“মা কালী, মহাদেব-পার্বতী, শিব লিঙ্গ এবং মা দুর্গা নিয়ে কিছু কথা”


মা কালী ন্যাংটো রক্ত পিপাষু, মহাদেব গাজা খোর উন্মাদ, শিব লিংগ পুরুষ এবং মহিলাদের যৌন অংগ এবং সর্ব শেষে শোনা গেলো মা দুর্গা নাকি বারবনিতা। হা ঈশ্বর আর কতো কি শুনবো ? এখন তো আবার এই সব সোসাল মিডিয়াতে ছড়ানো হচ্ছে হিন্দু দেব দেবীদের সম্বন্ধে কার্টুন বানিয়ে। সেই কার্টুন প্রথমে দেখেছি কয়েক বছর আগে , এক কবি শিব লিঙ্গের মাথায় কন্ডম পরিয়েছিলেন। তখন ও প্রতিবাদ করে লিখেছিলাম। সম্প্রতি একজন তৃতীয় শ্রেনীর অভিনেত্রী যিনি আবার শাসক দলের উচ্চপাদাধিকারি নেত্রী , তিনি সেই একই কার্টুন পোষ্ট করেছেন। একজন মহিলা হয়ে এমন কুরুচিকর পোষ্ট করতে তার খারাপ লাগলো না। বাঙ্গালীরা আবার একে হয়তো ভোট দেবে। আমি চাই তিনি জিতুন। আর আমি কোনো কালে যদি টিকিট পাই তাহলে দেখা হবে। অবশ্যই আমার মুখের ঝাঝ তার সইতে হবে।

এই সব অশ্লীল কথা শুনে এসেছি দুটো ‘সিমেটিক’ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম গুরুদের মুখ থেকে, যারা চায় এইসব কথা বলে হিন্দুদের অপমানিত করার জন্য। সম্প্রতি শুনছি আমাদের দেশেরই এক ‘বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়ের’ মুখ থেকে। এরা বেশীর ভাগই হিন্দু বাবা মায়ের সন্তান। এক শ্রেনীর হিন্দুরা এই সব শুনে কানে তালা লাগিয়ে ‘অপরিসীম সহিষ্ণুতার’ পরিচয় দিচ্ছে আর ওই অসভ্য লোক গুলোর থেকে ‘অসহিষ্ণু’ বলে গাল খাচ্ছে। খুব ভালো কথা। আরো বেশী করে গালাগাল খান, আর কাপুরুষের মতো মেয়েদের আচলের তলায় মুখ লুকিয়ে বসে থাকুন।

আমি যেটুকু বুঝি তাই বলি, শোনার হলে শুনুন, বোঝার হলে বুঝুন।
প্রাচীন কালে এই ভারত বর্ষে এক শ্রেনীর জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেন যাদের আমরা (সনাতনীরা) বলি মুনি বা ঋষি।এরা ছিলেন সত্য দ্রষ্টা। মহাবিশ্বে যে এক অনন্ত ‘চৈতন্য’ ( Universal Conciousness) শক্তি বিরাজমান সেই বিশ্বচৈতন্য শক্তির সংগে নিজেদের (প্রতিটি প্রানীর মধ্যে যে শক্তির কনা বর্তমান আত্মা রূপে) চৈতন্য শক্তিকে ‘যোগ যুক্ত’ করে সেই জ্ঞানী সত্য দ্রষ্টারা জানতে পেরেছিলেন মহা বিশ্বের সৃষ্টি রহস্য। মহা বিশ্বের ‘চৈতন্য শক্তিকে তারা নাম দিয়েছিলেন ‘পরমাত্মা, পরম পুরুষ, ঈশ্বর” এই সব নামে। তিনিই সব সৃষ্টি করেছেন এবং নিজেকে সেই সৃষ্টির মধ্য বহুরুপে সুক্ষাকারে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সৃষ্টী কর্তা হচ্ছেন পরমাত্মা- বিশ্ব আত্মা, আর দৃশ্যমান সব জীবাত্মা-প্রানী মানুষ ইত্যাদি।

বর্তমান উন্নত বিজ্ঞান আজো যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি, সবে কিছু কিছু খোজ পাচ্ছে ( Quantum Physics ) সেই খোজ প্রাচীন সত্য দ্রষ্টাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিলো । কনাদ মুনির বৈষেশিক দর্শন এবং কপিল মুনির (গংগাসাগরের কপিল মুনি) সাংখ্য দর্শনে সেই সৃষ্টী রহস্য বলা আছে। এই মুনি ঋষিরা চেয়েছিলেন সাধারন মানুষ এটাকে জানুক এবং সৃষ্টী কর্তাকে স্মরন করুক, মনন করুক এবং পরমাত্মার সংগে এক সাযুজ্য তৈরী করে এই মহা বিশ্বে প্রবাহমান আনন্দ ধারার ভাগীদার হোক।

একজন অজ্ঞানীকে কি করে Quantum Physics এর জ্ঞান দেবেন??? তাই নানা সহজ সাধারন পদ্ধতি হলো সৃষ্টী রহস্যের উদারহরন স্বরুপ নানা চিহ্ন (symbol) তৈরী। চাইনিজ ভাষার কোনো হরফ নেই। সব টাই এক একটি চিহ্ন বা সিম্বল।

