হিন্দু জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থানের সময়কার বোদ্ধাদের মুখগুলো একবার স্মরণ করুন, স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, সিস্টার নিবেদিতা, শ্রীঅরবিন্দ থেকে নিয়ে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ডঃ মেঘনাদ সাহা, ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, স্যার যদুনাথ সরকার পর্য্যন্ত, দেখবেন এক অবিচ্ছেদ্য বহমান বৌদ্ধিক ধারাবাহিকতা।
হিন্দু জাতীয়তাবাদের আঁচ এই বাংলার বুক থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে, ডক্টরজী থেকে নিয়ে বীর সভারকারদের অনুপ্রাণিত করেছিল, সারা দেশ আজ যার সুফল অনুভব করছে। যে ভারতমাতার শান্তমূর্তি অবনীন্দ্রনাথের কল্পনায় ধরা দিয়েছিল, পরবর্তীকালে কালের প্রয়োজনে জনমানসে তিনিই আনন্দমঠের শক্তিস্বরূপিনি দেবীরূপ ধারণ করেন।
ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উৎসস্থল এই বাংলা। বন্দে মাতরম মন্ত্রের যে পংক্তিগুলি কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়েছিল, তাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই ভাবধারার মূলমন্ত্র। তা স্বত্বেও শুনতে হয় আমরা বাঙালিরা নাকি মূলত বামপন্থী, শুনলে হাসি পায়। সারা দেশ আজ যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারায় স্নাত, এই ভাবধারা রাষ্ট্রনীতিতে যখন নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে, এমতঅবস্থায় এর উৎসস্থল কি করে আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকতে পারে?
হ্যাঁ, দেশভাগের পর এক বৃহদাংশ বাঙালি কয়েক দশক বামপন্থীদের মিথ্যে স্তোকবাক্যে ভুলে হটাৎ করে বড্ড বেশি আন্তর্জাতিক হবার চেষ্টা করেছিলেন, ফলতঃ ভিয়েতনামের দুঃখে কাতর হলেও, মরিচঝাঁপির গণহত্যা তাঁদের অনেককেই ছুঁতে পারতো না। কিন্তু প্রত্যেক জাতের তো একটা বিশিষ্ট ডিএনএ থাকে, সেটার প্রভাব কতদিন ভুলিয়ে রাখা যায়? পশ্চিমবঙ্গবাসীকে তার স্বরূপ ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। চেষ্টা হয়েছিল যাতে সে ভুলে যায় তার মুখ্য পরিচয় সে বৈদিক হিন্দুস্তানের নাগরিক, সে এক প্রাচীন সর্বংসহা বহুত্ববাদী হিন্দু সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক, যেখানে রূঢ়বাদী একমুখিয়তার কোন স্থান নেই।
যে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদের আবরণ উন্মোচিত হয়েছিল, এবার সেই পশ্চিমবঙ্গেই এই ভাবধারা পূর্নতা পাবে বলেই আমার স্থির বিশ্বাস। বাংলার সন্তান ডঃ মুখার্জির আত্মবলিদান বিফলে যায়নি, আজ তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি জাতীয়তাবাদী সরকারের দ্বারা কাশ্মীরের ভারতভুক্তি সম্পুর্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো এমন অনেক ঘটনা ঘটবে যার সূত্র আমাদের এই রাজ্যের মনীষীদের মস্তিষ্কপ্রসূত। এটা হবারই ছিল। স্বাভাবিক চারিত্রিক প্রবণতাকে অস্বাভাবিকতার গোঁজামিল দিয়ে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যায়না।
মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব