১৯৯৯ সালের ৬ই আগস্ট দিনটি ছিল সংঘের স্বয়ংসেবক দের কাছে এক বেদনাদায়ক দিন। সেদিন ত্রিপুরা রাজ্যের কাঞ্চনপদ নামে একটি বনাঞ্চলে অবস্থিত রত্নামণি আশ্রম থেকে সংঘের চার প্রবীণ কার্যকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এনারা হলেন পূর্বাঞ্চল ক্ষেত্র কার্যবাহ শ্রী শ্যামল সেনগুপ্ত, বিভাগ প্রচারক শ্রী সুধাময় দত্ত, উত্তর ত্রিপুরা জেলা প্রচারক শ্রী শুভঙ্কর চক্রবর্তী এবং প্রান্ত শারীরিক প্রমুকব শ্রী দীপেন দে।শ্রী শ্যামল সেনগুপ্ত একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী আধিকারিক ছিলেন, বাকি তিন জন প্রচারক ছিলেন।
এক বিবৃতিতে ত্রিপুরার জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট (NLFT) অপহরণের দায়ভার গ্রহণ করে তাদের মুক্তি দানের জন্য দুটি শর্ত আরোপ করে, প্রথমটি হল ত্রিপুরা রাজ্য রাইফেলস এর বিলুপ্তিকরন ও দ্বিতীয় দুই কোটি টাকার মুক্তি পণ।
গণতন্ত্রবিরোধী, বিদেশী-অনুপ্রাণিত, রাষ্ট্রদ্রোহী বামপন্থী সংগঠনগুলি তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য সর্বদা হত্যা, অপহরণ, লুটপাট ইত্যাদি অসাধু পন্থা বরাবরই ব্যবহার করে এসেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ একটি তীব্র দেশপ্রেমিক সংগঠন। অতএব, উভয়ের মধ্যে একটি মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও কেরালায় যখনই বাম দলগুলি ক্ষমতায় থাকে তখনই স্বয়ংসেবকদের শারীরিক, আর্থিক ক্ষতি করে থাকে। এবং এই বামপন্থী দলগুলি খ্রিস্টান ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিরও সম্পূর্ণ সমর্থন বরাবর পেয়ে থাকে।
NLFT নামের এই সন্ত্রাসী দলটি সর্বিদাই খ্রিস্টান মিশনারীদের সাথে একসাথে কাজ করে। এর কাজ হ’ল চা বাগানের ধনী মালিক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপহরণ করা এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ হিসাবে আদায় করা। বামপন্থী প্রশাসন সব জেনেও চুপ করে থাকে।
সন্ত্রাসীরা জানত যে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে কোনও কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এই সন্ত্রাসীরা এই বার সংঘের মাথা নত করে তাদের লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিল।
দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ স্বয়ংসেবক এই ঘটনায় উদ্বেলিত হয়েছিলেন। অপহৃত কার্য্কর্তা দের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা কল্পনা করেই সকলে বেদনাহত হয়ে পড়েছিল। তবুও সঙ্ঘের বরিষ্ট কার্য্কর্তারা বুকে পাথর রেখে সন্ত্রাসীদের সামনে মাথা নত না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিছু মধ্যস্থতাকারী দ্বারা কথোপকথনের চেষ্টাও করা হয়েছিল, তবে কোনও ফলাফল হয়নি। ত্রিপুরা সরকারও এব্যাপারে বিশেষ সহযোগীতা করে নি।
সেই সময় দিল্লিতে NDA এর সরকার ছিল।অটলজী প্রধানমন্ত্রী এবং এলকে আদবানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আদবানী জির নির্দেশে BSF এর একটি বিশেষ কমান্ডো দল ওই চার কার্যকর্তার মুক্তির জন্য অপারেশন করেছিল। ফলে সন্ত্রাসীরা তাদের চট্টগ্রামে (বাংলাদেশ) শিবিরে নিয়ে যায়। ভারত সরকারের অনুরোধে, বাংলাদেশ কিছু লোক দেখানো পদক্ষেপ নিয়েছিল, তবে তার কিছু লাভ পাওয়া যায় নি।
এই ভাবে দু’বছর কেটে গেলেও কোন খবর পাওয়া গেল না। সবাই হতাশ হয়ে গেলেন। এদিকে BBC হিন্দি নিউজ সার্ভিস সেই চারজন কার্যকর্তার হত্যার সংবাদ প্রচার করা শুরু করেছিল। এর পরেও সরকার আরও একবার চেষ্টা করেছিল; তবে এখন আর কিছুই করা সম্ববপর হল না। অবশেষে, ২০০১ সালের ২৮ জুলাই, সরকার সেই চার কার্য্কর্তার হত্যার আধিকারিক ঘোষণা করে। কীভাবে এবং কোথায় তাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাদের মৃতদেহের কী হয়েছিল তা আজও জানা যায়নি।
“পতত্বেষ কায় নমস্তে নমস্তে” গাইতে গাইতে চার স্বয়ংসেবক অমর হয়ে গেলেন, তবে তাদের পরিবার এবং স্বয়ংসেবকরা আজও তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছেন।
তথ্যসূত্র:
ধ্যেয় যাত্রী- শেশাদ্রি জী
আমার দেশ আমার জীবন:- লালকৃষ্ণ আদবানী