১৮৯৮, স্বামীজি কাশ্মীরের জাগ্রত দেবীস্থান ক্ষীরভবানীর মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে দেখলেন মন্দিরের ভগ্নদশা। স্বামীজির মনে তীব্র ক্রোধ আর হতাশা জন্ম নিল, মনে মনে প্রবল বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন মন্দির ধ্বংসকারী মুসলমানদের উপর। “যবনেরা এসে তাঁর মন্দির ধ্বংস করে গেল, তবু এখানকার লোকগুলি কিছুই করল না। আমি যদি তখন থাকতাম, তবে কখনো চুপ করে সে-দৃশ্য দেখতে পারতাম না।”
পরধর্মীদের আগ্রাসনে অন্য ধর্মীয় নেতার মনে যেমন ক্রোধের উদয় হয় তেমনই হল স্বামীজির মনেও। তারপরই শুনলেন সেই দৈববাণী, “আমার ইচ্ছা আমি ভাঙা মন্দিরে বাস করব। ইচ্ছা করলে আমি কি এখনই এখানে সাততলা সোনার মন্দির তুলতে পারি না? তুই কি করতে পারিস?” এরপরই তিনি মহাকালের উপরই ছেড়ে দিলেন সমস্ত দায়ভার, তুরীয় অবস্থায় তাঁর উপর মহাশক্তি যেন ভর করল।
লিখলেন উনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘Kali the Mother’, যার পরতে পরতে মহাকালীর তান্ডব, প্রগাঢ় মানসিক অভিভবে ধ্বংসলীলা। এই কবিতাটি ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক অন্যতম আবশ্যিক পাঠ্য হয়ে দাঁড়ানোর ফলে, তা হয়ে দাঁড়ায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ। আসলে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, যে নবজাগরণের ফলে বাঙ্গালি তথা ভারতবাসী সুপ্তিদশা থেকে জেগে উঠেছিলেন, তা আদতে হিন্দু নবজাগরণ, তার মধ্যে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, বিপিনচন্দ্র, অরবিন্দের মত মহান মনীষার কেউই বাকি ছিলেন না।
সামনে খৃষ্টান ব্রিটিশ বিরোধিতা থাকলেও অন্তরে স্থান পেয়েছিল যাবতীয় বহির্দেশীয় অহিন্দুর বিরোধিতাই। তাই অনবধানেই ‘যবন’ শব্দের ব্যাপ্তি ঘটে। স্বামীজির ‘Kali the Mother’ কবিতাটির মধ্যে ভাষা পেয়েছে তাঁর ভাব শিষ্যদের প্রতি এক শক্তি-সাধনার আহ্বান, যার ধারাপাত ক্ষীরভবানীর মন্দির প্রান্তরকেও লাঞ্ছনা মুক্ত করতে পারে। সে কাজ স্বামীজির একলার নয়; স্বামীজি তখন ক্লান্ত, অসুস্থ। তাই কাব্যের মোড়কে স্পষ্টই বার্তা দিলেন আগামী প্রজন্মগুলির প্রতি। তারই ধারাবাহিকতায় ১২০ বছর বাদে আর এক নরেন্দ্র হাতে সেই দীপাধার পৌঁছলো।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিশেষ ধারা বিলোপ সেই কর্তব্যেরই ধারাবাহিকতা; কেবল কাশ্মীরের দেবী ক্ষীরভবানীর উত্থান ঘটার এই মহেন্দ্রক্ষণ নয়, উত্থান ভারতমাতার উজ্জ্বল উদ্ধারের।