রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ আদৌ কি মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চকে সমর্থন করে?

বিষয়টি ক্লিয়ার করা প্রয়োজন‚ অত্যন্ত প্রয়োজন।

মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ না কোন এক সংগঠন নাকি হিজাব বোরখা এসব সাপোর্ট করেছে। ফলে হিন্দুত্ববাদীদের একটা অংশ আর সেকুলার মিডিয়ারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ক্রমাগত প্রচার করে যাচ্ছে যে আরএসএস-এর একটা শাখা সংগঠন নাকি হিজাব বা বোরখা এই টাইপ পোশাকগুলো পড়া সাপোর্ট করেছে। কেউ কেউ তো আবার এতটা দূরত্ব রাখারও ধৈর্য্য রাখতে পারছে না। তারা সরাসরি প্রচার করছে যে এটা আরএসএস বলেছে এমনকি মোহন ভাগবত নাকি বলেছে যে হিজাব পরা উচিত‚ হিজাব ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হ্যানো ত্যানো এক্স ওয়াই জেড। সেকুলার মিডিয়া এই রকম প্রচার করবে সেটা স্বাভাবিক। এতে কোন ভুল দেখিনা। সাম দাম দন্ড ভেদ চিরকালের রাজনীতির বিষয়। ওরা ভুল প্রচার করে হিন্দুদের মধ্যে ভেদ আনছে আর আমরাও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছি কিছু না বুঝেই।

বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা যাক।

প্রথম কথা হচ্ছে যে আরএসএস এর শাখা সংগঠন বলে কিছু হয় না। স্রেফ কিস্যু হয় না। মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ‚ বিজেপি‚ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ‚ বজরং দল – এরা কেউই আরএসএস এর শাখা সংগঠন নয়। শাখা সংগঠন কনসেপ্টটাই সঙ্ঘে নেই। একসময় সম্ভবত ছিল কিন্তু এখন এদের বলা হয় সমমনোভাবাপন্ন সংগঠন অর্থাৎ তাদের ধ্যান-ধারণা মানসিকতা কিছুটা হলেও সংঘের সাথে মেলে। যদিও এটা বাইরের দিক থেকে। আর টেকনিক্যাল দিক থেকে বলতে গেলে যেসব সংগঠন আরএসএস এর কাছে কাজের সুবিধার জন্য প্রতিনিধি চায় তারাই সমমনোভাবাপন্ন সংগঠন। যেমন বলা যায় বিজেপির কথা। অনেকের ধারণা যে বিজেপি- আরএসএস একই। বিজেপিকে আরএসএস চালায় বা এই ধরণের যেসব মিথ বাজারে আছে। বিজেপি আরএসএস-এর থেকে সাহায্য চায় তাই পায়। অন্য কোন দল যদি চায় তারাও পাবে। ভারত সরকার এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও যদি চায় এবং আরএসএস সেখানে সাহায্য করা উচিত বলে মনে করে তবে সাহায্য পাবে। আমরা জানি যে নেহেরু সরকার ভারত-চীন যুদ্ধের সময় দিল্লিতে ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য আরএসএস এর সাহায্য নিয়েছিল কিংবা কাশ্মীর বা হায়দ্রাবাদের ভারতে অন্তর্ভুক্তি সময় আরএসএস ভারত সরকারকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু তার মানে তো এটা না যে ভারত সরকার আরএসএস এর শাখা সংগঠন। এরা সাহায্য চায় তাই পায়। মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চও ঠিক সেটাই। ওরা স্বাধীন। ওরা কি করছে না করছে তাতে আরএসএস এর কোন কর্তৃত্ব নেই। ঠিক যেমন কর্তৃত্ব নেই বিজেপি কি করছে না করছে তার উপরে।

হয়তো কোনদিন এরা সঙ্ঘের থেকে প্রতিনিধি চায় বা কোন অনুষ্ঠানে বক্তা চায় তার মানে এটা না যে এরা কি করছে না করছে তার দায় সংঘের। এটা একেবারে সিম্পল হিসাব।

তাহলে এবার প্রশ্ন করতে পারেন আরএসএস তাহলে করেটা কি?

