শেষ কয়েকদিন ধরে বিস্কুট, জুস খেয়ে কাটাতে হচ্ছিল। তাই মঙ্গলবার সকাল ছ’টায় কার্ফু উঠতেই দোকানে ছুটে যান। যাতে অত্যন্ত একবেলা ঠিকভাবে খাবার খেতে পারেন। সেই খাবার কিনতে গিয়েই ক্ষেপণাস্ত্র হানায় মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকের ছেলে নবীন শেখারাপ্পার (২১)।ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
মঙ্গলবার সকালে নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। কিছুক্ষণ পরেই এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জিনিসপত্র কেনার জন্য টাকা ট্রান্সফার করতে বলেন। তারপর মুদিখানা দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। যে দোকান তাঁর ফ্ল্যাট থেকে মেরেকেটে ৫০-৬০ মিটার দূরে অবস্থিত। খারকিভ থেকে ফোনে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে নবীনের ফ্ল্যাটমেট অমিত বৈশ্বনভর বলেন, ‘আমরা ওই সময় ঘুমাচ্ছিলাম। কারণ আমরা রাত সাড়ে তিনটে-চারটে পর্যন্ত জেগেছিলাম। আমরা জানি না যে ও কখন বেরিয়ে গিয়েছিল।’
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ নবীন না ফেরায় তাঁকে ফোন করতে থাকেন বন্ধুরা। অবশেষে এক ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের এক বাসিন্দা ফোন ধরেন। তাঁর ভাষা একবর্ণও বুঝতে পারেননি নবীনের বন্ধুরা। অমিত বলেন, ‘আমরা সেই ভাষা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আমাদের ফ্ল্যাটের এক মহিলার কাছে ছুটে যাই। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি কাঁদতে থাকেন। কিন্তু কী হয়েছে, তা বোঝাতে পারছিলেন না। তখন এক ব্যক্তি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জানান যে আমাদের বন্ধু মারা গিয়েছে।’ তাঁরা জানতে পারেন, মুদিখানা দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে গোলাবর্ষণে মৃত্যু হয়েছে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ার। যিনি ক্লাসের ‘টপার’ ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনটে নাগাদ একটি টুইটবার্তায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা নিশ্চিত করতে পারছি যে আজ সকালে খারকিভে গোলাবর্ষণে এক ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। মৃত পড়ুয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে বিদেশ মন্ত্রক। পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘খারকিভ-সহ যে সব জায়গায় সংঘাত হচ্ছে, সেখানকার ভারতীয়দেের দ্রুত সুরক্ষিতভাবে যেতে দেওয়ার দাবি আরও জোরালোভাবে জানানোর জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দূতকে তলব করেছেন বিদেশসচিব। রাশিয়া এবং ইউক্রেনে আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও একই পদক্ষেপ করেছেন।’
নবীনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, স্কুল ও কলেজ জীবনের বেশিরভাগটাই মাইসুরুতে কাটিয়েছিলেন ২১ বছরের মেডিকেল পড়ুয়া। তারপর মেডিকেল পড়ার জন্য ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে পূর্ব ইউরোপের দেশে থাকছেন। নবীন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, সেখানে প্রায় ৩,০০০ জন ভারতীয় আছেন। তাঁদের প্রায় ১০ শতাংশ পড়ুয়াই কর্নাটকের। যাঁরা এখনও খারকিভে রয়ে গিয়েছেন, নবীনের মৃত্যুর পর তাঁরা আতঙ্কে ভুগছেন। অমিতরা জানিয়েছেন, বাড়ি বা বাঙ্কার কোথাও সুরক্ষিত নেই তাঁরা। পাগলের মতো সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছেন। ভারতীয় দূতাবাসের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, দূতাবাসের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।