কি ছিল সেই দর্শন যা এক সেনাবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতো ? কি ছিল সেই দর্শন যা অনুসরণ করে তরুণ জীবন দেশসেবায় নিয়োজিত হওয়ার পণ নিতো?
নেতাজীর অদম্য সাহসের উৎস কি ছিল?সেই উৎস সন্ধান করে , আমরা কি পারি না সেই দেশভক্তির প্লাবন ডাকতে ?
বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার যুব সম্মিলনী তে নেতাজী যুবকদের মধ্যে দেশভক্তি জাগরণের জন্য বলেন—–
আমাদের আছে সবই , নাই শুধু এক বস্তু–নিঃশেষে আত্ম বলিদান—-বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া , যাবতীয় বিপদ তুচ্ছ জ্ঞান করে একটা আদর্শের পশ্চাতে সারাটি জীবন অনুধাবনের ক্ষমতা। এই ক্ষমতা,এই tenacity of purpose আমাদের নাই, ইংরেজের আছে—তাই ইংরেজ এত বড় , আর আমরা এত হীন , আমরা অন্তরের সঙ্গে দেশকে ভালবাসি না , স্বজাতিকে ভালোবাসি না। তাই আমরা করি গৃহবিবাদ ,আমাদের মধ্যে জন্মায় মীরজাফর উমিচাঁদ। মীরজাফর ও উমিচাঁদ আজও মরে নাই— এখনো তাদের বংশবৃদ্ধি হইতেছে। আমরা যদি দেশকে ভালবাসি তে শিখি তাহা হইলে আত্মবলিদানের ক্ষমতা লাভ করিব , আমাদের চরিত্রে অবিরাম ও অশ্রান্ত পরিশ্রমের ক্ষমতা tenacity of purpose ফিরিয়া আসিবে। এই দুইটি বল— tenacity of purpose বা moral stamina কোথায় পাইব ? বনে জঙ্গলে যুগ-যুগান্তর তপস্যা করলেও পাইব না। পাইব নিষ্কাম কর্মের মধ্যে জীবন ঢালিয়া দিলে—অবিরাম সংগ্রামে লিপ্ত হইলে , ঘরের কোণে বসিয়া উপাসনা করিলে বা সংসার ত্যাগ করিলে,সন্ন্যাস গ্ৰহণ করিলে-সাধনা বা শক্তি সঞ্চয় হয় না।
শক্তি পূজা কথার কথা না
যদি কথার কথা হত তবে চিরদিন ভারত
শক্তি পূজা শক্তিহীন কভু হত না।
সাধনার স্বরূপ তাই স্বামী বিবেকানন্দ ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন এইভাবে:
“পূজা তার সংগ্রাম অপার
সদা পরাজয়,
তাহা না ডরাক তোমা,
হৃদয় শ্মশান , নাচুক তাহাতে শ্যামা।”
সুভাষচন্দ্র বসু , গীতার ‘নিষ্কাম কর্মের’ আদর্শ কে সামনে রেখেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্ৰাম , দেশের কাজে অক্লান্ত পরিশ্রমের শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো পথেই , পরাধীন ভারতবর্ষে যুবকদের গীতার ‘কর্মযোগ’ এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
“কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কন্ঠে অমর যৌবনের বাণী উচ্চারিত হইয়াছিল যখন তিনি অর্জুনকে ক্লীবতা পরিহারের আহ্বান জানাইয়াছিলেন। ভারতের বর্তমান অবস্থায় সকলকে বার বার বুঝাইতে হইবে যে একটি আদর্শের জন্য আমাদের উন্মাদ হওয়া চাই। সাময়িক উন্মত্ততা যদি একজন কে পাইয়া না বসে তাহা হইলে কোন মানুষের পক্ষেই মহান হওয়া সম্ভব নয়।
যখন আদর্শ সত্য হইয়া উঠে , বাস্তব মায়া মরীচিকা মনে হইতে থাকে ; তখনই একমাত্র স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা রূপায়িত হইতে পারে।”
—– নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (জুলাই ১৯২৮)
পরাক্রম দিবস এর শুভেচ্ছা জানাই
“যখন পিপাসা জাগিয়া উঠে তখন একটি জাতির কর্মের সর্বক্ষেত্রে তার প্রকাশ ঘটে। এই কর্ম এবং তাহার আনুষঙ্গিক সিদ্ধি প্রাচীন ভারতে বিদ্যমান ছিল। বুদ্ধ মানুষের অন্তরে মুক্তির পিপাসা জাগাইয়া তুলিয়াছিলেন। তাঁহার নির্বাণ এবং এই ধারণার ফলগুলি সংস্কৃতিতে সামগ্রিক এবং সুষম বিকাশ ঘটাইয়াছিল। এই বিকাশ ছিল আমাদের সভ্যতায় লক্ষণীয় ও গৌরবময়। তাহার পূর্বে প্রাচীন ভারতে আমরা সংস্কৃতির এক বিস্ময়কর সামগ্রিক বিকাশ দেখিতে পাইয়াছি। তাহা ঘটিয়াছিল বৈদিক ও ঔপনিষদিক যুগে। বেদে এবং উপনিষদে শুধু সাংস্কৃতিক বিকাশ এর চিহ্নই ছড়াইয়া নাই , তাহাতে উচ্চস্তরের প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চর্চাও যে হইয়াছিল , তাহার প্রমাণ আছে।”
— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (তরুণের আহ্বান)
পিন্টু সান্যাল