পারবে। যে স্বীকৃতিটা আমাদের কিন্তু অত্যন্ত দরকার