রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধজ্ঞায় ক্ষতি সব দেশেরই

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সব দেশেরই অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে কমবেশি। রাশিয়া তেল সরবরাহ বন্ধ করে নিজের আয় বন্ধ করবে না , যেমন ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ও বন্ধ করেনি। জার্মানির প্রয়োজনীয় তেল গ্যাস অন্য দেশ দিয়েও আমদানি করতে পারবে, খরচ , ফলে ইনফ্লেশন বাড়বে।

যে সব রাশিয়ান ব্যাঙ্ক-এর উপর পশ্চিমারা কয়েকদিন পূর্বে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, সেই ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) যোগাযোগ বন্ধ করেছে। তবে যে সব ব্যাংকের মাধ্যমে পশ্চিমাদের ব্যবসার, যেমন তেলের লেনদেন চলে, সেই ব্যাঙ্কগুলোর উপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। অর্থাৎ তেল গ্যাস কেনার টাকা পশ্চিমারা আগের মতোই পরিশোধ করতে পারবে। তা হলেও পশ্চিমাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন কমবে! এখন পশ্চিমারা যদি অন্য দেশকে চাপ দেয়, তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ‘সুইফট’ লেনদেন করতে পারবে না, সে ক্ষেত্রে যদি সেই ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে এতদিন ব্যবসায়িক লেনদেন চলে থাকে, তা হলে সেই দেশগুলোর সমস্যা হবে সেই ব্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে আমদানি রফতানি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে।

অন্যদিকে পশ্চিমারা আর রাশিয়ার সরকারি বন্ড কিনতে পারবে না, তাতে রাশিয়ান সরকার পশ্চিমা দেশে সরকারি ঋণপত্র বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে পারবে না। চীন বেশি বন্ড কিনবে, চীনের উপর নির্ভশীলতা বাড়বে রাশিয়ার।

তবে রাশিয়ার বাজেট গত কয়েক বছর ধরে উদ্বৃত্তই ছিল। রাশিয়া ও চীন অবশ্য তাদের নিজস্ব ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করার জন্য সিস্টেম বানিয়েছে। রাশিয়ান সিস্টেম এর নাম SPFS (System for Transfer of Financial Messages)

চীনের আছে CIPS (Cross-Border Interbank Payment System) . এবার তারা এই সিস্টেমে অন্য দেশের সঙ্গে লেনদেন বাড়াতে চেষ্টা করবে!

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ায় বিশ্বব্যাপী দ্রব্য মূল্য বাড়বে। করোনার কারণে অর্থনীতি এমনিতেই ২ বছর ধরে ধাক্কা খেয়েছে, আরও ধাক্কা খাবে ! বেকার বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে পরোক্ষভাবে অনেক দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

তবে রাশিয়ার অবস্থা কোনোমতেই ইরানের মতো হবে না। তবে রাশিয়ার আমদানি রফতানি কমবে। তাতে সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ সামরিক খাতে ব্যবহূত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ সেমিকন্ডাক্টর আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়াতে, রাশিয়া সময়মতো চুক্তির অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না, রাশিয়ার সঙ্গে যাদের অস্ত্র কেনার চুক্তি হয়েছে, যেমন ভারত, তাদের সমস্যা হতে পারে।

বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের যন্ত্র সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হবে কিনা বলা মুশকিল। কোন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেন হয়, সেটা একটা ফ্যাক্টর, তেমনি পশ্চিমারা ঢাকাকে চাপ দেবে কিনা, এখনো বলা যায় না।

তবে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ ইউক্রেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলে পুতিন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে শীঘ্রই একটা মিটমাটের জন্য আলোচনায় বসবেন, অনুমান করা যায় ।

মৃণাল মজুমদার, বার্লিন

.

.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.