সাংবাদিকের প্রতি কবীর সুমনের অশালীন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবী সমাজের

কর্মরত সাংবাদিককে কবীর সুমনের অশালীন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করলেন বামপন্থী নেতা তথা ইউটিইউসি-র প্রেসিডেন্ট অশোক ঘোষ।
শনিবার অশোকবাবু এই প্রতিবেদককে জানান, “গায়ক সুমন চাটুজ্যে অনেকবার রঙ বদল করেছেন। এই তথ্য অজানা নয়। অনেকটাই “প্রজাপতি মধু খায় ফুলে ফুলে উড়ে যায় “। যেখানে মৌবন সেখান সুমন। অশালীন ও অসৌজন্যে পূর্ণ।‘গদি মিডিয়ার ও পেড মিডিয়ার’ হলুদ সাংবাদিকতার বিরোধীতা আমরা করি। কিন্তু কর্তব্যরত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ কোনো সভ্য নাগরিক করতে পারেন না। সুমন “শুধু ভঙ্গি দিয়ে যেন না ভোলায় চোখ।“ যোগ্যতার থেকেও অনেক বেশি প্রাপ্তিযোগ ঘটলে আত্ম বিচ্যুতি হয়। কার্যত কোনও মূল্য না দিয়েই রাজনৈতিক সুবিধা, সাংসদ হওয়ার কারণে সর্বাধিক সুযোগ সব কিছুই আত্মসাৎ করেছেন। এক ধরণের মেগালোম্যানিয়াক মানসিকতা। এই সময়ের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সুমনের আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। এদের সামাজিক বয়কট করা উচিত। মনে হয় ওর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনও পাবেন না।“

সাংবাদিককে অশালীন ভাষা প্রয়োগ এবং ‘ফের বলব’ বলে কবীর সুমনের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করলেন ‘পদ্মশ্রী‘ চিকিৎসক অরুণোদয় মন্ডল। শনিবার অরুণোদয়বাবু এই প্রতিবেদককে জানান, “কবীর সুমনের বক্তব্য অত্যন্ত অমার্জিত, নিন্দনীয় এমনকি নিন্দারও অযোগ্য। এমন একজন উদ্ধত ও অসংস্কৃতশীল মানুষের কোন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুধু বলবো ছিঃ ছিঃ । এই কি বাংলার সংস্কৃতি?
অশীতিপর গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখার্জীকে শুধুমাত্র ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত হয়নি। এটা নাকি তাকে অসম্মানিত করা হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে তবে তার দায়ভার শুধুমাত্র বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নয় – অনেকের। যে নেত্রীর ধর্না মঞ্চে বসে তিনি গাইছেন বা যেভাবে তিনি মিছিলে হেঁটেছেন – এভাবে একজন প্রথিতযশা শিল্পীর পক্ষে কি মানানসই ? তিনি নিজেই বিতর্কের সূত্রপাত। উচিত ছিল পরিবারের তরফে প্রত্যাখ্যান নিয়ে রাজনীতিকরণ না করা। এতে কি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখার্জির সম্মান বা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো না?
অনেকেই পদ্ম পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভাবখানা এমন যেন ‘ভারতরত্ন’ ছাড়া অন্য কোনও সম্মানের তারা যোগ্য নন। সম্মান – সম্মানই , ছোট-বড় বলে কিছু হয়না। ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’- এর মধ্যে ফারাকটি কিন্তু যৎকিঞ্চৎ । আমরা যারা সামাজিক কাজ করি – তাহলে প্রত্যেকের বিনিময়ে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে বলতে হয়। অনেকেই রাজনৈতিক কারণে এমনকি প্রত্যাখ্যানের মহত্ত্বে ভোগেন। গ্রহণ করা প্রত্যাখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি সম্মানের, গৌরবের। আমিওতো দীর্ঘ ২২ বছর সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি সাহায্য ছাড়াই কাজ করছি। তাহলে আমিও তো বলতে পারি – “পদ্মশ্রী টা আমার কাজের তুলনায় সংগতিপূর্ণ নয়”? প্রতিটি কাজকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সূচক হলো এই সমস্ত সম্মান। এর জন্য মান-অভিমান ক্ষোভ ভুলে আরোও নিবিড় ভাবে সমাজের জন্য কাজ করে যাওয়া প্রত্যেকের উচিত। পদ্ম পুরস্কার প্রদান ও নির্বাচন বিগত দিনের তুলনায় অনেক বেশি স্বচ্ছ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন – দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া।“

সুমনকে তোপ দাগলেন জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন প্রদেশ কার্যকারি সদস্য ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
রঞ্জনবাবু এই প্রতিবেদককে জানান, “একজন সাংবাদিক অত্যন্ত ভদ্র ভাষা ও নম্রতার সঙ্গে আমাদের দেশের মাননীয় একজন প্রাক্তন সাংসদকে ফোন করেন এবং সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রের নাম শুনেই ওই সাংসদ তাঁকে লেখার অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই নিয়ে মন্তব্য করাটা রুচিবোধ-বহির্ভূত। ওই গায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ এর আগেও অসংখ্য বার এমন অশ্লীলতা করেছেন। তাঁর প্রচারের বড়ো হাতিয়ারই হল অশ্লীলতা। জীবনযাপন থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস , রাজনৈতিক অবস্থান থেকে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক, শরীরের ভাষা থেকে গায়কী বাগাড়ম্বর— কোনও কিছুতে তাঁর শালীনতা চোখে পড়ে নি। তবু অদ্ভুত ভাবে প্রচলিত গণমাধ্যম তাঁকে বাঙালি জীবনের পথপ্রদর্শক বানিয়ে রেখেছিল।
প্রথমে ষাট-সত্তরের উগ্র বামপন্থী সংস্কৃতিকে নব্বইয়ের দশকে ব্যবহার করে শহরে বাজার তৈরি করা এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে অথবা বাংলাদেশের বাজার ধরার স্বার্থে ধর্ম পরিবর্তন করা— কোনও কিছুতে গায়ক পরিচয়টির সলিল সমাধি রোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে শুরু হয়েছিল অশ্লীলতা, নিতম্বের বর্ণনা দিয়ে যার পথচলা শুরু। ধন্যবাদ জানাই ওই সাংবাদিক বন্ধুকে যিনি সমাজ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করার সাহস দেখিয়েছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.