১৯৮৯ এর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই কাশ্মীরে আতঙ্কবাদীদের দাপাদাপি শুরু হয়ে যায়। রাজ্য সরকার সমস্ত রকম কর্তব্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল, কোনও রকম প্রশাসন ছিলনা ওখানে। আতঙ্কবাদীদের হুংকারে পুরো কাশ্মীর তখন কাঁপছে, এমন মনে হত ভারতীয় হওয়া একটা গালাগাল। আতঙ্কবাদীরা হিট লিস্ট জারি করত, যে সব মানুষ ভারতের সমর্থক ছিল, তাদের ওরা শত্রু হিসাবে দেখত। ভারত সমর্থকদের মারা জেহাদ ছিল, সেটা পূণ্যের কাজ বলে মনে করা হত। কাশ্মীরি পন্ডিতদের নিশানা বানিয়ে মারা হত।
সামাজিক কর্মী টিকালাল টাপলুকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার ওপর মারা হয়। নিলকন্ঠ গন্জুকে মেরে তার দেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। উকিল প্রেমনাথ ভট্টকে নৃশংস ভাবে মেরে, অনন্তনাগের রাস্তায় গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। প্রচুর পন্ডিতদের রোজ হত্যা করা হত।
১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাস আফতাব সংবাদপত্রে হিজবুল মুজাহিদিনের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, সব হিন্দুদের কাশ্মীর ছাড়তে হুকুম জারি করা হয়। আর একটা সংবাদপত্র আলসাবাতেও একই প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছিল। তারপরে এই বিজ্ঞপ্তি কাশ্মীরি হিন্দুদের ঘরের দরজায় দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হল। শেষ দিন দেওয়া হল ১৯শে জানুয়ারি ১৯৯০। হাজার হাজার মুसलिম সশস্ত্র ভাবে কাশ্মীরের রাস্তায় ঘুরতে লাগলো, পুরো কাশ্মীরের মসজিদ থেকে ঘোষণা হতে লাগল- কাশ্মীর পাকিস্তান হবে, মুজাহিদিনদের প্রশংসায় চারিদিকে গুনোগান করা হতে লাগল।
“জাগো জাগো শুভা হুই, রুসনে বাজী হারি হ্যায়। হিন্দপে লড়না তারি হ্যায়, আব কাশ্মীরকি বারি হ্যায়।” এই গান বারংবার মসজিদ থেকে বাজানো হতে লাগলো।
আরও ঘোষণা করা হলো- “আগর কাশ্মীরমে রহনা হ্যায়, আল্লাহু আকবর কহেনা হোগা। এ জালিমো, এ কাফিরো কাশ্মীর হামারা ছোড় দো।”
এ ছাড়াও একটা কথা বলা হত- “কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান, পন্ডিত আদমিও কে বগর, লেকিন পন্ডিত অউরতে কে সাথ।”
এবারে ভয় একটা নতুন রূপ নিয়েছিল, বাড়ির মেয়েদের স্টোর রুমে লুকিয়ে রাখা হত। যদি কোনও ভীড় হামলা করে, যাতে ওরা নিজেদের গায়ে আগুন লাগিয়ে জ্বলে যায়। পুরো কাশ্মীর জুড়ে একই ছবি ছিল। এই অবস্থায় কাশ্মীরি পন্ডিতরা যেটুকু সম্বল পারলো নিয়ে, ট্রাক, বাস, ভাড়ার ট্যাক্সি করে কাশ্মীর ছেড়ে পালাতে শুরু করল। এই সময় সব বুদ্ধিজীবী আর সেকুলারদের কারুর মুখ থেকে কোনও কথা বেরোয়নি।
১৯শে জানুয়ারির পর থেকে কাশ্মীরি হিন্দুদের আতঙ্কবাদীরা খুন করতে শুরু করল। বাঁদিপুরাতে শিক্ষিকা গিরিরাজ টিক্কুকে গনধর্ষণ করে হত্যা করা হল, এরকম প্রচুর ঘটনা রোজ ঘটতে লাগলো। এই সময় প্রশাসন মুক বধিরের মত আচরণ করতে লাগল। কাশ্মীরি হিন্দুদের ওপর হওয়া অত্যাচারকে না দেখার ভান করছিল।
১৯৯১ এর মধ্যে বেশীরভাগ হিন্দু কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল, তাদের জম্মুতে কাঁটা আর ধুলোয় ভরা টেন্ট শিবিরে রাখা হল। যেখানে শৌচাগারের মত সাধারণ সুবিধাও ছিলনা। এক একটা টেন্টে ১০ থেকে ২০ জনকে রাখা হত। এই শিবির গুলোতে প্রচুর লোকের মৃত্যু হয়, বেশীরভাগ মৃত্যু সাপের কামড়ে অথবা অত্যধিক গরমের কারণে হয়েছিল।
কাশ্মীরি পন্ডিতদের মরার জন্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের বাড়ি, ঘর, মন্দির সব কিছু গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল। যে সামান্য কিছু হিন্দু তখনও কাশ্মীরে ছিল, তাদের এক একটা পরিবারকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারা হত, এমনকি এই মুজাহিদিনরা দু মাসের বাচ্চাকেও ছাড়েনি।
এই ভয়াবহ অত্যাচারের পরেও কোনও কাশ্মীরি পন্ডিত কিন্ত হাতে বন্দুক তুলে নেইনি। তারা আশায় আছে, একদিন তারা এর বিচার পাবেই।
হ্যাঁ এই সত্য ঘটনার ওপরেই বানানো হয়েছে বিবেক অগ্নিহোত্রির “দা কাশ্মীর ফাইলস”। যেখানে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, পল্লবী যোশী, পুনিত ইসারের মতো খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতারা। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া বা বলিউডের বিগ বসরা এই ছবির প্রচার করবেনা। ১১ই মার্চ শুক্রবার, আর তিনদিন পর ছবিটা মুক্তি পাবে। তাই আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে এই ছবির প্রচারের, যাতে আরও মানুষ কাশ্মীরি হিন্দুদের ওপর ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ নরসংহারের সম্বন্ধে জানতে পারে। যে ঘটনা সেই সময়ের ভি পি সিং-এর সরকার থেকে সব মিডিয়া চেপে দিয়েছিল।
আপনাদের অনুরোধ যে, “দ্য কাশ্মীর ফাইলস” এই মুভিটি আপনার বন্ধুদের সাথে যেকোন সিনেমা হলে দেখুন এবং উপলব্ধি করুন যে কীভাবে সত্য (হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিত গণহত্যা) জনসাধারণের থেকে গোপন রাখা হয়েছিল। এটি আপনার চোখ এবং মন খুলে দেবে।