উত্তর হল আরএসএস কিছুই করে না। ওরা স্রেফ একটা মানুষকে কিছু করার যোগ্য বানিয়ে তোলে। তার সে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী হোক বা আমাদের রাষ্ট্রপতি হোক উপরাষ্ট্রপতি হোক বা পাড়ার কোনো সাধারণ স্বয়ংসেবক হোক। একটা কথা তো বাজারে প্রচলিতই আছে যে “সঙ্ঘ কিছু করে না / স্বয়ংসেবক কিছু ছাড়ে না”!

আরএসএস একটা মানুষকে কিছু করার যোগ্য বানিয়ে দিল। এবার সে চাইলে রাজনীতি করুক‚ চাইলে শ্রমিক সংগঠনগুলো বা ব্যবসা করুক কিংবা চাকরি করুক বা যা কিছু করুক সেটা তার ব্যাপার।

কোন স্বয়ংসেবক বা কোনো সমভাবাপন্ন সংগঠন এর উপর আরএসএস এর কোন কর্তৃত্ব নেই বা আদৌ কোন দিন ছিল না।

অনেকের এমন কিছু ধারণা আছে‚ তা সেটা পজিটিভ হতে পারে বা নেগেটিভ হতে পারে যে আরএসএস এর হয়তো একটা বিশাল প্যারা মিলিটারি ফোর্স আছে যারা কাল হোক বা পরশু হইহই করে ভারতের সব মুস*মান মারতে বেরিয়ে যাবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আরএসএসের এমন কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা কার্যপদ্ধতি বা উদ্দেশ্য কিছুই নেই।

তাহলে কি আছে?

একটা মানুষকে বিভিন্নভাবে তৈরি করে দেওয়ার সিস্টেম আছে। তারপর সে চাইলে নরেন্দ্র মোদি হয়ে বিজেপি করুক বা আমরা যে জানি এই শুভেন্দু অধিকারীর কথা‚ এখন না হয় বিজেপি করছেন কিন্তু একসময় তৃণমূলে ছিলেন তিনিও দ্বিতীয় বর্ষ সম্পন্ন করা স্বয়ংসেবক। সেসব তার নিজস্ব ব্যাপার।

বিষয়টি জেনে রাখা ভালো নয়তো মিথ্যে আশা হোক বা অন্ধ বিরোধিতা হোক বা আতঙ্ক হোক বা অন্য যাকিছু হোক কিছুই আরএসএসের নামে জড়িত থাকা উচিত নয়।

এবার একটা মানুষকে কিভাবে তৈরি করা হয় এক্স্যাম্পল দিচ্ছি কথা উঠেছে যখন। প্যারেড করাটা। আরএসএস প্যারেড করে‚ আর্মি প্যারেড করে‚ পুলিশ প্যারেড করে। আমি ভাবতাম এই প্যারেড লাগেটা কোন কাজে? এখানে না কোন ব্যায়াম হয় না অন্য কোন উপকার হয়। বাট এখানে জানলাম যে এই প্যারেড এর মাধ্যমে নিজেদের সঙ্গীদের সাথে সমানভাবে পা মিলিয়ে চলার ট্রেনিং হয়। অর্থাৎ আমি বেশি যেতে পারি বলে বেশি যাব না আবার বেশি যেতে পারিনা বলে অন্যের থেকে কম যাব তাও হবেনা। আমাকে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর পরবর্তীতে সমাজে হোক‚ কোন সংগঠনে হোক বা আর্মিতে হোক বা অন্য যেকোনো জায়গায় হোক‚ যেখানে অন্যের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হয় সেখানে কাজে লাগবে এই ট্রেনিং। এটাই হচ্ছে প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে সঙ্ঘের শিক্ষা। এটা জাস্ট একটা উদাহরন দিলাম। এরকম অনেক কিছুই আছে।

এখন কথা এই যে কোন সামাজিক – অর্থনৈতিক – রাজনৈতিক – ধর্মীয় বা অন্য যেকোন বিষয়ে আরএসএস হস্তক্ষেপ করে না ওরা শুধুমাত্র স্বয়ং
সেবক দের তৈরি করে।

তার পর স্বয়ংসেবক কোথায় কি করবে কি বলবে কাকে সাপোর্ট করবে তার কোনো দায় আরএসএসের নেই।

হ্যাঁ সরসঙ্ঘচালক বা অন্যকোনো স্বয়ংসেবক ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল মতামত জানাতেই পারে‚ কিন্তু কোনো বিষয়েই হস্তক্ষেপ করে না।

মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের ব্যাপারেও ঠিক একই কথা।

সৌভিক দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.