সেদেশ ধীরে ধীরে কার্যত ধ্বংসপুরীতে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। ইউক্রেনে রুশ হামলার কয়েকদিন কেটেছে মাত্র। তবে তারই মাঝে ইউক্রেনের আকাশে ঢুকে নিরন্তর হামলা চালাচ্ছে রুশ যুদ্ধ বিমান। দিকে দিকে আছড়ে পড়ছে বোমা, ত্রাহি ত্রাহি রবে আশ্রয়ের খোঁজ করছেন বাসিন্দারা। এমন অবস্থায় ইউক্রেনের সামরিক শক্তির ইতিহাস কিন্তু বহু দাপুটে খতিয়ান তুলে ধরছে। ২৮ বছর আগে এই ইউক্রেনই ছিল বিশ্বের তৃতীয় পরমাণু শক্তিধর দেশ।
যে দেশ ২৮ বছর আগে পরমাণু শক্তিতে বলিয়ান ছিল, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি ঘিরে বহু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের সাংসদ অ্যালেক্সি গোঞ্চারেঙ্কো জানিয়েছেন, পরমাণু শক্তিতে ইউক্রেন বলিয়ান হয়ে উঠতেই পশ্চিমী দেশগুলি ইউক্রেনকে অস্ত্র ছেড়ে দিতে বলে। আর সেই সময় আমেরিকা ও রাশিয়ার থেকে সুরক্ষা গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতিতে পরমাণু অস্ত্রের রাস্তা থেকে সরে যায় ইউক্রেন। ফ্রান্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালেক্সি জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেন মানব ইতিহাসে একমাত্র রাষ্ট্র, যারা ১৯৯৪ সালে আমেরিকা, ব্রিটেন, আর রাশির সংঘ থেকে সুরক্ষার গ্যারান্টি পেতেই দুনিয়ার তৃতীয় পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়েও ছেড়ে দেয় অস্ত্র। এই গ্যারান্টি এখন কোথায়?এখন আমাদের উপর বোমা বর্ষণ হচ্ছে, আমরা মরছি।’ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এনরি জাহোরোদনিউকও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ আমরা বিনা কিছু লাভ করে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রশক্তি ছেড়ে দিয়েছি।’ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
প্রসঙ্গত, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র, সমগ্র সোভিয়েত পারমাণবিক অস্ত্রাগারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ, ইউক্রেনের মাটিতে থেকে যায়। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেন যখন আলাদা দেশ হয়, তখন রাশিয়ার এক-তৃতীয়াংশ অস্ত্র ইউক্রেনের কাছেই থেকে যায়। সেই সময় ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (এফএএস) অনুযায়ী, ইউক্রেনের প্রায় তিন হাজার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। এই অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন দেশের সামরিক ঘাঁটি, সাঁজোয়া গাড়ি, বন্দরে আঘাত হানবার পরিকল্পনা করছিল ইউক্রেন। এছাড়াও তাদের কাছে ২০০০ স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্রও ছিল।
এরপর আসে ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বরের তাবড় কূটনৈতিক বৈঠক। বুদাপেস্টে ইউক্রেন, বেলারুজ ও কাজাখস্তান, রাশিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের বৈঠক হয়। ইউক্রেন, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার ফলে বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম নামে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই সময় ইউক্রেন, পশ্চিমি দেশের আর্থিক সহায়তায় নিজের পারমাণবিক অস্ত্রাগার এবং সরবরাহ ব্যবস্থা যেমন বোমারু বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সম্মত হয়েছিল। পারমাণবিক অস্ত্র যাতে সম্প্রসারণ না হয়, তার চেষ্টা করেই ইউক্রেন ভিন দেশের বার্তায় সায় দিয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে বুদপেস্ট মেমোরেন্ডামের লঙ্ঘন করে রাশিয়া। উল্লেখ্য, পুতিন বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামকে বাতিল বলে সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন কারণ এটি পূর্ববর্তী ইউক্রেন সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে বর্তমানে পুতিনের দাবি, ইউক্রেন এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায়। পুতিনেও এও দাবি যে ইউক্রেনের কাছে সোভিয়েত পরমাণু হাতিয়ারের বহু নক্সা রয়েছে।