সৃষ্টি হয় পূরূষ এবং প্রকৃতি দিয়ে। সাংখ্য দর্শনের “পুরূষ-প্রকৃতি পঞ্চ বিংশতি (২৫ টী) তত্ব” পড়ুন জানতে পারবেন। পুরূষ এবং প্রকৃতির মিলন হয়, হয় সৃষ্টী। পুরূষ মহাবিশ্বের ধনাত্মক শক্তি (Positive force) , প্রকৃতি (ক্ষিতি , অব,তেজ, মরুত,ব্যোম) ঋনাত্মক শক্তি (Negetive force). Sodium positively charged, chloride negatively charged. মিলে গেলে অর্থ্যাৎ এই দুইয়ের মিলন হলে হয় কি??? লবন, যা আমাদের কাজে লাগে।

প্রকৃতিতে নিয়মের ব্যাত্যয় হলে সৃষ্টিতে ধংস শুরু হয়। ঋনাত্মক এবং ধনাত্মক শক্তির ছাড়াছাড়ি হলে ঋনাত্মক শক্তি প্রলয়াংকারী হয়-যেমন ধনাত্মক প্রোটন থেকে ঋনাত্মক ইলেকট্রনকে ছাড়িয়ে নিয়ে ‘ এ্যটম বোমা” বানানো হয়।

এই পুরুষ শক্তিকে আপনি মহাদেব রুপে কল্পনা করলে দোষ কোথায় হলো?? সাধারন মানুষ যদি মহাদেবকে দেবাধিদেব (দেবতাদের মধ্যে আদি অর্থ্যাৎ প্রাচীন তম আদি পুরুষ হিসাবে ভক্তি করে ,তার মুর্তি গড়ে তাকে স্মরন করে তাহলে সেই হিন্দুরা কি করে জংলী হয়ে গেলো????) এবং ঋনাত্মক প্রকৃতি শক্তিকে মা কালী বা মা দুর্গা রূপে সন্মান করেন ভক্তি করেন তাহলে কি সেই বিশ্বের সৃষ্টি শক্তিকে সন্মান ভক্তি করা হলো না???
সৃষ্টিতে ভালো যেমন আছে মন্দও তো আছে। জাপানকে পরাজিত করতে তো সেই ঋনাত্মক শক্তিকেই ব্যবহার করা হয়ছিলো। প্রলয়ংকরী মা কালী বা মা দুর্গা কে তো ওই দানব বা দৈত্য রুপী মন্দ শক্তিকে ধংস করতেই হাতে খড়্গ ধরতে হয়েছিলো। ঋনাত্মক শক্তি ধনাত্মক শক্তির সংগে যুক্ত হলেই তবে সৃষ্টিতে শান্তি ফিরে আসে। সেই জন্যই মা কালী কে শান্ত করতে মহাদেবকে তার পায়ের তলায় এসে পড়তে হয়। আমরা হিন্দুরা তো সেই শান্ত রুপকেই ভজনা করি।

সৃষ্টীর দানবীয় শক্তি মহিষাসুরকে ধংস করতে তাই মা দুর্গাকে মর্ত্যে আসতে হয়, শান্তি স্থাপন করতে। মা দুর্গা বারবনিতা বলে যারা কটাক্ষ করেন, তারা জেনে রাখুন, এই সৃষ্টিতে মায়েরা কেউ নিজ ইচ্ছায় বেশ্যা হয় না। দানব রুপী কিছু ব্যাটা রাই তাদের জোর জুলুম করে ওই কাজে প্রবৃত্ত করতে বাধ্য করে। আমরা হিন্দুরা সেই অপমানিত মাতৃ শক্তিকেও সম্মান করি। তাই, মা দুর্গা রূপী মাতৃ শক্তির আরাধনায় ক্ষুব্ধ, অপমানিত মায়েদের বোনদের সম্মন জানিয়ে তাদের বাড়ীর মাটি এনে সম্মান জানাই। এই বোধ এবং বোধদয় নারী শক্তির অবমাননা কারী বুদ্ধি জীবিদের বুদ্ধির ঘটে কোনো দিন ঢূকবে না।

পিতা মাতা যখন এক সন্তানকে জন্ম দেন তখন এক নতুন সৃষ্টি হয়, যে সৃষ্টি এই বিশ্ব সৃষ্টির এক ক্ষুদ্র রুপ এবং অংশ মাত্র। সেখানেও লাগে পিতৃ শক্তি (পুরুষ) এবং মাতৃ শক্তি (প্রকৃতি)। এই দুইয়ের মিলনেই সৃষ্টি-যেমন মহা বিশ্ব তেমনি আমাদের এক একটি ক্ষুদ্র বিশ্ব।

শিব পার্বতীর সেই মিলন ( মহা বিশ্বের পুরুষ শক্তির সংগে মাতা রুপী প্রকৃতির সেই মিলনই সৃষ্টি রহস্যের মুল) বোঝানোর অতি সহিজ উপায় হিসাবে মুনি ঋষিরা ‘কৈলাস পর্বতকে মহাদেব এবং তার চারিপাশের খাদ কে পার্বতী রুপে কল্পনা করে আমাদের দিয়ে গেছেন ‘শিব লিংগ”। এই রুপকে কোনো সাধারন যৌন রুপ দিয়ে মানুষ জনকে বিভ্রান্ত এবং লজ্জা দেবেন না। আপনাদের মা ,বোণ,মাসিমা পিসিমা কেউ না কেউ এই শিব-পার্বতি রুপী সৃষ্টী তত্বকে সম্মান করেন, ভক্তি করেন। শিব রাত্রির পুন্য লগ্নে আপনাদের মা বোন কে লজ্জায় ফেলবেন না।

ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.